বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এবং অন্যান্য নবী রাসূলগণ (আ.) পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তিতে কবরদেশে জীবিত আছেন। তাঁদের এ জীবন বারযাখী, অনুভূতি সম্পন্ন ও দৈহিক জীবন বটে। এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) যারা আল্লাহর পথে মরণ বরণ করেন, তাঁদেরকে সাধারণ মৃত বলোনা। বরং তাঁরা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা পুরোপুরী অনুধাবন করতে পারো না। (সূরা বাকারাহ : ১৪৫)।
(খ) আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণকারীদেরকে তোমরা মৃত ভেবোনা, বরং তাঁরা প্রতিপালক আল্লাহর সান্নিধ্যে জীবিত, রিজিকপ্রাপ্ত। (সূরা আলে ইমরান : ১৬৯)। (গ) যখন তারা (উম্মতেরা) নিজেদের ওপর জুলুম করে আপনার নিকট উপস্থিত হয়, অনন্তর আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার করে এবং রাসূল (সা.) ও তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবে তাঁরা অবশ্যই আল্লাহপাককে তওবাহ কবুলকারী ও অতীব দয়ালু পাবে। (সূরা নিসা : ৬৪)।
হাদীস শরীফেও এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিবরণ বিবৃত আছে। (ক) হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : নবীগণ তাদের কবরে জীবিত আছেন, নামাজ আদায় করেন। (মুসনাদে আবু ইয়া’লা : ৩/২১৬)।
(খ) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) বলেন : নবীগণের হায়াতের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। কেননা নবীগণ শহীদগণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর শহীদগণ তো তাঁদের প্রতিপালকের নিকট জিন্দা আছেন। সুতরাং নবীগণ তো প্রশ্নাতীতভাবেই জিন্দা থাকবেন। (উমদাতুল ক্বারী : ১১/৪০২)। (গ) শহীদগণ যেহেতু নকলি দলিলের (আল কুরআনের) ভিত্তিতে জীবিত প্রমাণিত, আল কুরআনে যার সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে, সুতরাং নবীগণ ও জীবিত থাকবেন। কারণ তাঁরা শহীদগণ হতে উত্তম। (ফাতহুল বারী শরহে-বুখারী : ৬/২৮৮)।
(ঘ) নবীগণ কবরে জীবিত ও নামাজরত আছেন, এ হাদীস সম্পূর্ণ সহীহ। (মিরকাত শরহে মিশকাত : ২/২৬১)। (ঙ) হাদীসে প্রমাণিত যে, নবীগণ কবরে জীবিত আছেন। ইমাম বায়হাকী ও ইমাম মুনজেরী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নাইলুল আওতার : ৩/২৬১)
(চ) নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (সা.) ওফাতের পর কবরদেশে জীবিত আছেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য নবী রাসূলগণ ও শহীদদের চেয়েও পূর্ণ হায়াতে জীবিত আছেন। যাদের সম্পর্কে আল্লাহপাক স্বীয় পবিত্র কিতাবে সংবাদ দিয়েছেন। (ওফাউল ওয়াফা : ২/৪০৫)। (ছ) নবীগণের কবরদেশে জীবিত থাকার প্রমাণাদি দাবি করে যে, তাঁরা দুনিয়ার পার্থিব জীবনের মতোই দৈহিকভাবেই জীবিত আছেন। তবে তাঁরা পানাহারের মুখাপেক্ষী নন। (ওয়াফাউল ওয়াফা : ২/৪০৮)।
বিশ্ব নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ও অন্যান্য নবী রাসূলগণের কবর পার্শ্বে দাঁড়িয়ে কোনো ব্যক্তি সালাত-সালাম পাঠ করলে তাঁরা নিজে তা শ্রবণ করেন এবং উত্তর দিয়ে থাকেন। এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া, তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর সহধর্মিনীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য আদৌ বৈধ নয়, নিশ্চয়ই তোমাদের উক্তরূপ কাজ করা আল্লাহর নিকট বড় অপরাধ। (সূরা আল আহযাব : ৫৩)।
এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, নবী পত্নীদের বিবাহ নবীর ইন্তেকালের পরও সঠিক ও অক্ষুণ্ন্ন থাকে। (শারহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব : ৫/৩৩৪)। নবী পত্নীদের কোনো ইদ্দত নেই। কেননা নবী কবরে জীবিত। অনুরূপ সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম। (মিরকাত : ১১/২৫৬)।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : কোনো ব্যক্তি আমার উপর সালাম প্রেরণ করলে আমার রূহ আল্লাহপাক ফেরত দেন। (সুনানু আবি দাউদ : ১/২৮৬)। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার কবর পার্শ্বে এসে সালাম জানায় আমি তা শ্রবণ করি। আর যে দূর হতে সালাত ও সালাম জানায়, তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। (কানজুল উম্মাল ১১/৪৯১)।
মোটকথা, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও অন্যান্য নবী রাসূলগণ কবরে যে জীবন লাভ করেছেন তা এত শক্তিশালী ও পার্থিব হায়াতের সমতুল্য যে অনেক জাগতিক হুকুম ও তাদের ওফাতের পর কবরদেশে থাকাকালীন তাঁদের ওপর প্রযোজ্য হয়। যেমন নবী পত্নীদের বিবাহ অবৈধ হওয়া, নবীর সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন না হওয়া, সালাম প্রদানকারীদের সালাম শ্রবণ করা ইত্যাদি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন