শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সংঘাতের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বিভাগীয় গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় আগামীকাল (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি সমাপ্ত হবে এবং এই গণসমাবেশ থেকে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হতে পারে বলে বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেছেন। তবে গণসমাবেশের স্থান নিয়ে অনেক আগে থেকেই জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিএনপি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছে। পুলিশ ও সরকারের তরফ থেকে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬টি শর্ত দিয়ে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। বিএনপি সেখানে সমাবেশ করতে চায় না। এ নিয়ে অনড় অবস্থান নিয়েছে। দলটি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। দলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তারা এখানেই সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী ও অন্য একটি স্থানের অনুমতি চেয়েছে। ফলে সরকার সোহরওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে অন্য কোথাও সমাবেশ করতে দেবে না বলে ঘোষণা দেয়। উভয় পক্ষই নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অটল। অথচ বিএনপি কোথায় অনুমতি চেয়েছে, তার আবেদন পত্রটি কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। করলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারত কার কথা সঠিক। অনুমতির আবেদন পত্রটি প্রকাশ না করায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে গণসমাবেশকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে খেলা হবে, খবর আছে ইত্যাদি নানা বক্তব্য দিয়ে হুংকার দেয়া হয়েছে। পুলিশও বিএনপির নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেফতার করছে ও মামলা দিচ্ছে। বিএনপি পাল্টা হুংকার দিয়ে বলেছে, এসব করে সমাবেশ ঠেকানো যাবে না। গণসমাবেশ হবেই। বলা বাহুল্য, সংঘাতের সৃষ্টি হলে বরাবরের মতো এর কুফল ভোগ করবে সাধারণ মানুষ। সরকার ও বিরোধীদলের এসব কর্মকাÐ শুরু হয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ক্ষমতাসীন দল চাচ্ছে, যেকোনো উপায়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে। এজন্য সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে বলে গোঁ ধরে বসে আছে। এটা হলে তার সুবিধা। কারণ, লোক দেখানো নির্বাচন এবং তা যতই বিতর্কিত হোক, তার মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকা যাবে। প্রশাসনকে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগিয়ে এবং ভোটের মাঠ থেকে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিতাড়িত করে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া যাবে। যেমনটি দেখা গিয়েছিল ২০১৩ সালে ভোটারবিহীন এবং ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, এবার আর তা হবে না। নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না এবং করতেও দেয়া হবে না।

দুই.
বিরোধীদলগুলো বলছে, দেশ এখন গণতন্ত্রহীনতা, বিচারহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও লুটপাটতন্ত্রের মধ্যে আছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ক্ষমতাসীনদের বিদায় নিতে হবে। সেফ এক্সিট বা নিরাপদ প্রস্থান নেয়ার জন্য সরকারকে তারা আহŸান জানাচ্ছে। এর বিপরীতে ক্ষমতাসীন দল বলছে, নিরাপদ প্রস্থান কেবল নির্বাচনের মাধ্যমেই হবে। তার মতে, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই হবে। এটা বলছে না, সেসব দেশে গণতান্ত্রিক ধারা যেভাবে প্রতিপালিত হয় এবং ক্ষমতাসীন দলের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিরোধীদলগুলো যেভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে মেনে নেয়, সে ধরনের গণতান্ত্রিক আচরণ সে দেখাতে পারেনি এবং পারছে না। বিগত দুটি নির্বাচন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। দেশের মানুষ এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও বিশ্বাস করে না, আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মানেই পুনরায় ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এমন সুযোগ কোনোভাবেই ক্ষমতাসীন দল হারাতে চাইবে না। তবে ক্ষমতাসীন দল তার অধীনে নির্বাচনকে যে গণতান্ত্রিক ধারা বলে আখ্যায়িত করে, তা বিরোধীদল তো বটেই সচেতন শ্রেণীর কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের মতে, এটা গণতন্ত্র নয়, ক্ষমতায় থাকার ‘জোরতন্ত্র’। এর মাধ্যমে সে নিজের মতো গণতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। গণতন্ত্রে যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, অন্যের মত পছন্দ না হলেও শ্রদ্ধা পোষণ করতে হয়, ক্ষমতাসীন দল তার কোনো তোয়াক্কা করছে না। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সে বল প্রয়োগের মাধ্যমে বিরোধী রাজনীতি এবং মানুষের মতামতকে দমিয়ে রাখতে চায়। এটা ‘জোরতন্ত্রের’ই বহিঃপ্রকাশ। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, গণতন্ত্রের রীতি-নীতিই হচ্ছে, সব দলের রাজনৈতিক অধিকার, পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস এবং সমঝোতা নিশ্চিত করা। সরকারি দলের দায়িত্ব, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিরোধীদলের সাথে পারস্পরিক আস্থা ও বোঝাপড়া সৃষ্টি করা। সে তা করেনি, করতে চেষ্টা করেনি এবং করছেও না। সে ফাঁকতালে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। এমন এক পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। গণতন্ত্র এমন যে, সেখানে জনমত পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হতে হয়। অন্যের মত পছন্দ না হলেও, তার মর্যাদা রক্ষা করতে হয়। এথেন্সে যখন থার্টি টাইরেন্টস বা ৩০ জনের স্বৈরশাসন চলছিল, সক্রেটিস নির্ভয়ে তাদের ক্রমাগত সমালোচনা করেছিলেন, এমনকি মৃত্যুদÐ মাথায় নিয়েও সমালোচনা থামাননি। স্বৈরশাসকরা তখন তাকে কাউন্সিলের সামনে হাজির করে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার পরামর্শ দিতে বলে। সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘যেখানে নিজেই বুঝতে পারছি না কিভাবে আমার জীবন পরিচালনা করব, সেখানে জনসাধারণ কিভাবে জীবনযাপন করবে, তা কী করে বলব!’ সক্রেটিসের এ কথার মর্মার্থ হচ্ছে, আগে শাসকদেরই গণতন্ত্র বুঝতে হয়। জনগণের মতামত বুঝে দেশ পরিচালনা করতে হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দুর্বল গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার কারণে ক্ষমতাসীন দল জনগণের মতামতকে আমলে নিচ্ছে না। সে মনে করছে, যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে, তাতে জনগণ সুখে-শান্তিতে আছে। তাবে জনগণ কতটা সুখে আছে বা তার সম্পর্কে কী ভাবছে, তা পরীক্ষা করার সাহস দেখাতে পারছে না। থাকলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতো। তা না করে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার পথ ধরে আছে। তার কাছে জনগণ নয়, ক্ষমতাই মুখ্যÑ এ প্রবণতা প্রবল। বিগত চৌদ্দ বছর ধরে যারাই এ নিয়ে কথা বলেছে, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে তাদের তীব্র কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা মনে করছে, তাদের সমালোচনা করা মানে বিরোধীদলের পক্ষে কথা বলা। তারা সরকারের ভাল চায় না।

তিন.
আমাদের দেশে নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য ছিল। এমনকি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে চৌদ্দ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে তার শুরুটা এই তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমেই হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যে, গণতান্ত্রিক ধারা গতিশীল হয়, তা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে দেখা গেছে। এ সরকারের অধীনে যারা নির্বাচিত হয়েছে, দেখা গেছে, ক্ষমতায় থাকাকালীন জনআকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারায় পরবর্তী নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। জনগণ তাদের বিজয়ী করেনি। অর্থাৎ তত্ত¡াবধায়ক হোক আর নিরপেক্ষ সরকার হোক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়াই জরুরি। এতে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষমতাসীনরাও সতর্ক থাকে। কারণ, পরের নির্বাচনে জিততে হলে তাকে ভালো কাজ দিয়ে জনগণের সমর্থন ও মন জয় করার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। তা নাহলে, জিততে পারবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতাকে উপেক্ষা করে এবং বিরোধী রাজনৈতিকদল ও মতকে দমিয়ে শুধু উন্নয়ন দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায় না। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দুর্নীতি, লুটপাট, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনের শাসনের অবনমন স্পষ্ট হয়ে উঠে। তার নজির এখন দেখা যাচ্ছে এবং সরকারকে দেশে-বিদেশে যথেষ্ট বদনামের শিকার হতে হচ্ছে। উন্নয়নের চেয়ে এখন এসব উপসর্গই এখন বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভিন্নভাবে দেখলে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্র ও বিরোধীদলকে দমিয়ে উন্নয়নের যে পরীক্ষা চালিয়েছে, তা যে সফল হয়েছে, সেটা বলা যায় না। ফলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়টি অনিবার্য রূপ লাভ করেছে। এর বিকল্প নেই। যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তার মধ্যে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে মনে করে, সে-ই আজীবন ক্ষমতায় থাকবে। আর কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বিরোধীদল বলে কিছু থাকুক, তা চায় না। অথচ গণতন্ত্রের বিকাশে বিরোদীদল ও মত থাকতেই হয়। এছাড়া গণতন্ত্র অচল। গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে যে ব্রিটেনকে বলা হয়, সেই ব্রিটেনে বিরোধীদলের শক্তিশালী ছায়া সরকার থাকে, যে সরকারের গাইড হিসেবে কাজ করে। সরকারও গুরুত্বের সাথে তার মতামতের মূল্যায়ণ করে। আমাদের দেশে বিরোধীদল মানেই শত্রæ মনে করা হয়। কিভাবে বিরোধীদল নির্মূল করা যায়, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এ মনোভাব থাকে। বিরোধীদলকে পিঁষে ফেলার সব বন্দোবস্ত করে। এ প্রেক্ষিতে, বিরোধীদল তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, এটাই স্বাভাবিক। এই যে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি লাগাতার গণসমাবেশ করছে, সে তার অস্তিত্ব ও জনস্বার্থ রক্ষার জন্যই করছে। এছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ নেই। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তাতে নানাভাবে বাধা দিয়েছে। ফলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠা খুবই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে বিএনপি’র আগামীকালের গণসমাবেশের স্থান নিয়ে কেন পুলিশ বাধা দেবে? পল্টনে গণসমাবেশ করলে কি সরকারের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে কিংবা ক্ষমতাহারা হয়ে যাবে? যদি সরকার তা মনে না করে, তাহলে সমাবেশ করতে দিতে অসুবিধা কি?

চার.
ব্যক্তিগত, দলীয় এবং গোষ্ঠীগত আদর্শ বা দর্শন থাকা স্বাভাবিক। কারোই যেমন তার আদর্শ বা দর্শন থেকে সরে আসা উচিত নয় এবং সে অনুযায়ী চলা উচিত, তেমনি অন্যের আদর্শ ও দর্শনকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনও তার আদর্শিক দায়িত্ব। সক্রেটিসের যখন বিচার চলছিল, তখন তিনি কোর্টে বলেছিলেন, ‘যদি কেউ তার আদর্শ থেকে সরে আসে, তবে তা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মৃত্যু ভয়ে একজন সৈনিকের পালিয়ে আসার মতো। এটা কাপুরুষতা ছাড়া কিছুই নয়।’ অর্থাৎ আদর্শের কাছে মৃত্যু তুচ্ছ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের রাজনীতিতে এখন আদর্শিক জায়গাটি ক্ষীণ হয়ে পড়েছে এবং একে অপরের আদর্শকে সম্মানের পরিবর্তে শত্রæ মনে করে। রাজনৈতিক সহবস্থানের ক্ষেত্রে এটি বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এমন প্রবণতা বিদ্যমান যে, সে চায় তার মতাদর্শের বাইরে অন্যকোনো মতাদর্শ দেশে না থাকুক। এটা ভাবে না, তার মতাদর্শের বাইরে অন্যদেরও ভিন্ন আদর্শ থাকতে পারে। তাদের অধিকার আছে তার মত প্রকাশ করার। ক্ষমতাসীন দল এই বিপরীত মতের প্রতি যথেষ্ট অসহিষ্ণু বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। অন্যদিকে বিরোধীমতের দলগুলোও তাদের মত প্রকাশের জায়গার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। ফলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর দায় মূলত ক্ষমতাসীনদের ওপরই বর্তায়। দেশের মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা যেমন চলমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ, তেমনি রাজনীতিহীন দেশও চায় না। তারা চায় হিংসা-প্রতিহিংসা এবং হানাহানির পরিবর্তে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং আস্থার রাজনীতি। জোর করে চাপিয়ে দেয়া মত বা ভিন্নমত দমন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি মনে করে, জনগণ তাদের সাথে আছে, তবে জনগণের এ পাল্স তাদের বুঝতে হবে। জনগণের কথা বলে তাদের ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার কথা, জনগণ এখন আর বিশ্বাস করে না। জনসাধারণকে আশ্বস্ত করতে হবে, তাদের রাজনীতির লক্ষ্য নিজেদের আখের গোছানো নয়, দেশ ও জনসাধারণের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য। প্রথাগত বিরোধিতা নয়, আদর্শকে আদর্শ দিয়ে এবং যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে মোকাবেলা করার রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করা এখন সময়ের দাবী। আদর্শিক দ্ব›েদ্বর নামে একে অপরকে দমন-পীড়ন প্রবণতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই দলই ঘুরেফিরে ক্ষমতায় যাবে এবং বিরোধীদলে থাকবে। ফলে তাদেরকে সুষ্ঠু রাজনীতি এবং এর গুণগত মান বজায় রাখতে হবে। পারস্পরিক সহবস্থানকে মেনে নিতে হবে। উভয় দলকে এ মানসিকতা ধারণ করতে হবে। কেউ কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা বা দমন-পীড়ন করে উড়িয়ে দেয়ার মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। একজনের অস্তিত্ব আরেকজনকে স্বীকার করতে হবে। গেøাবাল ভিলেজে পরিণত হওয়া অগ্রগামী বিশ্বে সামিল হতে গোষ্ঠীগত স্বার্থে ক্ষমতাসীন হওয়ার মতো সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ‘ক্ষুদ্র ও সাময়িক স্বার্থের কারণে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় করণীয় যারা বিসর্জন দেয়, তারা কখনোই স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য নয়’, আমেরিকান রাষ্ট্রনায়ক ও বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের এই উক্তির প্রতিফলন জনসাধারণ দেখতে চায় না।

darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন