হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) একবার আবু মূসা আশআরী (রা.) কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আবদুল্লাহ! আপনি কীভাবে কোরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন, আমি (দিবা-রাত্রি) কিছুক্ষণ পরপর কিছু অংশ করে তিলাওয়াত করতে থাকি। তিনি বললেন, আর আপনি কীভাবে তিলাওয়াত করেন হে মুয়ায? উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাতের প্রথমাংশে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তওফীক দান করেন তিলাওয়াত করতে থাকি। এতে আমি আমার নিদ্রার অংশকেও সাওয়াবের বিষয় বলে মনে করি, যেমন আমার দাঁড়িয়ে তিলাওয়াতকেও সওয়াবের বিষয় বলে মনে করি। ঘুমের সুনান ও আদাব এবং নিয়তের প্রতি লক্ষ রাখা হলে ঘুমের প্রতিটি মুহূর্তই বান্দার আমলনামায় সওয়াব হিসাবে জমা হতে থাকে।
সুন্নাহর শিক্ষা হলো এশার নামাজের পর অহেতুক গল্প-গুজব ও আলাপচারিতায় লিপ্ত না হয়ে দ্রুত শুয়ে পড়া। যেন ফজরের নামাজ যথাসময়ে জামাতের সাথে আদায় করা যায়। আরো একটু আগে ওঠা সম্ভব হলে দু-চার রাকাত তাহাজ্জুদও যেন পড়া যায়।
হযরত আবু বারযা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং ইশার পর অহেতুক আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া অপছন্দ করতেন। (সহীহ বুখারি : ৫৪১)। সুনানে ইবনে মাজাহয় আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইশার পূর্বে ঘুমাতেন না এবং ইশার পর আলাপচারিতায় লিপ্ত হতেন না। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৭০২)।
আলেমগণ বলেন, এশার পর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কিংবা দ্বীনী বা দুনিয়াবী কোনো কল্যাণকর বিষয় ছাড়া অযথা আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া মাকরূহ। এটি এতটাই অপছন্দনীয় কাজ যে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) যারা রাতের প্রথম ভাগে অযথা গল্প-গুজবে লিপ্ত হত তাদেরকে প্রহার করতেন এবং বলতেন, রাতের প্রথমাংশে গল্প-গুজব আর রাতের শেষে ঘুমে কাটানো! (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৬৬৮১)।
এর কারণ সুস্পষ্ট। কেননা অযথা আলাপচারিতা ও গল্প-গুজবে লিপ্ত হওয়ার ফলে যখন রাতের উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট করে দেয়া হল তাহলে এটি খুবই স্বাভাবিক যে, শেষ রাতে ওঠা এ ব্যক্তির পক্ষে কষ্টকর হবে; বরং প্রবল আশঙ্কা রয়েছে ফজরের নামাজই কাযা হয়ে যাওয়ার।
এ ছাড়াও রাত্রি জাগরণের কারণে দিনের বেলা অলসতা ভর করে। ফলে পূর্ণ উদ্যমের সাথে দ্বীনী-দুনিয়াবী দায়-দায়িত্ব পালন ও কাজ-কর্ম যথাযথভাবে পালন করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রাত মুমিনের জীবনে অতি মূল্যবান। শেষ রাতের কান্নাকাটি, তাওবা ইস্তিগফার, জিকির আজকার দু-চার রাকাত নামাজ আল্লাহ তা’আলার কাছে খুবই প্রিয়।
সহীহ বুখারিতে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রতি রাতে শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (সহীহ বুখারি : ১১৪৫)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যারা প্রিয় বান্দা তারা এ ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে না। আর তা সম্ভবই বা কী করে? প্রিয় মাওলা যে ডাকছেন! আহা একদিকে আসমান থেকে মহান রবের ডাক আর অন্য দিকে বান্দার পক্ষ থেকে তার সাড়া! কী চমৎকার এক মুহূর্ত! এ নিয়ামতের নূর ও বরকত এবং মাধুর্য থেকে কি ওই শ্রেণীরা বঞ্চিত নয়, যারা রাতের প্রথম অংশ গল্প-গুজবে আর শেষ অংশ নিদ্রাতুর হয়ে কাটায়?
আল্লাহ তা’আলার নিকট যুবক বয়সের ইবাদত বন্দেগী অনেক প্রিয়। যে সাত শ্রেণীর লোকদেরকে আল্লাহর ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হল ওই যুবক যে তার যৌবন কালকে আল্লাহ তা’আলার ইবাদত-বন্দেগীতে কাটিয়েছে। গুনাহের প্রবল স্রোতে যে গা ভাসিয়ে দেয়নি। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, আজকের অনেক তরুণ-যুবক সময়ের যথাযথ কদর করছে না।
বিশেষত তারা রাতকে অবাধ মনে করে। ইন্টারনেটের বিষাক্ত ছোবল তাদের ঈমান-আমল এবং আখলাক সবকিছুই কেড়ে নিচ্ছে। ডিভাইসের স্পর্শে রাতের পর রাত তারা নষ্ট করে দিচ্ছে। রাতকে দিন বানাচ্ছে আর দিনকে রাত। আল্লাহ তা’আলার নেযামকে তারা পরিবর্তন করে দিচ্ছে। জীবনের এই বক্র ধারা থেকে আল্লাহ তাদের ফিরে আসার তাওফীক দিন। আসুন জীবনকে সে স্রষ্টার নিকট সঁপে দিই, যিনি আমাদের জীবন দান করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন