শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যে দান অর্থহীন-১

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২

কোনো ইবাদতে যদি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের পরিবর্তে যদি সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন কারো উদ্দেশ্য হয়, ইবাদতে যদি ইখলাস না থাকে, তবে সেটাও একপ্রকার শিরক। এ শিরকের মাত্রা হয়ত মূর্তিপূজার মতো অতটা ভয়াবহ নয়, তবুও তা শিরক। আর নামাজ বা এ জাতীয় ইবাদতের তুলনায় দান-সদকায় এ অপরাধের আশঙ্কা বরাবরই বেশি থাকে।

সূরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম-মিসকিন, কাছের প্রতিবেশী, দূরের প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও মালিকানাধীন দাস-দাসী সকলের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলাবাহুল্য, তারা যখন প্রয়োজনগ্রস্ত হয়ে পড়বে, তখন তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করাও সদাচারেরই অন্তর্ভুক্ত। এ আর্থিক সহযোগিতাকেই আমরা দান বা সদকা বলে থাকি। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দান-সদকা তাই সরাসরি আল্লাহ তা’আলারই নির্দেশ।

কিন্তু মহাপুরস্কার অর্জিত হবে যে আমলে বিষাক্ত রিয়া এসে তা বরবাদ করে দেয়ার চেষ্টা তো করবেই। বনি আদমকে বিভ্রান্ত করা আর তার আমলগুলো বরবাদ করার জন্যে শয়তান প্রতি মুহূর্তেই ওত পেতে আছে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপরোক্ত সদাচরণের আদেশ দেয়ার আগেই সতর্ক করেছেন এভাবে : তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তাঁর সঙ্গে কোনোকিছুই শরিক করো না। (সূরা নিসা : ৩৬)।

অর্থাৎ সতর্ক থেকো, কোনো প্রকার রিয়া যেন তোমাদের ইবাদতে যুক্ত হয়ে না পড়ে। ইবাদতের লক্ষ্য তো কেবলই আল্লাহর সন্তুষ্টি। ছোট-বড় কোনো শিরকই যেন ইবাদতকে নষ্ট করে না দেয়। দানে যাদের ইখলাস ও নিষ্ঠা থাকে না, রিয়া ও লোক দেখানো মানসিকতা যাদের দানকে গ্রাস করে নেয়।

রিয়া ও লোক দেখানো মানসিকতার মতোই দানের সুফল বিনষ্টকারী আরেকটি বিষয়, দান করে খোঁটা দেয়া। পরিণাম বিবেচনায় এটা রিয়ার চেয়েও গুরুতর। দানে যদি রিয়া থাকে, তবে এতে দানগ্রহীতা উপকৃত হয়ে যায় ঠিকই, বঞ্চিত হয় শুধুই দাতা, দানের অপরিসীম পুরস্কার থেকে। কিন্তু দান করে যখন গ্রহীতাকে দাতা খোঁটা দেয় কিংবা কষ্টদায়ক কোনো আচরণ করে, তখন দানের পরকালীন পুরস্কার থেকে দাতা যেমন বঞ্চিত হয়, দুনিয়ার বিচারেও সে দান আর ভালো কিছু বলে বিবেচিত হয় না।

একজন বিপদে পড়লেই তো আরেকজন পাশে দাঁড়ায়। তাকে দান করে। তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সঙ্কটের গর্ত থেকে উপরে উঠে আসতে তাকে সহযোগিতা করে। এরপর দাতা যখন দানের কথা বলে খোঁটা দেয়, গ্রহীতার তখন মনে হয়, আমি যদি বিপদেই পড়ে থাকতাম, তার কাছ থেকে যদি সহযোগিতাটুকু গ্রহণ না করতাম! দানগ্রহীতার জন্যে এ যেন আগের চেয়েও বড় বিপদ।

স্বাভাবিক কথা, এক বিপদে সহযোগিতা করে যদি কেউ আরো বড় কোনো বিপদে ফেলে দেয়, তবে সে সহযোগিতা অর্থহীন, সে দান নিষ্ফল। সহযোগিতা যে গ্রহণ করে, মানসিকভাবে সে এমনিতেই দুর্বল থাকে। এর ওপর যদি যোগ হয় সহযোগিতাকারীর পক্ষ থেকে খোঁটা, তবে তা রীতিমতো তার অন্তরে রক্তক্ষরণ ঘটায়। এমন সহযোগিতা করার চেয়ে না করাই ভালো। এ ভালো সবার জন্যেই; গ্রহীতা যদিও বিপদগ্রস্ত, কিন্তু এক বিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে আরো বড় কোনো বিপদে তাকে পড়তে হবে না, খোঁটা শোনার মতো বড় যন্ত্রণা তাকে সইতে হবে না।

আবার নিষ্ফল দান না করে নিজের সম্পদ নিজের কাছেই রয়ে গেল; এতে সহযোগিতাকারীরও একপ্রকার ভালোই হল। আবার দান করে, বিপদে সহযোগিতা করে যারা খোঁটা দেয়, তারা যেমন সমাজের চোখে মন্দ বলে বিবেচিত হয়, তারা আল্লাহ তা’আলার বিচারেও মন্দ। আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, দান করে খোঁটা দেয়ার তুলনায় দান না করে সুন্দর কথায় ফিরিয়ে দেয়া অনেক উত্তম। পড়ুন : সুন্দর কথা ও (সহযোগিতাপ্রার্থীর পীড়াপীড়ি) ক্ষমা করে দেয়া এমন দান থেকে উত্তম, যার পরে কষ্ট দেয়া হয়। (সূরা বাকারা : ২৬৩)। দান করে খোঁটা দিলে সে দান অর্থহীন। আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ এমন : হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের দানগুলো খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে নষ্ট করে ফেলো না। (সূরা বাকারা : ২৬৪)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Golam Kibria ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৩৩ এএম says : 0
হাদিসে এসেছে কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে যে সাত শ্রেণির মুমিন আশ্রয় পাবে, তাদের অন্যতম হলেন, ‘ঐ ব্যক্তি, যিনি এমনভাবে গোপনে দান করেন যে তার ডান হাত কী খরচ করে, বাম হাত তা জানতে পারে না। ’-(মুসলিম, হাদিস: ১০৩১)
Total Reply(0)
Imran Khan ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৩৩ এএম says : 0
দান মহৎ ইবাদত। পবিত্র কোরআনে গোপন-প্রকাশ্য উভয় প্রকার দানেরই প্রশংসা করা হয়েছে। দানে মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন হয়। তবে গোপনে দানকে কোরআন ও হাদিসে অধিক উত্তম বলা হয়েছে।
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৩৩ এএম says : 0
বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে দানের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হলেও গোপনে দানকে উত্তম বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো, তাহলে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে করো ও অভাবীদের প্রদান করো, তবে তোমাদের জন্য তা আরো বেশি উত্তম...। ’ -(সুরা: বাকারা, আয়াত- ২৭১)
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৩৪ এএম says : 0
মানুষকে দেখানোর জন্য দান করলে পরকালে এর জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ( সা.)- কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বিচারকার্য পরিচালনার শুরুতেই তিন ব্যক্তিকে ডাকবেন। তাদের একজন হবে এমন দানবীর যে মানুষকে দেখানোর জন্য দান করেছিল।
Total Reply(0)
কাজল হায়দার ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৩৪ এএম says : 0
আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা দান করার সওয়াব শুধু সেই ব্যক্তিই লাভ করবে, যে স্বীয় সম্পদ দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ করবে না এবং মুখ দিয়ে এমন কোনো তুচ্ছ বাক্যও বের করবে না, যা গরীব-অভাবীর সম্মানে আঘাত হানে এবং সে তাতে ব্যথা অনুভব করে। কেননা, এটা এতো বড় অপরাধ যে, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তিন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন না। তাদের মধ্যে একজন হলো, (দান করে) অনুগ্রহ প্রকাশকারী ব্যক্তি।’-(মুসলিম, ১০৬)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন