শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

খেয়ানতের বিভিন্ন রূপ : যা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি-২

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

যোগ্য লোকের নিপুণ হাত ছাড়া কোনো কাজই সুন্দর ও সুচারু হয় না। অতএব যে কোনো কাজের দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্য, দক্ষ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দেয়া উচিত। দুর্বল বা অযোগ্য ব্যক্তির কাঁধে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সকলেরই ক্ষতি। প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু যর (রা.) বলেন, একদিন আমি নবীজী (সা.) কে বলেছিলাম, আপনি কি আমাকে প্রাদেশিক গভর্নর বানাবেন? তখন নবীজী হাত দিয়ে আমার বুকে একটা (মৃদু) থাপ্পড় দিয়ে বললেন : আবু যর! তুমি দুর্বল আর এটি আমানত। কিয়ামতের দিন এটি মানুষের লজ্জা ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। হাঁ, দায়িত্বটাকে যে ভালোভাবে গ্রহণ করবে এবং অর্পিত দায়িত্বের হক যথাযথ আদায় করবে সে বেঁচে যাবে। (সহীহ মুসলিম : ১৮২৫)।

ইমাম নববী (রাহ.) বলেন, দায়িত্বের আকাক্সক্ষা থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটি অনেক বড় মূলনীতি। বিশেষত দায়িত্ব আদায়ে যাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে, তাদের জন্য রয়েছে এখানে অনেক শিক্ষা। দায়িত্ব গ্রহণ বা প্রদান হালকা কোনো বিষয় নয়। অযোগ্যের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়া অনেক বড় খেয়ানত। নবীজী বলেছেন, এটি কিয়ামতেরও আলামত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূল (সা.) সবাইকে নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন এক গ্রাম্যলোক এসে প্রশ্ন করল, কিয়ামত কবে?

নবীজী তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলেন। এতে উপস্থিত অনেকের ধারণা হয়েছিল, নবীজী তার প্রশ্ন শুনেও জবাব দেননি। কারণ অপছন্দ করেছেন। আবার কারো কারো মনে হয়েছিল, নবীজী সম্ভবত তার কথা শুনতেই পাননি! আলোচনা শেষ হওয়ার পর রাসূল (সা.) খোঁজ করলেন কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়?

লোকটি বলল, এই যে আমি! তখন নবীজী (সা.) বললেন, আমানত যখন নষ্ট হওয়া শুরু হবে; তখনই কিয়ামতের অপেক্ষা করো! লোকটি বলল, আমানত আবার নষ্ট হয় কীভাবে? রাসূল (সা.) বললেন : অযোগ্য ব্যক্তির কাছে যখন দায়িত্বভার তুলে দেয়া হবে তখনই কিয়ামতের অপেক্ষা কর। (সহীহ বুখারী : ৫৯)।
জীবন চলার পথে সুখে-দুঃখে ও বিভিন্ন প্রয়োজনে একে-অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। অনেক সময় পরামর্শেরও প্রয়োজন হয়। দেখা যায়, সময়মতো সুন্দর একটি পরামর্শের দাম লাখ টাকার চেয়েও বেশি। তেমনি একটি ভুল পরামর্শ ডেকে আনতে পারে বিরাট ক্ষতি। কাজেই পরামর্শদাতাকে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি তার ভাইকে কোনো বিষয়ে পরামর্শ দিলো, অথচ সে জানে কল্যাণ-এর বিপরীতে, তবে সে তার সঙ্গে খেয়ানত করল। (সুনানে আবু দাউদ : ৩৬৫৭)।

আবু হুরায়রা (রা.) নবীজী থেকে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন : যার কাছে কোনো বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হয় সে আমানতদার। (জামে তিরমিজী : ২৩৬৯)। হযরত মাওলানা মনযুর নুমানী (রাহ.) বলেন, যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় পরামর্শ গ্রহণকারী তাকে নির্ভরযোগ্য মনে করেই তো তার কাছে যায়। নিজের একটি আমানত তার কাছে সোপর্দ করে। অতএব তার উচিত, আমানতের হক আদায়ে ত্রæটি না করা। অর্থাৎ ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করেই তাকে কল্যাণমূলক পরামর্শ দেয়া এবং বিষয়টির গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করা। অন্যথায় সে এক ধরনের খেয়ানতের অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। (মাআরিফুল হাদীস ২/১৫১ (২১০)।

একজন আমার প্রতি পূর্ণআস্থার সঙ্গে আমার কথা শুনছে বা আমার দেয়া তথ্য গ্রহণ করছে, কারণ আমি একজন মুসলিম। অথচ তার সঙ্গে বলা হল মিথ্যা, অথবা চালিয়ে দেয়া হল মিথ্যা তথ্য। এটি তার সঙ্গে বিশ^াসঘাতকতা নয় তো কী? উপরন্তু এটি নিজের ব্যক্তিত্বকেও তো প্রশ্নবিদ্ধ করে। হাদীসে একে অনেক বড় ‘খেয়ানত’ বলা হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে : এটা অনেক বড় খেয়ানত যে, তুমি তোমার ভাইকে কোনো কথা বলছ, সে এটাকে সত্য বলে বিশ^াস করে নিচ্ছে, অথচ তুমি এতে মিথ্যাবাদী। (মুসনাদে আহমাদ : ১৭৬৩৫)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন