বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কুরআনের পয়গাম : অন্যায়ের পক্ষাবলম্বন নয়-২

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

গত আলোচনায় আলোচিত সূরা নিসা’র ১০৭ নং আয়াতের আরেক অমূল্য শিক্ষা হলো, মামলা-মোকদ্দমায় যার সম্পর্কেই জানা যাবে, সে ন্যায়ের উপরে নেই, মুমিন কীভাবে তার পক্ষে অবস্থান নেবে বা তার উকিল হবে? অন্যায়ের পক্ষে তো নয়ই; বাদী-বিবাদী দুয়ের, কারো ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত না হবে, সে হক ও সততার মধ্যে আছে, তার পক্ষে সাক্ষ্য তো দূরের কথা; মুমিন কোনোভাবেই তার পক্ষাবলম্বন বা সহায়তা করতে পারে না। তাই ইমাম কুরতুবী (রাহ.) বলেনÑ এতে প্রমাণিত হয়, অপরাধী ও অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব বৈধ নয় (যতক্ষণ না নিশ্চিত হওয়া যায়, সে হকের ওপর আছে।) সুতরাং কারো ন্যায়নিষ্ঠতা প্রমাণিত হওয়া ব্যতীত তার পক্ষে ওকালতি করা জায়েয নয়। (তাফসীরে কুরতুবী ৫/৩৭৭)।

সূরা নিসার ১০৭ নম্বর আয়াত থেকে আরেকটি শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারি। কোনো ব্যক্তি বা দলের অন্যায় প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার পর তার পক্ষাবলম্বন বা লেখালেখি ও বক্তৃতা প্রদান মুমিনের কাজ নয়। ইমাম কুরতুবী (রাহ.) বিজ্ঞ ওলামায়ে-কেরামের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন : কোনো গোত্রের অন্যায় স্পষ্ট হওয়ার পরও তাদের বাঁচানোর জন্য অপর পক্ষের সাথে তর্কে জড়ানো, ওকালতি করা ও পক্ষপাতিত্ব করা জায়েয নেই। (তাফসীরে কুরতুবী ৫/৩৭৮)।

মোটকথা কুরআনের পয়গাম আমাদের প্রতি সর্বদা ন্যায় ও সততাকে সঙ্গ দেয়া। মিথ্যা ও অন্যায়ের পক্ষপাতিত্ব থেকে বিরত থাকা। অন্য আয়াতে আরো স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে : হে মুমিনগণ! তোমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী হয়ে যাও আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতারূপে, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে কিংবা পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। (সূরা নিসা : ১৩৫)। অতএব ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবন, সবক্ষেত্রে আমাদের সঠিকটাই গ্রহণ করতে হবে। অবিচল থাকতে হবে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। তা আপনজন এমনকি নিজের বিরুদ্ধেই হোক ।

অন্যায়ের পক্ষপাতিত্ব যেমন হতে পারে জাগতিক বিষয়ে, তেমনি হতে পারে দ্বীনি বিষয়েও। যেমন হতে পারে ব্যক্তির ক্ষেত্রে, হতে পারে নির্দিষ্ট গোত্র বা দলের ক্ষেত্রেও। কখনো কোনোভাবেই অন্যায়ের পক্ষে যাওয়া মুমিনের জন্য সমীচীন নয়। আর কিই বা লাভ, অন্যায়ের পক্ষে গিয়ে? আজ হয়তো মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্যায়ের পক্ষে গেলাম বা জোর-জবরদস্তি করে সমাজে অন্যায়টিই প্রতিষ্ঠিত করা হল, কিন্তু হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে কী করব? তখনও কি পারব অন্যায়ের পক্ষে লড়তে? তখনও কি পারব অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে?

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, তোমাদের ক্ষমতা তো এতটুকুই যে, পার্থিব জীবনে তাদের (অর্থাৎ অন্যায় ও খেয়ানতকারীদের) অনুকূলে (মানুষের সাথে) বাক-বিতন্ডা করলে। কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে কে তাদের অনুকূলে বাক-বিতন্ডা করবে বা কে তাদের উকিল হবে? (সূরা নিসা : ১০৯)।

কাজেই অন্যায় ও অপরাধের সহায়তা থেকে দূরে থাকা আয়াতের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। দ্বীনি বিষয়েও সতর্ক থাকা জরুরি। কেউ কোনো ভুল মাসআলা বা ভ্রান্ত চিন্তা পেশ করলে তাকে সঙ্গ দেয়া যাবে না। কারণ ভুল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে আর সঙ্গ দেয়া মুমিনের কাজ নয়। জাগতিক ক্ষেত্রেও কোনো ব্যক্তি বা দলের ভুল সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষণ করব না। কারণ আমি মুমিন। এটি মুমিনের সঙ্গে যায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন