নামাজ শুধু একটি ফরজ বিধানই নয়, ঈমানের নিদর্শন এবং ইসলামের শেয়ার। এজন্যে প্রয়োজন ছিল তা প্রকাশ্যে সম্মিলিতভাবে আদায়ের ব্যবস্থা। জামাতের নামাজ বিধিবদ্ধ হওয়ার অন্যতম তাৎপর্য। আর এর জন্য জায়গা নির্বাচিত হয় মসজিদ। প্রত্যেক সুস্থ-সবল-বালেগ পুরুষের কর্তব্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা।
জামাতের ফজিলত ও উপকারিতা অনেক। এতে দৈনিক অন্তত পাঁচবার নিজের ঈমান-আমলের হিসাব নেয়ার সুযোগ হয়। নিয়মিত নামাজ পড়ার সৌভাগ্য হয় এবং পারস্পরিক ঐক্য-সম্প্রীতি রক্ষার প্রেরণা জাগে ইত্যাদি। হাদীসে এসেছে, একা নামাজের চেয়ে জামাতের নামাজের মর্যাদা সাতাশ গুণ বেশি। (সহীহ বুখারী : ৬৪৫)। অন্য এক হাদীসে এসেছে, যে সবচেয়ে দূর থেকে (মসজিদে) আসে তার নামাজের সওয়াব সবচেয়ে বেশি। তারপর যে তার চেয়ে কম দূর থেকে আসে। আর যে ইমামের সাথে নামাজ আদায়ের জন্য অপেক্ষা করে, সে ওই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি সওয়াব লাভ করবে যে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যায়। (সহীহ বুখারী : ৬৪৫)।
এ থেকে বোঝা যায়, মসজিদ দূরে হলেও সেখানে গিয়েই নামাজ আদায় করতে হবে এবং দূরত্ব অনুযায়ী সওয়াবের পরিমাণও বেশি হবে।
পক্ষান্তরে জামাতের ব্যাপারে কোনোরূপ অবহেলা অতি নিন্দনীয়। হাদীসে এ বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার জান! আমার ইচ্ছে হয়, আমি লাকড়ি জমা করার নির্দেশ দেই। তারপর আজানের হুকুম করি। এরপর কাউকে ইমামতির আদেশ দেই। আর আমি ওই সব লোকের কাছে যাই, যারা নামাজে আসে না। অতঃপর তাদেরসহ তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেই। (সহীহ বুখারী : ৬৪৪)।
এ থেকে যে কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন যে, জামাতের ব্যাপারে অবহেলা করা কত ভয়াবহ! নবীযুগে এটাকে মুনাফিকের আলামত মনে করা হত। কারণ মুনাফিক বা অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ জামাতের নামাজ পরিত্যাগ করত না। বরং কোনো কোনো অসুস্থ ব্যক্তিও অন্যের কাঁধে ভর করে জামাতে অংশগ্রহণ করত। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম : ৬৫৪)।
মসজিদ শুধু নামাজ আদায় নয়, কোরআন-হাদীস, মাসআলা-মাসাইল ও ইসলমি শিক্ষা নির্দেশনা শেখা এবং শেখানোর জায়গা। নবীযুগ থেকে সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন ও পরবর্তী অনেক সময় পর্যন্ত এ কাজগুলো প্রধানত মসজিদেই সম্পন্ন হত। পরবর্তীতে এসবের জন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হলেও মসজিদে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি এবং তা সমীচীনও নয়। কারণ মসজিদে উপস্থিতি এক স্বতন্ত্র আমল (দৈনিক অন্তত পাঁচবার)। তাই এর আগে বা পরে কিছু তালীম হওয়া শুধু সহজই নয়, বরকতময়ও বটে।
হাদীসে এসেছে, যখন কিছু লোক আল্লাহর কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে তাঁর কিতাব তিলাওয়াত করে, এর ইলম অর্জন করে এবং তা পরস্পর আলোচনা করে তখন তাদের উপর ‘সাকীনা’ নাজিল হয়, রহমত তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে ফেলে এবং আল্লাহ তাঁর কাছে যারা থাকেন তাদের সাথে তাদের আলোচনা করেন। (সহীহ মুসলিম : ২৬৯৯)।
সুতরাং সকলের কর্তব্য মসজিদে তালীমের ব্যবস্থা করা এবং তাতে নিয়মিত উপস্থিতির চেষ্টা করা। আর এই তালীমে ব্যাপকতা কাম্যÑ তালীমে দ্বীন, তালীমে কোরআন, দরসে কোরআন, তালীমে সুন্নাহ, তালীমে হাদীস, তালীমে ফাজাইল, তালীমে মাসাইল ইত্যাদি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন