দোয়া দুই প্রকার। যথা- (ক) প্রার্থনা বা কিছু পেতে দোয়া করা, (খ) ইবাদতের মাধ্যমে দোয়া করা। চাওয়া বা প্রার্থনার দোয়া হল-মহান আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ চাওয়া। এতে চাওয়া আছে যাচনা আছে। পক্ষান্তরে ইবাদতের দোয়ার মধ্যে চাওয়া নেই। শুধু নৈকট্য লাভের জন্য যা যা করা হয়, তাই এ প্রকারের ইবাদত। নৈকট্য লাভের সকল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কাজ এর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
কেননা, যে আল্লাহর ইবাদত করে, সে স্বীয় কথা ও অন্তরের ভাষায় তার প্রতিপালকের কাছে উক্ত ইবাদত কবুল করার ও এর ওপর সওয়াব দেয়ার আবেদন করে থাকে। পবিত্র কোরআনুলকারীমে দোয়ার যত নির্দেশ এসেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দোয়া করা থেকে যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং দোয়াকারীদের যত প্রশংসা করা হয়েছে, সে সবই প্রার্থনার দোয়া ও ইবাদতের দোয়াকে শামিল করে থাকে। যেমন মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, সুতরাং আল্লাহকে ডাক তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। (সূরা গাফির : ১৪)।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেছেন, আর মসজিদ সমূহ আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেকোনা। (সূরা আল জ্বিন : ১৮)। প্রকৃতপক্ষে উম্মতে মোহাম্মাদীর বিশেষ সম্মানের কারণে উল্লিখিত আয়াতে তাদেরকে দোয়া করার আদেশ করা হয়েছে এবং তা কবুল করারও ওয়াদা করা হয়েছে। আর যারা দোয়া করেনা, তাদের জন্য শাস্তি বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।
আলোচ্য আয়াতে দোয়া অর্থ যদি ইবাদতের দোয়া বোঝানো হয়, তাহলে দোয়া বর্জনকারী অবশ্যই গোনাহগার এমন কি কাফের সাব্যস্ত হবে। আর সে হিসেবেই ইবাদত বর্জনকারীকে জাহান্নামের শাস্তিবাণী শোনানো হয়েছে। আর যদি দোয়া বলতে চাওয়া বা যাচনা করা উদ্দেশ্য হয়, তখন দোয়া না করলে জাহান্নামের শাস্তিবাণী ওই সময়ই শুধু প্রযোজ্য হবে, যখন সে অহংকার বশত তা বর্জন করে।
কেননা, অহংকার বশত দোয়া বর্জন করা কুফরের আলামত। তাই সে জাহান্নামের যোগ্য হয়ে যাবে। নতুবা সাধারণ দোয়া কোনো ফরজ বা ওয়াজিব নয় যে, দোয়া না করলে গোনাহ হবে। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে দোয়া অপেক্ষা অধিক সম্মানিত কোনো বিষয় নেই। (জামে তিরমিজী : ৩৩৭০)। অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন প্রার্থনা করে না, আল্লাহপাক তার প্রতি অসন্তুষ্ট ও রুষ্ট হন। (জামে তিরমিজী : ৩৩৭৩)।
উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় এই ওয়াদা রয়েছে যে, বান্দা আল্লাহ পাকের কাছে যে দোয়া করে তা’ কবুল হয়। কিন্তু মানুষ মাঝে মাঝে দোয়া কবুল না হওয়াও প্রত্যক্ষ করে। এর মর্মোদঘাটন করে বলা হয়েছে যে, দোয়া কবুল হওয়ার উপায় তিনটি। তন্মধ্যে কোনো না কোনো উপায়ে দোয়া কবুল হয়। যথা : (এক) যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া, (দুই) প্রার্থিত বিষয়ের পরিবর্তে আখেরাতের কোনো সওয়াব ও পুরস্কার প্রদান করা এবং (তিন) প্রার্থিত বিষয় না পাওয়া। কিন্তু কোনো সম্ভাব্য আপদ-বিপদ সরে যাওয়া। সুতরাং এর যে কোনো একটি হলেই দোয়া কবুল হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
তবে, সহীহ হাদীস সমূহে কোনো কোনো বিষয়কে দোয়া কবুলের পথে বাধা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা খুবই জরুরি। যেমন : (এক) হারাম খাবার ও হারাম বস্ত্র পরিধান করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো কোনো লোক খুব সফর করে এবং আকাশের দিকে হাত তুলে ইয়া রব, ইয়া রব বলে দোয়া করে। কিন্তু তাদের পানাহারও পোশাক পরিচ্ছেদ হারাম পন্থায় অর্জিত। এমতাবস্থায় তাদের দোয়া কিরূপে কবুল হবে? (সহীহ মুসলিম : ১০১৫)।
(দুই) হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, অসাবধান, বেপরোয়া ও অন্য মনস্কভাবে দোয়ার বাক্যাবলী উচ্চারণ করলে, তাও কবুল হয় না। (জামে তিরমিজী : ৩৪৭৯)। (তিন) অন্যায় কোনো দোয়া যেন না হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিম আল্লাহর কাছে যে দোয়াই করে, আল্লাহপাক তা দান করেন। যদি তা কোনো গোনাহ অথবা সম্পর্কচ্ছেদের দোয়া না হয়। (সহীহ মুসলিম : ২৭৩৫)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন