মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

খেয়ানতের বিভিন্ন রূপ : যা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি-১

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আমানত। যা ছাড়া ঈমানই পূর্ণ হয় না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার মধ্যে আমানত নেই তার ঈমান নেই। (মুসনাদে আহমাদ : ১২৩৮৩)। ঈমানের অপরিহার্য দাবি, আমানত ও বিশ্বস্ততা। ঈমানদার হবে আমীন ও বিশ্বস্ত, নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন। যার ভেতর ও বাহির অভিন্ন। খেয়ানতকে হাদীসে মুনাফেকের নিদর্শন বলা হয়েছে। আমানত ও খেয়ানতের বিষয়টি ইসলামে অনেক বিস্তৃত। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এখানে খেয়ানতের কিছু দিক পেশ করা হল।

মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, মেধা-প্রতিভা সবই আল্লাহর অনন্য দান ও আমানত। তাই সুস্থ ও স্বচ্ছ বিবেকের দাবি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে সমর্পিত হওয়া। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সকল বিধানকে শিরোধার্য করা। অন্যথা-এর চেয়ে বড় খেয়ানত আর কী? কুরআন কারীমে এটিকে খেয়ানত আখ্যা দিয়ে ইরশাদ হয়েছে : (হে নবী!) তারা যদি আপনার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গের ইচ্ছা করে থাকে, তবে তারা তো ইতঃপূর্বে আল্লাহর সঙ্গেও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে, যার পরিণামে আল্লাহ তাদেরকে (আপনাদের) আয়ত্তাধীন করেছেন। বস্তুত আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল : ৭১)।

ছোট হোক আর বড়, প্রতিটি গোনাহই খেয়ানত। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনে-শুনে নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না। (সূরা আনফাল : ২৭)। আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহ.) বলেন, আয়াতের প্রেক্ষাপট যাই হোক, ‘খেয়ানত’ এখানে ব্যাপকার্থে। ছোট-বড়, সংক্রামক ও অসংক্রামক, সকল গোনাহই এখানে শামিল। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৪১)।

কুরআন কারীমে কুদৃষ্টিকে চোখের খেয়ানত বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ জানেন চোখের অসাধুতা এবং বুকের ভেতরের গুপ্ত বিষয়। (সূরা মু’মিন : ১৯)। এখানে চোখের খেয়ানতের কথা বলা হয়েছে। আসলে কেবল চোখ নয়, আল্লাহর দেওয়া প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই আমানত। কোনো অঙ্গ আল্লাহর নাফরমানীতে ব্যবহার করা উক্ত আমানতের খেয়ানত।

প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করা গুরুতর অপরাধ এবং চরম খেয়ানত। বিষয়ের বিবেচনায় সেই অপরাধের মাত্রা বাড়তেও থাকে। ওয়াদা যদি হয় আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের সঙ্গে, তো-এর চেয় বড় খেয়ানত আর কী হতে পারে? আহলে কিতাবরা এমনই করেছিল। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : তারপর তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণেই তো আমি তাদেরকে আমার রহমত থেকে বিতাড়িত করি ও তাদের অন্তর কঠিন করে দেই। তারা (তাওরাতের) বাণীসমূহকে তার আপন স্থান থেকে সরিয়ে দেয় এবং তাদেরকে যে বিষয়ে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তার একটি বড় অংশ ভুলে যায়। (সূরা মায়িদা : ১৩)।

এরপর আল্লাহ বলেন : (ভবিষ্যতেও) আপনি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলেরই কোনো না কোনো খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতার কথা জানতে থাকবেন। সুতরাং (এখন) তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহ্সানকারীদের ভালবাসেন। (সূরা মায়িদা : ১৩)।
অর্থাৎ খেয়ানত তাদের পুরোনো চরিত্র। তবে এখনই আপনাকে এই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না যে, সমস্ত বনী ইসরাঈলকে সমষ্টিগতভাবে কোনো শাস্তি দেবেন। সময় যখন হবে, আল্লাহ নিজেই তাদেরকে শাস্তি দেবেন। এই আয়াতে ওয়াদা ভঙ্গ করাসহ কয়েকটি গুরুতর গোনাহর পর ‘খায়িনা’ শব্দ উল্লেখিত হয়েছে। কারণ প্রতিশ্রæতি ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ভঙ্গ করা নেহায়েত গাদ্দারি ও অনেক বড় খেয়ানত।

অন্যায় ও মিথ্যার সহায়তা বা পক্ষপাতিত্ব করা খেয়ানত। এমনকি কারো দাবির বৈধতা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার পক্ষে সাক্ষ্য বা সাফাই গাওয়াও এক ধরনের খেয়ানত। কুরআন কারীমে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : আর আপনি খেয়ানতকারীদের পক্ষাবলম্বনকারী হবেন না। (সূরা নিসা : ১০৫)।

আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন : আর যারা নিজেদের সঙ্গেই খেয়ানত করে আপনি তাদের পক্ষে বাক-বিতÐা করবেন না। আল্লাহ কোনো খেয়ানতকারী পাপিষ্ঠকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা : ১০৭)। অন্যায়ের পক্ষপাতিত্ব যেমন হতে পারে ব্যক্তির ক্ষেত্রে, হতে পারে নির্দিষ্ট গোত্র বা দলের ক্ষেত্রেও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন