রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

রোনালদো জাদুতে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : নিজের চতুর্থ ব্যালন ডি’অর জিতে এসেছিলেন ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে। ব্যক্তিগত পুরস্কারটা উদযাপন করতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সম্ভবত একটা ট্রফিরও দরকার ছিল। সেটি পেয়েও গেলেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। আসলে বলা উচিত অর্জন করে নিলেন। দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করেছেন, তাতে জাপানের কাশিমা অ্যান্টলার্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফিও জিতে নিল রিয়াল। রোনালদোর সঙ্গে পূর্ণতা পেল জিদানের ‘আন্তর্জাতিক অভিযান’। দায়িত্ব নেয়ার পর রিয়ালের হয়ে আন্তর্জাতিক তিনটি শিরোপায় অংশ নিয়েছিলেন- চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও এই ক্লাব বিশ্বকাপ। জিতলেন তিনটি ট্রফিই। হ্যাটট্রিক হলো জিজুরও।
কাগজে কলমের হিসাব কেন, দু’দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। অনেকে তো এও বলছিলেন, কাশিমা ১৫০ ভাগ চেষ্টা করলে হয়তো রিয়ালের সঙ্গে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। অবশ্য বিশ্ব ফুটবলে অনেক পিছিয়ে থাকা এশিয়া মহাদেশের কোনো ক্লাব প্রথমবারের মতো উঠেছে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে, তাদের নিয়ে উচ্চাশা থাকার কথাও নয়। তবে মাঠের লড়াই অনেক কিছুকেই হার মানায়। যেমনটি হয়েছে এই ম্যাচে। ম্যাচজুড়ে স্প্যানিশ জায়ান্টদের সঙ্গে লড়ে গেছে সমানতালে। উৎসাহ জোগাতে ঘরের মাঠের প্রায় ৬০-৬৫ হাজার সমর্থকেরা তো ছিলেনই। ৪-২ স্কোর লাইন বোঝাতে পারছে, স্বপ্নলোকের দুয়ার খোলার কত কাছে চলে গিয়েছিল পুঁচকে ক্লাবটি!
বলের সিংহভাগ দখল রেখে আক্রমণ চালিয়ে ম্যাচের নবম মিনিটেই এগিয়ে যায় রিয়াল। ডি-বক্সের মাথা থেকে লুকা মদ্রিচের ভলি গোলরক্ষক হিতোশি সোগাহাতা ঠেকালেও বল এসে পড়ে ঠিক করিম বেনজেমার পায়ে। এত সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেননি ফরাসি স্ট্রাইকার; বলটা ঠেলে দেন জালে। দুই মিনিট পর সুযোগ তৈরি করেছিল স্বাগতিকরাও। কাশিমা অধিনায়ক মিতসুও ওগাসায়ারার দূরপাল্লার শট ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে যায়। এরপর কেবল রিয়ালের আক্রমণ আর কাশিমার ঠেকিয়ে যাওয়া। তবে প্রথমার্ধের শেষ দিকে ধারার বিপরীতেই সমতা ফেরায় জে লিগ চ্যাম্পিয়নরা। বাঁ দিক থেকে আসা ক্রসে বল পা দিয়ে নামিয়ে ভলিতে দূরের পোস্ট দিয়ে নাভাসকে ফাঁকি দেন গাকু শিবাসাকি।
প্রথম গোলটি যদি দর্শনীয় হয় তবে ৫২তম মিনিটে ১০ নম্বর জার্সি পরা শিবাসাকির দ্বিতীয় গোলটি তো অসাধারণ। রামোস বল ঠিকমতো বিপদমুক্ত করতে না পারায় বল পেয়ে সামনে থাকা তিনজনকে ফাঁকি দিয়ে দুর্দান্ত শটে বল জালে পাঠান এই ফরোয়ার্ড। গর্জে উঠে ইয়োকোহামা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ৬৮ হাজার ৭৪২ জন দর্শকের সিংহভাগ। পিছিয়ে পড়ে চমকে যাওয়া রিয়ালের সমতায় ফিরতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। ৬০তম মিনিটে স্নায়ুর চাপ সামলে নিখুঁত স্পটকিক নেন রোনালদো। ডি-বক্সে ভাসকেসকে ফেলে দেয়া হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। পরের মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো রিয়াল। বল নিয়ে সামনে এগিয়ে ফাঁকায় থাকা বেনজেমাকে বল না দিয়ে শট নেন রোনালদো; গোলরক্ষক ঠেকান কর্ণারের বিনিময়ে। ৬৫তম মিনিটে বেনজেমার নীচু ক্রসে মার্সেলোর নীচু শট ঠেকিয়ে আবারও ত্রাতা গোলরক্ষক সোগাহাতা। সাত মিনিট পর বেনজেমার জোরালো শটও ঠেকান তিনি। ৮০তম মিনিটে রোনালদোর হেড লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে তার জোরালো শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।
নির্ধারিত সময়ের শেষ পাঁচ মিনিট অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়ে একের পর এক আক্রমণ করে কাশিমা। ৮৮তম মিনিটে ফাব্রিসিয়োর জোরাল শট লাফিয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠান নাভাস। পরের মিনিটেও দলের ত্রাতা কোস্টা রিকার এই গোলরক্ষক। যোগ করা সময়ের শেষ সুযোগটা কাশিমারই। কাছ থেকে ইয়াসুশি এনদোর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের আর ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৯৮তম মিনিটে ডি-বক্সে বেনজেমার বাড়ানো বল প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের নীচু শটে গোলরক্ষককে ফাঁকি দেন রোনালদো। এরপর কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে গিয়ে লাফিয়ে দুই হাত দুই পাশে দিয়ে চিরচেনা সেই উদযাপন চার বারের বর্ষসেরা এই ফুটবলারের। তিন মিনিট পর রিয়ালের ত্রাতা ক্রসবার। খুব কাছ থেকে সুজুকির হেড নাভাসকে ফাঁকি দিলেও তাই জাল খুঁজে পায়নি। ১০৪তম মিনিটে আসে রোনালদোর হ্যাটট্রিক। ২০ গজ দূর থেকে টনি ক্রুস ঠিকমতো শট নিতে পারেননি। রোনালদো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়েই দুর্দান্ত শটে জয় নিশ্চিত করে দেন।
ষ ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা সবচেয়ে বেশিবার জিতেছে বার্সেলোনা, ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৫ সালে। গত তিন বছরে দ্বিতীয় শিরোপা জিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ব্যবধান কমালো এর আগে ২০১৪ সালে জেতা রিয়াল মাদ্রিদ।
ষ আসরের ফাইনালে এই প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন কোনো খেলোয়াড়। পেলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও।
ষ রোনালদোর অবশ্য তিনবার ট্রফিতে চুমু খাওয়া হয়ে গেল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটের হয়ে ২০০৮ সালেও একবার শিরোপা জিতেছিলেন পর্তুগালের এই তারকা।
ষ লস ব্ল্যাঙ্কোদের দায়িত্ব নেওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপের পর ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপাও জেতা হয়ে গেল জিদানের। তিনটিতেই ম্যাচ গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন