শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহর অলী তথা বন্ধুদের কোনো ভয় নেই-৪

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

সূরা ইউনুসের ৬৩-৬৫ নং আয়াতে আল্লাহপাক তাঁর অলীত্ব তথা বন্ধুত্ব ও নৈকট্য লাভকারীদের পরিচয় তুলে ধরে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। এক. অলী হওয়ার জন্য একটিই সহজ উপায় রয়েছে, আর তা হলো ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে আল্লাহর রং এ বিরঞ্জিত হওয়া এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ করা। যারা এ ধরনের রং এ বিরঞ্জিত হয়েছে এবং পুরোপুরি সুন্নাতের অনুসরণ করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের সম্মান ও মর্যাদাই আলাদা। তাদের সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন : আল্লাহর এমন কিছু বান্দাহ রয়েছে, যাদেরকে শহীদরাও ঈর্ষা করবে। জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? হয়ত আমরাও তাদেরকে ভালোবাসব।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : তারা কোনো সম্পদ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ব্যতীতই একে অপরকে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ভালোবেসেছে। নূরের মিম্বরের উপর তাদের চেহারা হবে নূরের। মানুষ যখন ভীত হয়; তখন তারা ভীত হয় না। মানুষ যখন পেরেশান ও অস্থির হয়; তখন তারা অস্থির হয় না। তারপর তিনি উল্লেখিত আয়াত তিলাওয়াত করলেন। (সুনানে আবু দাউদ : ৩৫২৭, ইবনে হিব্বান : ৫৭৩)।

অন্য এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : বিভিন্ন দিক থেকে মানুষ আসবে এবং বিভিন্ন গোত্র থেকে মানুষ এসে জড়ো হবে, যাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকবে না। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবেসেছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যুদ্ধে কাতারবন্দী হয়েছে। আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন তাদের জন্য নূরের মিম্বর সমূহ স্থাপন করবেন, তারপর তাদেরকে সেগুলোতে বসাবেন। তাদের বৈশিষ্ট হলো, মানুষ যখন ভীত হয়, তখন তারা ভীত হয় না। মানুষ যখন পেরেশান হয়, তখন তারা পেরেশান হয়না তারা আল্লাহর অলী, তাদের কোনো ভয় ও পেরেশানী কিছুই থাকবে না। (মুসনাদে আহমাদ : ৫/৩৪৩)।

দুই. এখানে আল্লাহর অলীদের জন্য দুনিয়ার সুসংবাদ বলতে যা বুঝানো হয়েছে তদসম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসে এসেছে যে, তা হলো : কোনো মুসলিম তার জন্য কোনো ভাল স্বপ্ন দেখা বা তার জন্য অন্য কেউ ভাল স্বপ্ন দেখা। (সহীহ মুসলিম : ২৬৪২)। কোনো কোনো হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যখন সময় (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে, তখন মুসলিম ব্যক্তির স্বপ্ন প্রায় সত্য হবে। তোমাদের মধ্যে যে বেশি সত্যবাদী তার স্বপ্ন ও বেশি সত্য। মুসলিম ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়তের পঁয়তাল্লিশ ভাগের একভাগ।

স্বপ্ন তিন প্রকার : (এক) সৎ স্বপ্ন আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে সুসংবাদ। (দুই) আর এক প্রকার স্বপ্ন হচ্ছে শয়তানের পুঞ্জিভূত করা বিষয়াদি। (তিন) আর এক প্রকার স্বপ্ন আছে যা কোনো ব্যক্তির নিজের সাথে কৃত কথাবার্তা। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অপছন্দনীয় কিছু দেখে, সে যেন উঠে সালাত আদায় করে এবং কাউকে না বলে। (সহীহ বুখারী : ৭০১৭)।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, মুবাশশিরাত (সুসংবাদরাজি) ব্যতীত নবুয়তের আর কিছু বাকি নেই। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন : সুবাশশিরাত কী? তিনি উত্তর করলেন : সৎ স্বপ্ন। (সহীহ মুসলিম: ৪৭৯)। অবশ্য কোনো কোনো মুফাসসিরের মতে এখানে দুনিয়ার সুসংবাদ বলতে মুমিন বান্দাহদের মৃত্যুর সময় তারা যে জান্নাত ও রহমতের ফেরেশতাদের পক্ষ হতে উত্তম আচরণ পেয়ে থাকেন, তাই বুঝানো হয়েছে। (তফসীরে তাবারী)।

তিন. আর আখেরাতের সুসংবাদ হচ্ছে জান্নাত ও উত্তম ব্যবহার। যা কোরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিভিন্ন হাদীসে বিস্তারিত এসেছে। যেমন আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : তাদেরকে (হাশরের মাঠের) কঠিন ভীতিকর অবস্থা পেরেশান করবে না। আর ফেরেশতাগণ তাদেরকে সাক্ষাৎ করে বলবে, এটাতো ওইদিন যার ওয়াদা তোমাদেরকে করা হতো। (সূরা আল আম্বিয়া : ১০৩)।

অন্য এক আয়াতে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন : সেদিন আপনি দেখবেন মুমিন নর-নারীদের সামনেও ডানে তাদের নূর তথা জ্যোতি ছুটতে থাকবে। বলা হবে, আজ তোমাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে, এটাই মহাসাফল্য। (সূরা আল হাদীদ : ১২)। সুতরাং মহান আল্লাহপাক মুমিন-মোত্তাকিদের সাথে যে ওয়াদা করেছেন তা কখনো পরিবর্তনশীল নয়। এটাই স্থায়ী অঙ্গীকার। (তাফসীরে কুরতুবী)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন