ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার লক্ষে আজ রাত ৯টায় ক্রোয়শিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামছে ব্রাজিল। বিশ্ব আসর হোক বা অন্য কোন ফুটবলিয় প্রতিযোগিতা, ব্রাজিল থাকা মানেই তারা ফেবারিট। সেলেসাওদের আলাদা চোখে দেখা হয়, কারণ ফুটবলটা তাদের জীবন ও আনন্দের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। জয়-পরাজয়, শিরোপা, টাকা-পয়সা এগুলো তাদের জন্য গৌন্য। ফুটবল পায়ে রাখে সৌন্দর্যের ফুলঝুরি ফোটানোই তাদের প্রথম লক্ষ্য। সেলেসাওরা যখন নিজেরা উপভোগ করে খেলাটা, তখন ফলাফলও যায় তাদের পক্ষে। আজ এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়শিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সেই ছন্দেই আছে তিতের ব্রাজিল। তাই লুকা মদ্রিচদের কঠিন এক পরীক্ষার সামনে পড়তে হচ্ছে শেষ আটের ম্যাচে। ক্রোয়েটরা সেকেন্ড রাউন্ডে জাপানের বিপক্ষে টাই-ব্রেকার জিতে বিশ্বকাপে টিকে আছে।
গ্রæপ পর্বের প্রথম ম্যাচ খেলার পরই ব্রাজিল দলে দেখা দেয় নানান সমস্যা। চোট ও সংক্রামণ জনিত কারণে দলের মূল খেলোয়াড়রা ছিলেন মাঠের বাহিরে। এসবের মাঝে গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও অ্যালেক্স তেলে চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছেন চোটের কারণে। লেফটব্যাক অ্যালেক্স সান্ড্রোও আছেন চোট জনিত সমস্যায়। তবে স্কোয়াডের বাকি ফুটবলাররা যে ধরনের ঐশ্বরিক ফুটবল খেলছে, তাতে চোট নিয়ে চিন্তার ভাঁজ নেই তিতের কপালে। ব্রাজিলিয়ানরা আজ রাতেও ৪-২-৩-১ ছকে মাঠে নামতে যাচ্ছে। এই কৌশলের প্রাণভোমরা নেইমার আছেন ছন্দে। তাছাড়া ভিনিসিয়ুস, রাপিনহারাও দারুণভাবে মাঠে প্রয়োগ করছেন কোচের কৌশল। দলটির স্ট্রাইকার রিচার্লিসন আসরে এই পর্যন্ত করেছেন ৩ গোল যার মাঝে প্রথমটি এগিয়ে আছে বিশ্বকাপের সেরা গোল হওয়ার দৌড়ে, আর জাপানের বিপক্ষে সবশেষ গোলটি প্রমাণ করে ব্রাজিল দলের রসায়ন কতটা দারুণ।
অন্যদিকে সেলেসাওদের মধ্যমাঠ আছে কাসেমিরোর প্রহরায়। সত্যি বললে রক্ষণ আর আক্রমণের সংযোগ ঘটিয়ে গোটা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেন এই ম্যানইউ মিডফিল্ডার। অন্যদিকে মার্কিনহোস ও থিয়াগো সিলভা দারুণভাবে রক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্রাজিল দলে কার্ড সমস্যায় আছেন কেবল ফ্রেড ও গুয়েমারেস। ব্রাজিল সবশেষ চার আসরে তিনবারই কাটা পরেছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে এবং প্রতিবারই ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। যার মাঝে ২০০৬ ও ২০১০ সালে তাদের শেষ আট থেকে বিদায় ছিল বিরাট অঘটন। তবে এবার সেলেসাওদের যেধরণের আত্মবিশ্বাস তাতে পচা শামুকে পা কাটা প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি।
জলাতকো ডালিচের ক্রোয়শিয়া এবারের আসরে নেই ছন্দে। তারা ৪ ম্যাচে করেছে ৫ গোল, যারমাঝে ৪টি এসেছে দুর্বল কানাডার বিপক্ষে। তাইতো গোলের জন্য হাহাকার আছে ডালিচের শিবিরে। দলটির দুই তরুণ ডিফেন্ডার সোসা ও স্টানিসিচ আছে চোট সমস্যায়। তবে আজকের ম্যাচে মাঠে থাকতে পারেন প্রথমজন। সেক্ষেত্রে বারিছিসকে বেঞ্চে বসতে হবে। তবে বায়ার্ন ডিফেন্ডার স্টানিসিচের মাঠে ফেরা হচ্ছে না আজ। দলটির আরেকটি সমস্যা হচ্ছে মিডফিল্ডে যথেষ্ট বদলি না থাকা। মদ্রিস, কোভাসিচ ও ব্রোজোভিচের কাছাকাছি মানের কোন মিডফিল্ডার দলটিতে নেই। অন্যদিকে প্রথম দুইজনের নামের পাশে আছে একটি করে কার্ড। এই দলটি উইংইয়ের চেয়ে মাঝদিয়ে আক্রমণ করতে পছন্দ করে, যা ব্রাজিলের জমেথাকা রক্ষণ ভাঙ্গার একটি অন্তরায়।
ইউরো কাপ ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে ক্রোয়েটরা তাদের সবশেষ আট নকআউট ম্যাচের সাতটিতে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ টেনে নিয়েছে। একমাত্র যে ম্যাচটি নির্ধযারিত সময়ে শেহ হইয়েছে সেটি ছিল শেষ বিশ্বকাপের ফাইনাল। দলটির বিশ্বআসরের শেষ পাঁচ নক-আউটের তিনটিরই ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে টাইব্রেকে।
ব্রাজিল-ক্রোয়শিয়া এখন পর্যন্ত ৪ বার মুখোমুখ হয়েছে, যার মাঝে ৩টিতেই জিতেছে সেলেসাওরা। অপর ম্যাচটি ড্র। আর সেলেসাওরা যে দুইবার বিশ্বকাপে ক্রোয়েট দের মোকাবেলা করেছে, দুইবারই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। ক্রোয়শিয়া তাদের সবশেষ ১০ ম্যাচে অপারাজিত এবং সর্বশেষ ২০ ম্যাচে মাত্র এক্টিতে হারের শিকার হয়েছে। তবে ব্রাজিলের সাম্বার সামনে কতক্ষণ ক্রোয়েট দুর্গ অরক্ষিত থাকবে তা জানতে অপেক্ষা করতে আজরাত পর্যন্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন