আল্লাহ তা’আলা এ উম্মতকে মধ্যপন্থি উম্মত বানিয়েছেন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : এভাবেই আমি তোমাদেরকে বানিয়েছি মধ্যপন্থি উম্মত, যাতে তোমরা (কিয়ামতের দিন) মানুষ সম্পর্কে সাক্ষী হতে পার (সূরা বাকারা : ১৪৩)। সাক্ষীর জন্য মধ্যপন্থি ও পরিমিতিবোধসম্পন্ন হওয়া অপরিহার্য। কেননা তার সাক্ষ্য অনুযায়ী বিচারক রায় দিয়ে থাকে। সে যদি তার দেখা ঘটনার যথাযথ বিবরণ না দেয়, উভয়পক্ষের মাঝখানে না থেকে কোনো একদিকে ঝুঁকে পড়ে এবং সে অনুযায়ী বর্ণনায় হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায় বা দোষ-গুণ বাড়িয়ে-কমিয়ে বলে, তবে ন্যায়বিচার সম্ভব হয় না; বরং নির্দোষ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয় ও দোষী ব্যক্তি খালাস পেয়ে যায় কিংবা লঘুদোষে গুরুদণ্ড বা গুরুদোষে লঘুদণ্ড হয়ে যায়। পরিণামে সমাজে জোর-জুলুম ও অন্যায়-অনাচারের পথ খুলে যায়। সুতরাং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সাক্ষীর নিরপেক্ষ হওয়া ও পরিমিতিবোধের পরিচয় দেয়া অপরিহার্য।
এই যে নিরপেক্ষতা, সবকিছুর ঠিক মাঝখানে অবস্থান করা ও বিশেষ কোনো দিকে ঝুঁকে না পড়া, এক আয়াতে এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ উম্মত তার সবকিছুতে পরিমিতিবোধের পরিচয় দেবে। কোনো ক্ষেত্রে প্রান্তিকতার পরিচয় দেবে না। বাড়াবাড়ি করবে না ও শৈথিল্যের পরিচয় দেবে না। তা করলে সে নিজ বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলবে। অন্যদের মত প্রান্তিক ও একরোখা সম্প্রদায়ে পরিণত হবে, যেমন ইহুদি, খ্রিস্টান প্রভৃতি সম্প্রদায়। উম্মত যাতে তার এ বৈশিষ্ট্য না হারায় তাই সকল কাজে তাকে এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, বাড়াবাড়ি করো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড় এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা করো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।’ (সহীহ বুখারী : ৬৪৬৩)।
মানুষের পরম গন্তব্যে পৌঁছার মহাসড়ক হল দীনে-ইসলাম। এ দীন আদ্যোপান্ত দুই প্রান্তিকতার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। কোনো জায়গাতেই তা দিকবিশেষে সরে যায়নি। এ ছাড়া যত পথ আছে সবই প্রান্তিকতা দোষে দুষ্ট। তার অনুসরণ মানুষকে একরোখা করে তোলে ও পাপের পথে ধাবিত করে। পরিণামে মানুষ তার পরম গন্তব্য থেকে দূরে সরে যায়। এভাবে জীবন হয়ে যায় ব্যর্থ। সে ব্যর্থতা থেকে বাঁচতে হলে তথা জীবনকে স্বার্থক ও পুণ্যময় করে তুলতে হলে তার একমাত্র উপায় মধ্যপন্থার ধর্ম ইসলামের অনুসরণ।
ইসলামের যথাযথ অনুসরণ সকল ক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করে। কেননা ইসলাম তার শিক্ষার প্রত্যেকটি ধারায় মধ্যাবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখেছে। ‘আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী, আখলাক-চরিত্র, আচার-ব্যবহার, আয়-ব্যয়, লেনদেন সবকিছুতেই তার এ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান’।
সুতরাং ইসলামের প্রকৃত অনুসারী তার জীবনের সব ক্ষেত্রে হবে মধ্যপন্থারই প্রতিকৃতি। সেজন্য প্রথমেই তাকে ইসলামের প্রতিটি বিষয় গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং কোনো বিষয়ে ঠিক কী নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে সে দিকে লক্ষ্য রেখে পথ চলতে হবে। যাতে কোনো ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি বা শিথিলতাজনিত প্রান্তিকতা ইসলামী জীবনের এ অনন্য বৈশিষ্ট্যকে নস্যাৎ করতে না পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন