মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

পারলেন না শফিক, পারলো না পাকিস্তান

| প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : পাকিস্তান ছুটছিল ইতিহাস গড়ার হাতছানিতে। কিন্তু রোমাঞ্চকর রান তাড়ার ইতি ৫ বলের মধ্যে শেষ দুই উইকেট হারিয়ে। ব্যাক অব লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল। আসাদ শফিকের গ্লাভসে ছোবল দিয়ে উঠে গেল ওপরে। গালিতে ক্যাচটি নিয়েই ডেভিড ওয়ার্নার আবার বল উড়িয়ে দিলেন শূন্যে। যেন ছুঁড়ে দিলেন পাকিস্তানের জয়ের আশাকেও! অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় এক জয়ের পথে পাকিস্তানকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন শফিক। কিন্তু পারলেন না শেষ পর্যন্ত। মিচেল স্টার্কের আগুনে এক ডেলিভারিতে শেষ হলো শফিকের সাড়ে ৫ ঘণ্টার বীরোচিত লড়াই। বড় বাধা সরানোর পর শেষ উইকেটটি নিতে একদমই সময় নেয়নি অস্ট্রেলিয়া।
শেষ দিন শুরুর সময় পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০৮ রান, অস্ট্রেলিয়ার ২ উইকেট। ইয়াসির শাহকে নিয়ে অনায়াসেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন শফিক। একটি-দুটি রান, মাঝেমাঝেই চার আসছিল নিয়মিত। আগের দিনই সেঞ্চুরি করা শফিক তো বটেই, দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ইয়াসিরও। পাকিস্তানের লক্ষ্য আস্তে আস্তে ষাট হয়ে পঞ্চাশের নিচে নামতেই ম্যাচে পড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। স্টিভেন স্মিথসহ অস্ট্রেলিয়ানদের চোখেমুখে শঙ্কার ছাপ ছিল স্পষ্ট। এক পর্যায়ে দুই মূল বোলার স্টার্ক ও জস হেইজেলউডকে নতুন স্পেলে আনতে বাধ্য হন স্মিথ। সেই স্টার্কই করে দেন কাজের কাজ। দুর্দান্ত ওই ডেলিভারিতে শফিককে ফিরিয়ে ভাঙেন ৭১ রানের নবম উইকেট জুটি। ৩৩৪ মিনিটে ১৩৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেও শফিক ফিরলেন আরও বড় কিছু করতে না পারার হতাশায়। ওই ওভারেই সরাসরি থ্রোয়ে ইয়াসিরকে (৩৩) রান আউট করে দেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ানদের বাধনহারা উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছিল, হারের শঙ্কা তাদের পেয়ে বসেছিল যথেষ্টই!
৩৯ রানের জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেছে ১-০ তে। শেষ ইনিংসে ৪৯০ রান তাড়ায় পাকিস্তান অলআউট ৪৫০ রানে। চতুর্থ ইনিংসে এটি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেই চতুর্থ সর্বোচ্চ রান। সেই ১৯৯৫ সালে সিডনিতে জয়ের পর এই নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টানা ১০ টেস্ট হারল পাকিস্তান।
অথচ এক সময় সহজ জয়ের পথেই ছিল অস্ট্রেলিয়া। ২২০ রানে পাকিস্তান হারিয়েছিল ৬ উইকেট। কিন্তু বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়ান শফিক, পাশে পান লেজের ব্যাটসম্যানদের। সপ্তম উইকেটে মোহাম্মদ আমিরের সঙ্গে গড়েন ৯১ রানের জুটি, অষ্টম উইকেটে ওয়াহাব রিয়াজের সঙ্গে ৬৬, নবম উইকেটে ইয়াসিরের সঙ্গে ৭১। শেষ পর্যন্ত শফিক পারলেন না বলেই পারল না পাকিস্তান। বড় লক্ষ্য দিয়েও আরও একবার হারের বিব্রতকর স্বাদ থেকে রক্ষা পেল অস্ট্রেলিয়া।
সাম্প্রতিক অতীতে চতুর্থ ইনিংসে চার শর বেশি রান করার কৃতিত্ব দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ৪৫০ রান করে ম্যাচ ড্র করেছিল প্রোটিয়ারা। ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৫১ রান করেও হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। ১৯৭৮ সালে ভারত ৪৪৫ রান করে হেরেছিল এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই। আজ থেকে ৭৭ বছর আগে, ১৯৩৯ সালে চতুর্থ ইনিংসে ৬৫০ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ড্র করেছিল ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের ৪৫০ টেস্টের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে এটা তাদের চতুর্থ সর্বোচ্চ সংগ্রহ। নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে একটা সান্ত¡না পাকিস্তান অবশ্য পেতে পারে। ১৯৭৩ সালে নটিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ৪৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৪০ রানে অলআউট হয়ে ৩৮ রানে হেরেছিল কিউইরা। লক্ষ্যের খুব কাছে এসেও লক্ষ্যটা ছুঁতে না পারার দুঃখটা পাকিস্তান ভুলতে পারে ইতিহাস থেকেই।
ব্রিসবেন টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যবধান ৩০৮ রানের। প্রথম ইনিংসে ফলোঅনে পড়েও তা করতে হয়নি পাকিস্তানকে। এর আগে ১৯৯৪ সালে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ৫২১ রানের জবাবে ২৬০ রানে গুটিয়ে গিয়ে ফলোঅন করে ৫৩৭ রান করে ম্যাচ বাঁচিয়েছিল পাকিস্তান। এত দিন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টই ছিল পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর বড় ইতিহাস। ব্রিসবেনে সেই ইতিহাসটা আরও গর্বের হতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে একটি কীর্তির কথা ভেবে কিছুটা হলেও সান্ত¡না পেতে পারে পাকিস্তান। গ্যাবায় চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন তাদেরই অধিকারে। এর আগে চতুর্থ ইনিংস গ্যাবায় সর্বোচ্চ রানের স্কোরটি ছিল ৩৭০। ম্যাচ হারলেও প্রথম টেস্টে সেরার পুরষ্কার উঠেছে শফিকের হাতেই। তার ইনিংসটির বিশালত্ব ফুটে ওঠে তাতেই। সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ৪২৯ ও ২০২/৫ (ডি.)
পাকিস্তান : ১৪২ ও ১৪৫ ওভারে ৪৫০ (শফিক ১৩৭, ইয়াসির ৩৩, রাহাত ১; স্টার্ক ৪/১১৯, বার্ড ৩/১১০, লায়ন ২/১০৮)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৩৯ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : আসাদ শফিক
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন