আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় অলীদের বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্য, তাদের পরিচয় ও প্রশংসা আল কোরআনে বিবৃত করেছেন এবং একই সাথে তাদের প্রতি আখেরাতের সুসংবাদও প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রাখ, আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। তাদের জন্যই রয়েছে দুনিয়ার জীবনে এবং আখেরাতে সুসংবাদ, আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন নেই, সেটাই মহা সাফল্য।’ (সূরা ইউনুস : ৬২-৬৪)।
এতে বলা হয়েছে যে, যারা আল্লাহর অলী, তাদের কোনো অপছন্দনীয় বিষয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। আর কোনো কোনো উদ্দেশ্যে ব্যর্থতার গ্লানিও থাকবে না। এদের জন্য পার্থিব জীবনেও সুসংবাদ রয়েছে এবং আখেরাতেও। দুনিয়াতে তারা দু:খ, ভয়, শঙ্কা থেকে মুক্ত থাকবে। আর আখেরাতে তাদের মনে কোনো চিন্তা-ভাবনা না থাকার অর্থ হলো জান্নাতে গমন করা। এতে সমস্ত জান্নাতবাসীই অন্তর্ভূক্ত।
আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ‘আওলিয়া’ শব্দটি আরবি ‘অলী’ শব্দের বহুবচন। আরবি ভাষায় অলী শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘দোস্ত-বন্ধু’ও হয় এবং ‘নিকটবর্তী’ও হয়। আর শরীয়তের পরিভাষায় অলী বা বন্ধু বলতে ঐ ব্যক্তিকে বুঝায়, যার মধ্যে দুটি গুণ ‘ঈমান’ ও ‘তাকওয়া’ আছে। উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মানুষকে হুশিয়ার করে ইরশাদ করেছেন, ‘জেনে রাখ, আল্লাহর অলী তথা বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।’
আর যদি আল্লাহর অলী বলতে ঈমানদার ও মুত্তাকীদের বুঝায়, তাহলে বান্দাহর ঈমান ও তাকওয়া অনুসারে আল্লাহর কাছে তার বেলায়াত তথা বন্ধুত্ব নির্ধারিত হবে। সুতরাং যার ঈমান ও তাকওয়া সবচেয়ে বেশি পরিপূর্ণ হবে, তার বেলায়াত তথা বন্ধুত্বও সবচেয়ে বেশি গাঢ় এবং শক্তিশালী হবে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষের মধ্যে তাদের ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে আল্লাহর বেলায়েতের তথা বন্ধুত্বের মধ্যে ও তারতম্য হবে, শ্রেণি ভেদ হবে।
এ পর্যায়ে স্বভাবতই মনের মধ্যে এই প্রশ্নের উদয় হয় যে, ঈমানদার ও মোত্তাকীদের মাঝে আল্লাহপাকের অলী বা বন্ধু হিসেবে কারা স্বীকৃত? এর উত্তর এই যে, আল্লাহপাকের নবীগণ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অলী হিসেবে স্বীকৃত। নবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন তাঁর রাসূলগণ। তাঁদের সংখ্যা তিনশত তের জন। আর রাসূলগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অর্থাৎ ‘উলুল্ আযম’ রাসূলগণ।
তথা হযরত নূহ (আ.), হযরত ইবরাহীম (আ.), হযরত মূসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.), এবং হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর সমস্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অর্থাৎ ‘উলুল আযম’ রাসূলগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনিই ইমামুল আম্বিয়া, সাইয়্যেদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল্ আলামীন, সাক্ষ্যদানকারী, জান্নাতের সুসংবাদদানকারী, জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শনকারী, আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও সিরাজুম মুনীর।
এ পর্যায়ে এটা জানা আবশ্যক যে, আল্লাহর অলীগণ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রথমশ্রেণি : যারা অগ্রবর্তী ও নৈকট্য প্রাপ্ত। দ্বিতীয় শ্রেণি : যারা ডান ও মধ্যম পন্থী। তাদের কথা মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন যা ঘটা অবশ্যম্ভাবী (কিয়ামত) তা ঘটবে’। তখন তার সংঘটনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কেউ থাকবে না। তা কাউকে নীচ ও হীন করবে, কাউকে সমুন্নত করবে। যখন জমিন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে। পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে। ফলে তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পর্যবসিত হবে। এবং তোমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়বে, ডান দিকের দল, ডানদিকের দলের কি মর্যাদা, আর বাম দিকের দল, বাম দিকের দলের কি অসম্মান, আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী। তারাই নৈকট্য প্রাপ্ত, নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতের বাসিন্দা। (সূরা আল ওয়াকিয়াহ্ : ১-১২)।
এখানে তিন শ্রেণির লোকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের একদল জাহান্নামী। তাদেরকে বাম দিকের দল বলা হয়েছে। আর বাকি দুই দল জান্নাতী। তারা হলেন -ডানদিকের দল এবং অগ্রবর্তী ও নৈকট্য প্রাপ্তগণ। এই তিন শ্রেণির মধ্যে ডান দিকের দুই দলের কথা মহান আল্লাহপাক সূরা আলওয়াকিয়াহ -এর ৮৮-৯১ নং আয়াতে এভাবে পূণর্ব্যক্ত করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তারপর যদি সে নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয়, তবে তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত। আর যদি সে ডান দিকের একজন হয়, তবে তার জন্য রয়েছে সালাম ও শান্তি, কারণ সে ডান পন্থিদের অন্তর্ভূক্ত।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন