নানা জল্পনা কল্পনার পর এবার ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে বয়স সীমা স্পষ্ট করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বয়সের ব্যাপারটি অনানুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি অন্য নেতাদের জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বয়সের ব্যাপারে তার আলোচনা হয়েছে। এবারও এই বয়সসীমা হবে ২৯ বছর। এটা বাড়ানো হবে না। অন্যদিকে, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তিনিও বয়সসীমা ও ছাত্রত্বের ব্যাপারে খোঁজ নেন। এসময় তিনি গত সম্মেলনে ২৯ হওয়া বয়সসীমার প্রতি সমর্থন জানান।
জানা যায়, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বয়সসীমা রয়েছে অনুর্ধ্ব ২৭ বছর। কিন্তু নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় গত তিন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বিবেচনায় ছাত্রলীগের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে অনুর্ধ্ব ২৯ বছর করা হয়। নানা ইকুয়েশন মিলিয়ে এবারও আঁচ করা যাচ্ছে অনুর্ধ্ব ২৯ বছরই হবে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের মাপকাঠি।
বয়সসীমার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় এবার ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের দৌঁড়ে ছিটকে পড়েন অনেক ত্যাগী নেতা। অন্যদিকে এগিয়ে যায় ডজনখানেক জুনিয়র নেতা। যাদেরও রয়েছে সংগঠনের জন্য অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা।
এমন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন। তিনি এর আগে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং তার আগে একই হলের কর্মসূচী ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বরিশাল অঞ্চল থেকে রয়েছেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, উপ-গণশিক্ষা বিয়ষক উপ সম্পাদক সোলাইমান ইসলাম মুন্না ও ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার।
সবুর খান কলিন্স সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ও ফজলুল হক মুসলিম হলের নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। করোনা মহামারীর সময় মানবিক কাজ করে প্রশংসা কুড়ান কলিন্স। আর সোলাইমান ইসলাম মুন্না ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাধারণ সম্পাদক, জহুরুল হক হলের দপ্তর সম্পাদক এবং তার আগে বরিশাল মহানগরের ১০ নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিবারিকভাবেই তারা উভয়ই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে মুন্নার বাবা মো. নুরুল ইসলাম বরিশাল সদরের চরকাউয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। ইমরান জমাদ্দার তার দায়িত্বের পুরো সময়টা কাটান মানবিক কাজে। ছাত্রলীগের এই কমিটির যা অর্জন তার একটি বড় কৃতিত্ব তার। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা বাবা কাঠালিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। দাদা আলহাজ্ব আবদুল জব্বার মাস্টার ছিলেন আমুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে তিনি ঐ অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সেজন্য পাকিস্তানি বাহিনী তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল বলে জানা যায়।
মাদারীপুর অঞ্চল থেকে রয়েছেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জামি উস সানি ও ঢাবির হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের সভাপতি শহিদুল হক শিশির। জামি উস সানি এর আগে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। যদিও আবরার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, শিশির হল সংসদের সাবেক ভিপি এবং হলের সাবেক ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। উভয়ের পরিবারই পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
খুলনা অঞ্চলের মধ্যে রয়েছেন- কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন। যিনি সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতা মো. মারুফ হোসেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেড়াঁগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া, একই অঞ্চলের রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক খন্দকার আহসান হাবিব।
ময়মনসিংহ থেকে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপ সম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয়। তিনি সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একই অঞ্চলের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক রাকিব সিরাজীও শীর্ষ পদের আলোচনায় রয়েছেন। তার পিতা মরহুম ডা. সিরাজুল ইসলাম দুলাল নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়ন আওয়ামী কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি এবং কলমাকান্দা উপজেলা কৃষক লীগের আমৃত্যু সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছেন।
এর বাইরে নারী নেতৃত্বের মাঝে রয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তিলত্তমা শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক রনক জাহান রাইন। পারিবারিকভাবেও তারা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন