শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শ্রমিকরা ভুল স্বীকার করলেই খুলবে গার্মেন্টস থমথমে আশুলিয়া, ৭৫০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব রিপোর্টার : শ্রমিকরা ভুল স্বীকার করে ফিরে আসলেই খুলবে আশুলিয়ায় বন্ধ করে দেয়া গার্মেন্ট কারখানাগুলো। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আশুলিয়ায় প্রায় ৭৫০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ৭ শ্রমিক নেতাসহ ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায়। আটক এড়াতে অনেক শ্রমিক ঢাকা ছাড়ছেন।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ‘র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সমাধানের বিষয়টি সরকার দেখছে। তবে শ্রমিকদের অনুধাবন করতে হবে, তারা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে। এটা ভেবে যদি কারখানা মালিক পক্ষের কাছে ভুল স্বীকার করে তাহলে গার্মেন্টস খুলে দেয়া হবে। এছাড়া যে সব কারখানার কিছু শ্রমিকদের বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা যড়যন্ত্রের সাথে জড়িত বলেই শাস্তি দেয়া হয়েছে।
গতকাল হা-মীম কারখারার পক্ষ থেকে পাঁচ শতাধিক শ্রমিককে আসামি করে মামলা হয়েছে। এছাড়া ৭ শ্রমিক নেতাসহ মোট ১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে ৮৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। এ আন্দোলনে উস্কানির অভিযোগে গতকাল সন্ধ্যায় সাভার এলাকায় থেকে পুলিশ আশুলিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ওই থানার মহিলা দলের সভানেত্রী মিনি আক্তার উর্মীকে আটক করে।
আটকদের মধ্যে সাত শ্রমিক নেতার পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তারা হলেনÑ গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সৌমিত্র কুমার দাশ, গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আল কামরান, সাধারণ সম্পাদক শাকিল ও বাংলাদেশ তৃণমূল গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শামীম খান, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির (বিসিডাব্লিউএস) আশুলিয়ার সংগঠক মো. ইব্রাহিম ও টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের আহ্বায়ক মো. মিজান।
এর আগে বুধবার উইন্ডি অ্যাপারেলস লিমিটেড ও ফাউনটেইন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ২৪৯ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে ‘উস্কানি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করে। এছাড়া বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ১২১ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে উইন্ডি কর্তৃপক্ষ। গতকাল আবার নতুর করে অন্য একটি কারখানায় আরও ১৩৫ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শ্রমিক নেতার আটকের বিষয়ে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসিনুল কাদির জানান, গত নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখে শিল্পাঞ্চলের জামগড়া ফ্যান্টাসী কিংডমের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নেতা সৌমিত্র কুমার দাস এক গণসমাবেশের আয়োজন করেন। বাংলাদেশ তৃণমূল গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা শামীম খান ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের রফিকুল ইসলাম সুজন মিলে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে গোপনে আশুলিয়ার বেরন এলাকায় আরও একটি সমাবেশ করে। পাশাপাশি তারা ২০টি দাবি উল্লেখ করে শ্রমিকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে। এছাড়া স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের আল-কামরান ও শাকিল আহমেদের নেতৃত্বে চলমান অসন্তোষের মধ্যে ১৬টি দাবি উল্লেখ করে শিল্পাঞ্চলে লিফলেট বিতরণ করে শ্রমিকদের উস্কিয়ে দেয়। এই সকল কর্মকা- পরিচালনাসহ চলমান শ্রমিক অসন্তোষের সাথে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে।  
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পোশাক কারখানায় নাশকতার চেষ্টাকারী শ্রমিকরা কোনো গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি পাবে না। ইতোমধ্যেই তিনটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। যারা সমস্যা তৈরি করছে অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরকে যে কোনো সময় আটক করা হবে।
গতকাল এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমি চেয়েছিলাম কারখানা চালু হোক। তারপর সবাই মিলে শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান করব। তবে শ্রমিকরাও তাদের কথা রাখেননি। নৌমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা তাদের কথা রাখেনি।
বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেছেন, অদৃশ্য কোনো শক্তি হিসেবে পেছন থেকে এক শ্রেণি কলকাঠি নাড়ছে। সবচাইতে বড় কথা হলো এভাবে যড়ষন্ত্র চলতে থাকলে এ শিল্পের ইমেজের মারাত্মকভাবেই প্রভাবিত হবে। এখন বাংলাদেশ থেকে অন্য কোথাও এই ব্যবসা নেয়া যায় কি’না এটা অনেকেই ভাববে। আমাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। যাতে সবচাইতে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমিক ভাই ও বোনেরা। তাদের অর্থনীতির চাকা কি করে ঘুরবে। এটা তাদের আগে বুঝতে হবে। তিন আরো বলেন, নতুন কোনো ফ্যাক্টরি আশুলিয়ায় করতে দেব না। আর যদি এমন চলতেই থাকে। তবে আমরা ধীরে ধীরে আশুলিয়া থেকেই কারখানা গুটিয়ে নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হবো। এতদিন বাংলাদেশকে ভাবা হতো চায়না প্লাস ওয়ান। এভাবে চলতে থাকলে দেশ থেকে শিল্প চলে যাবে অন্য দেশে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
sahabuddin ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:২২ এএম says : 0
আমি চাকরী করতে চাই
Total Reply(0)
Sha Alam ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:২৬ এএম says : 0
ar akta somadhan howa joruri
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৭:২৩ এএম says : 0
আমি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। যারা শ্রমিকদেরকে ক্ষেপিয়ে দেশে অরাজগতা করতে চেয়েছিল তাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ। দেশ এখন উন্নতির দিকে ধাবমান এসময়ে উন্নয়ন কাজ কর্মে ব্যাঘাত শৃষ্টি করা কোন ভাবেই সহ্য করা যাবে না। সবসময় আমরা শ্রমিকদেরকেই সমর্থন দিয়ে থাকি তারপরও তাদের এই সংগ্রাম কেন??? এসবের মূল হোতা হচ্ছে শ্রমিক নেতা। আল্লাহ্‌ যাহা ভাল মনে করেন তাহাই আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে এটাই সত্য। আমীন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন