বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মুমিনের নিদ্রা যাপন-১

মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার হুসাইন | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঘুম আল্লাহতায়ালার অনেক বড় নেয়ামত। বান্দার প্রতি আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ অনুগ্রহ ও দান। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে এই পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা ঘুমকে অন্যতম প্রধান মাধ্যম বানিয়েছেন।

আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন : আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ। (সূরা নাবা : ৯-১০)। অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে : তিনিই তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে। (সূরা ফুরকান : ৪৭)।

দিনভর ক্লান্তিকর চলাফেরার পর মানুষ যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে; কর্মক্ষম মানুষ অক্ষম হয়ে পড়ে, শক্তিমান মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, সে সময় এ নেয়ামতই হয়ে ওঠে তার একমাত্র অবলম্বন, যার মাধ্যমে সে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। ফিরে পায় পরবর্তী দিবসের জন্যে নতুন প্রাণশক্তি ও নবতর উদ্যম।
কোনো ব্যক্তি যত প্রখর মেধারই অধিকারী হোক, যত শক্তিশালীই হোক শুধু দু’একটি রাত বিনিদ্র কাটলে বা নিয়মতান্ত্রিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মেধাশক্তি অকেজো হয়ে যায়। আচার-আচরণে, চলাফেরায় এবং কথাবার্তা ও কাজকর্মে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। বস্তুত এ নিআমতের কদর সেই সর্বাধিক বুঝতে পেরেছে, যার রাত কাটে নিদ্রাহীন; বিভিন্ন ব্যবস্থাপত্র গ্রহণের পরও আরামের বিছানায় এপাশওপাশ করে যার রাত ভোর হয়।

আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, আল্লাহতায়ালার কী মহান নেয়ামত নিয়মিত ভোগ করে যাচ্ছি? অবিরত তাঁর কত বড় অনুগ্রহ লাভ করে যাচ্ছি! কুরআন মাজীদে ঘুমকে বান্দার প্রতি আল্লাহতায়ালার রহমতের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন : তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে (রাতে) বিশ্রাম গ্রহণ কর ও (দিনে) তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ক্বাসাস : ৭৩)।

সূরা রূমে আল্লাহতায়ালা রাতের ঘুমকে তাঁর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন : আর তাঁর নিদর্শনাবলীর একটি হল রাতে ও দিনের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয় এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রূম : ২৩)।
কি সেই নিদর্শন? কি সেই শিক্ষা? বস্তুত চিন্তাশীল ব্যক্তি সহজেই তা উপলব্ধি করতে পারে। খুঁজে পায় আল্লাহতায়ালার কুদরতের এক অবাক নিদর্শন। কীভাবে তিনি মুখরিত ও কোলাহলময় বিশাল এক অশান্ত পৃথিবীকে সময়ের সামান্য পরিবর্তনে নিস্তব্ধ-নীরব করে দেন। প্রাণবন্ত মানুষকে নিষ্প্রাণ ও নির্জীবের মতো করে দেন। হাদীস শরীফে ঘুমকে মৃত্যুতুল্য গণ্য করা হয়েছে। ঘুমের বড় শিক্ষা হল, ঘুম আমাদেরকে প্রতিদিন মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় আমরা একদিন মৃত্যুবরণ করব এবং মাওলায়ে পাকের সম্মুখে উপস্থিত হব। হিসাব-নিকাশের সম্মুখীন হব।

আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহতায়ালার দেয়া এ নেয়ামতকে যথাযথ উপলব্ধি করা। বস্তুবাদীদের মতো এটাকে গতানুগতিক জীবনধারা বা নিয়ম না ভাবা; বরং ঘুম মুমিনের জীবনের একটি আমল। গুরুত্বপূর্ণ আমল। জীবনের প্রতিটি ক্ষণই মুমিনের আমলের অংশ। মুুমিনের সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত, উৎসর্গিত। তার জাগ্রত থাকাও আল্লাহর জন্য, আবার ঘুমও তাঁর জন্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ANWAR HOSSAIN ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৮ পিএম says : 0
মুুমিনের সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত, উৎসর্গিত। তার জাগ্রত থাকাও আল্লাহর জন্য, আবার ঘুমও আল্লাহর জন্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন