প্রতিবেশী, মানবসমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ফলে ইসলামে প্রতিবেশীর হককে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে এত বেশি তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে মিরাছের অংশিদার বানিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী : ৬০১৪)। কিন্তু আজকাল এ বিষয়ে আমাদের মাঝে চরম অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে শহরের মানুষের মাঝে। বছরের পর বছর পার হয় পাশের বাড়ির কারো সাথে কোনো কথা হয় না, খোঁজ খবর নেয়া হয় না; বরং বিভিন্নভাবে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া হয়। অথচ প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ ও তাকে কষ্ট না দেয়াকে ঈমানের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে। (সহীহ মুসলিম : ১৮৫)।
প্রতিবেশী কে? প্রতিবেশী বলতে মুসলিম, কাফের, নেক বান্দা, ফাসেক, বন্ধু, শত্রু, পরদেশী, স্বদেশি, উপকারী, ক্ষতিসাধনকারী, আত্মীয়, অনাত্মীয়, নিকটতম বা তুলনামূলক একটু দূরের প্রতিবেশী সবাই অন্তর্ভুক্ত। আর প্রতিবেশী সাধারণত তিন শ্রেণির হয়ে থাকে এবং তাদের হকও বিভিন্ন দিকে লক্ষ করে কম বেশি হয়ে থাকে।
১. যার এক দিক থেকে হক থাকে। সে হল, অনাত্মীয় বিধর্মী প্রতিবেশী। এ ব্যক্তির হক শুধু প্রতিবেশী হওয়ার ভিত্তিতে। ২. যার দুই দিক থেকে হক থাকে। সে হল, মুসলিম প্রতিবেশী, যার সাথে আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যক্তির হক প্রতিবেশী এবং মুসলিম হওয়ার দিক থেকে।
৩. যার তিন দিক থেকে হক থাকে। সে হল, মুসলিম আত্মীয় প্রতিবেশী। এ ব্যক্তির হক প্রতিবেশী, মুসলিম ও আত্মীয় হওয়ার দিক থেকে। তবে প্রত্যেক শ্রেণিই যেহেতু প্রতিবেশী তাই প্রতিবেশীর সকল হকের ক্ষেত্রে সবাই সমান হকদার। আর প্রতিবেশীর খোঁজ খবর রাখা, বিপদে-আপদে এগিয়ে যাওয়া, একে অপরের সুখ-দুঃখের শরিক হওয়া, হাদিয়া আদান-প্রদান করা, সেবা-শুশ্রƒষা করা, প্রতিবেশীর কেউ মারা গেলে সান্ত্বনা দেয়া, কাফন-দাফনে শরিক হওয়া, একে অপরের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়া, প্রতিবেশীর প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়া, প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ হয় এমন সব ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি সবই একজন মুমিনের স্বভাবজাত বিষয় হওয়া উচিত।
আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনুল কারীমে সূরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহর ইবাদাত ও তার সাথে কাউকে শরিক না করা, এই বিধানের সাথে উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের হক। তার মধ্যে রয়েছে মাতা-পিতার হক, আত্মীয়-স্বজনের হক, এতীমের হক ইত্যাদি। এসব গুরুত্বপূর্ণ হকের সাথেই আল্লাহ প্রতিবেশীর হককে উল্লেখ করেছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, প্রতিবেশীর হককে আল্লাহ কত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তা রক্ষা করা আমাদের জন্য কত জরুরি।
আল্লাহ বলেছেন : তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং কোনো কিছুকে তার সাথে শরিক করো না। এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতীম, অভাবগ্রস্থ, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।
উত্তম প্রতিবেশী কে? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো, যে প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ করে এবং প্রতিবেশীর সকল হক যথাযথভাবে আদায় করে। ফলে প্রতিবেশী তার ওপর সন্তুষ্ট থাকে এবং আল্লাহ্ও তার ওপর সন্তুষ্ট থাকেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন যে, স্বীয় প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে ভালো সেই সর্বোত্তম প্রতিবেশী। (সহীহ ইবনে খুযাইমা : ২৫৩৯)।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ওই ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা : ২৬৯৯)। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, অনেক প্রতিবেশীই এমন আছে, যাদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তারা অভাবে দিন কাটাচ্ছে। আবার আমার কাছে কখনো চাইবেও না। কুরআন মাজীদে এদেরকে ‘মাহরূম’ বলা হয়েছে, সূরা যারিয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, অর্থ এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও মাহরূমের (বঞ্চিতের) হক। (সূরা যারিয়াত : ১৯)।
এক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য, নিজে থেকে তাদের খোঁজ খবর রাখা এবং দেয়ার ক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা, যাতে সে লজ্জা না পায়। এজন্যইতো জাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে এটা বলে দেয়া জরুরি নয় যে, আমি তোমাকে জাকাত দিচ্ছি; বরং ব্যক্তি জাকাতের যোগ্য কি না এটুকু জেনে নেয়াই যথেষ্ট।
আর আমি প্রতিবেশীর প্রয়োজন পুরা করব তাহলে আল্লাহ আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন এবং আমার সহায় হবেন। হাদীস শরীফে এসেছে, যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরা করে আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরা করেন। (সহীহ বুখারী : ২৪৪২)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন