শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিজয়ের পর ইসলাম কী করতে শেখায়-১

মাওলানা আবু হাসসান রাইয়ান বিন লুৎফুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। এই দ্বীনকে তিনি বহু বিষয়ে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, এটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। সার্বজনীন দ্বীন। জীবনের প্রতিটি লগ্নে, প্রতিটি অঙ্গনে এই দ্বীন আমাদেরকে সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করে। এই চিরন্তন বিধান ও নির্দেশনা পালনের মাধ্যমেই আমরা লাভ করতে পারব ইহলৌকিক-পারলৌকিক সফলতা। মানুষের ব্যক্তিজীবন এবং জাতীয় জীবনে সফলতা-ব্যর্থতা আছে। উত্থান-পতন আছে। কিন্তু এইসব পরিস্থিতিতে একজন মুমিনের বিশ্বাস ও চেতনা, আচরণ ও কর্মপন্থা অন্য সবার থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র হওয়া উচিত। বিশেষত যেসব ক্ষেত্রে শরীয়তের সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান; যার যথাযথ মূল্যায়ন করা মুমিন হিসেবে আমাদের অপরিহার্য দায়িত্ব।

যখন বিজয় অর্জিত হয়, জমিনের বুকে কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় তখন মুমিন-মুসলিম হিসেবে আমাদের বেশ কিছু করণীয় আছে। তা থেকে কিছু উল্লেখ করা হল। সর্বপ্রথম আমাদের কর্তব্য হল, মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা, বিজয় একমাত্র আল্লাহর দান। তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ না হলে বিজয় অর্জন কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : যারা দৃঢ় বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের মিলিত হতে হবে, তারা বলতে লাগল, কত ক্ষুদ্র দল আল্লাহর হুকুমে বড় দলের ওপর জয়ী হয়েছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সূরা বাকারা : ২৪৯)।

বস্তুত বিজয় অর্জন সম্পর্কে একজন মুমিনের অনুভব-অনুভূতি এমন হওয়াই কাম্য। বিজয় যেহেতু আল্লাহর দান ও নিয়ামত তাই মুমিন বান্দার কর্তব্য হল, এই নিয়ামতের ওপর আল্লাহর শোকর আদায় করা। আর ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং লোকদের দেখবেন তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। তখন আপনি স্বীয় রবের স্বপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করতে থাকবেন এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল। (সূরা নাসর : ১-৩)।

বিজয় অর্জনের পর মুমিন বান্দার দায়িত্ব হল, বিনয়ী হওয়া, বিশৃঙ্খল না হওয়া। অবনত হওয়া, উদ্ধত না হওয়া। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : ওই পরকালীন নিবাস আমি তাদের দেব, যারা জমীনের বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদের জন্য। (সূরা কাসাস : ৮৩)।

রাসূলে কারীম (সা.) যখন বিজয়ীরূপে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন এবং জি তুয়া নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন ইয়ামানী লাল চাদরের অংশবিশেষ দ্বারা মস্তক ও চেহারা ঢেকে ফেললেন। আল্লাহ তা’আলা যে এই বিজয় দ্বারা তাঁকে সম্মানিত করেছেন এদিকে লক্ষ্য করে আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশে এমনভাবে মাথা অবনত করলেন যে, তাঁর দাড়ি হাওদার মধ্যখান ছোঁয়ার উপক্রম হল। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ. ৪, পৃ. ২৯৩)। অথচ একদিন কুরাইশদের অত্যচারের দরুন এই মক্কা নগরী থেকেই তিনি হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আল্লাহ তা’আলা আমাদের নবীর উপর অসংখ্য দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন, যিনি আমাদের সামনে এই অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

বিজয় অর্জিত হওয়ার পর মুমিন বান্দাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল, যিনি বিজয় দিয়েছেন তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। যিনি ভূখ দিয়েছেন তাঁর বিধান নিজেদের জীবনে এবং সমাজের সব অঙ্গনে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ তা’আলা তাঁর নেক ও অনুগত বান্দাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন : তারা এমন যে, আমি তাদের পৃথিবীতে ক্ষমতা দান করলে তারা নামাজ কায়েম করবে। জাকাত প্রদান করবে এবং সৎকর্মের আদেশ দেবে এবং অসৎকার্য থেকে নিষেধ করবে। আর সবকিছুর পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। (সূরা আল হাজ্জ : ৪১)।

আল্লাহপ্রদত্ত শরয়ী বিধানের যথাযথ অনুসরণের দ্বারা ভূখণ্ডের অধিবাসীগণই উপকৃত হবে। সব প্রকার কল্যাণ ও বরকতে তারা ধন্য হবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও পরহেজগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য অবশ্যই উন্মুক্ত করে দিতাম আসমান ও জমীনের বরকতসমূহ। কিন্তু ওরা অস্বীকার করেছিল। অতএব আমি ওদের কৃতকর্মের কারণে ওদের পাকড়াও করেছি। (সূরা আ‘রাফ : ৯৮)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md Parves Hossain ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈষম্য এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো প্রভেদ তৈরি করে না। কোরআন শরিফে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হে মানুষ! আমি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদিগকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সহিত পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন।’ (সূরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১৩, পারা: ২৬)।
Total Reply(0)
Jakirhosen Halak ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
জগতের সব মানুষ একই পিতা-মাতার সন্তান। সবারই পিতা বাবা আদম (আ.), সবারই মাতা মা হাওয়া (আ.)। তাই সব মানুষ ভাই ভাই, তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সাদা-কালো, লম্বা-খাটো সে তো আল্লাহর সৃষ্ট প্রকৃতির অবদান।
Total Reply(0)
Golam Kibria ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২৯ এএম says : 0
স্বাধীনতা আল্লাহর নিয়ামত। স্বাধীনতা যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার, তেমনি ইসলামের মূল শিক্ষা। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু দাসদের মুক্ত করেই ক্ষান্ত হননি; তিনি দাসকে সন্তান বানিয়েছেন, তিনি ক্রীতদাসকে ভাইয়ের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন, তিনি গোলামকে সেনা অধিনায়ক বানিয়েছেন। বংশানুক্রমিক দাসানুদাস কৃষ্ণবর্ণ হাবশি বিলাল (রা.)-কে মসজিদে নববির প্রধান মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২৯ এএম says : 0
স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে আরব-অনারব, ধনী-দরিদ্র সবাই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। রোম, পারস্যসহ সারা পৃথিবীতে ইসলামের স্বাধীনতার বাণী বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতবর্ষের শ্রেণিবৈষম্য ও বর্ণবৈষম্যের শিকার নির্যাতিত-নিপীড়িত কোটি কোটি মানবসন্তান স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করার জন্য ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে। মুক্তির সুধা পান করেছে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
Total Reply(0)
jack ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৪:৩৪ পিএম says : 0
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা যেভাবে বিজয় করেছিলেন >আমাদের কে বাংলাদেশকে সেইভাবে বিজয় করতে হবে এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে হবে >তাহলে বেদিন সরকার জীবনে বাংলাদেশ শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না >>>>>আল্লাহদ্রোহী সমূলে ধ্বংস করে দিবেন>>> সরকারকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি থেকে চিরজীবনের জন্য ধ্বংস করে দিবেন তাহলেই একমাত্র মুক্তি হবে আমাদের এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে দেশের কোন মানুষ দরিদ্র থাকবে না সাম্য থাকবে>>গুম খুন গুন্ডামি ডাকাতি হাইজ্যাক টেন্ডারবাজি ঘুষ সুদ ধর্ষণ ইভটিজিং মিথ্যা কেস কোন কিছুই থাকবে না আমাদের দেশে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন