‘সুমহান আল্লাহ, তিনি ছাড়া এবাদত লাভের উপযুক্ত কেউ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সকল সত্তার ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারেনা, নিদ্রাও নয়। নভোমণ্ডলের যা রয়েছে এবং ভূমণ্ডলে যা রয়েছে সবই তারা এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনেও পিছনে যা কিছু রয়েছে তা তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছা করেন তাছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুখরী’ আসমান সমূহ ও জমিনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে। আর এ দু’টোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।’
উদ্ধৃত এ আয়াতটিকে আয়াতুল কুরসী বলা হয়। এখানে মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহুর একক অস্তিত্ব তাওহীদ ও তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা এক অনুপম ও অত্যাশ্চর্য ভঙ্গিতে প্রদান করা হয়েছে। এতে আল্লাহর অস্তিত্ববান হওয়া, জীবন্ত হওয়া, শ্রবণকারী হওয়া, দর্শক হওয়া, বাকশক্তি সম্পন্ন হওয়া, তাঁর সত্তার অপরিহার্যতা, তাঁর অসীম অনন্তকাল পর্যন্ত থাকা, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা ও উদ্ভাবক হওয়া, যাবতীয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া, সমগ্র বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়া, এমন শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের অধিকারী হওয়া যাতে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে কেউ কোনো সুপারিশ করতে না পারে।
এমন পরিপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যাতে সমগ্র বিশ্ব ও তাঁর যাবতীয় বস্তুনিচয়কে সৃষ্টি করা এবং সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং তাদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়ে তাঁকে কোনো ক্লান্তি ও পরিশ্রান্তির সম্মুখীন হতে হয় না এবং এমন ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী হওয়া যাতে, কোনো প্রকাশ্য কিংবা গোপন বস্তু কিংবা কোনো অনু-পরমাণুর বিন্দু-বিসর্গও যাতে বাদ না পড়তে পারে।
সুতরাং এহেন মর্যাদা ও ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার সঙ্গ, বন্ধুত্ব, সান্নিধ্য, নৈকট্য ও কুরবত লাভের প্রত্যাশা অন্তরে জাগরুক হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এই স্বাভাবিকতাকে মহীমময় আল্লাহপাক আরও সহজ ও প্রাণবন্ত করে তোলেছেন। আল কুরআন গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করলে বুঝা যায় যে, আল্লাপাকের সঙ্গ, বন্ধুত্ব ও নৈকট্যের দু’টি অবস্থা রয়েছে।
প্রথম অবস্থাটি আল্লাহর সাথে সৃষ্টির সম্পর্কের মাঝে বিজড়িত। কেননা আল্লাহপাক আরশের উপরেই আছেন। তিনি যে সঙ্গ ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক অটুট ও অব্যাহত রাখেন, তা হলো তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও শক্তিতে তিনি সবার সাথেই আছেন। সবাই তাঁর মুঠোতে আছে। কেউ তাঁর আয়ত্ব ও জ্ঞানের আওতার বাইরে নয়। এধরনের সঙ্গ বা বন্ধুত্ব বিশেষ কোনো প্রকার সম্মান ও মর্যাদার বিষয় নয়। এখানে সবাই সমান। মোট কথা, তিনি কারোও গায়ের সাথে লেগে নেই।
এ বিষয়টি আল্লাহ তা’য়ালা আল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। যেমন (ক) ইরশাদ হয়েছে : আর আপনি যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন এবং আপনি সে সম্পর্কে কুরআন থেকে যাই তিলাওয়াত করেন এবং তোমরা সে আমলই করনা কেন, আমি তোমাদের সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও। আর আসমানসমূহ ও জমিনের অনু পরিমাণও প্রতিপালকের দৃষ্টির বাইরে নয় এবং তাঁর চেয়ে ক্ষুদ্রতর বা বৃহত্তর কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস : ৬১)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : আপনি কি লক্ষ্য করেন না যে, আসমান সমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে আল্লাহপাক তা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোনো গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মাঝেও হয় না যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। তাঁরা-এর চেয়ে কম হোক বা বেশি হোক তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন; তারা যেখানেই থাকুক না কেন। তারপর তারা যা করে, তিনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহপাক সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা আল মুজাদালাহ : ৭)।
আর আল্লাহপাকের সাথে সঙ্গ ও বন্ধুত্বের দ্বিতীয় অবস্থাটি শুধুমাত্র মুমিনদের জন্য বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট। এসঙ্গ বা বন্ধুত্বের অর্থ হলো সাহায্য, সহযোগিতা ও তাওফিক দান করা। ঈমানদারগণ আল্লাহর সান্নিধ্য ও সঙ্গ দ্বারা ধন্য হওয়ার কথা আল্লাহপাক আল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিবৃত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা মুহসিন তথা নেক আমলকারী। (সূরা নাহ্ল : ১২৮)।
আলোচ্য আয়াতসমূহের সারমর্ম এই যে, আল্লাহ তা’য়ালার সাহায্য তাদের সঙ্গে থাকে, যারা দুটি গুণে গুণান্বিত। তাকওয়া ও ইহসান। তাকওয়ার অর্থ হারাম কাজ পরিত্যাগ করা এবং ইহসানের অর্থ সৎকাজ করা। অর্থাৎ যারা শরীয়তের অনুসারী হয়ে নিয়মিত হারাম কাজ পরিত্যাগ করে, ও সৎ কর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহপাক তাদের সঙ্গে আছেন। আল্লাহপাক যার সহায় তার অনিষ্ট সাধন করার সাধ্য কারোও নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন