স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক ও একান্ত বিষয়াদি অন্যের নিকট প্রকাশ করা খেয়ানত। প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট যে আমানতের খেয়ানত সবচেয়ে বড় বলে গণ্য হবে তা এই যে, কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়, স্ত্রীও স্বামীর সাথে মিলিত হয়, তারপর (স্বামী-স্ত্রীর) একান্ত বিষয়গুলো অন্যদের কাছে প্রকাশ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম : ১৪৩৭)।
এমন অনেক হয় আমাদের মাঝে, কেউ একটা কথা বলেছে। মুখে হয়তো কাউকে জানানোর জন্য নিষেধ করেনি, কিন্তু তার ভাব-ভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে, সে চায় না কথাটি অন্যরা জানুক, তাহলে তার কথাটি আমানত স্বরূপ থাকবে এবং আমাকে আমানতের মতোই এর হেফাজত করতে হবে। নতুবা খেয়ানত হবে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : যখন কোনো ব্যক্তি কারো কাছে কিছু বলার সময় এদিক-ওদিক তাকায়, তখন এ কথা শ্রোতার জন্য আমানত হয়ে যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ২৬১১১)।
তবে হ্যাঁ, সেটি যদি অন্য কারো হক নষ্ট, ষড়যন্ত্র বা ক্ষতি সাধনমূলক কিছু হয়, তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই জানিয়ে দেয়া জরুরি। নবীজী (সা.) সেই নির্দেশও দিয়েছেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : সকল মজলিস আমানতস্বরূপ। (অর্থাৎ কোনো মজলিসে গোপনীয়তার সাথে যে পরামর্শ অথবা সিদ্ধান্ত হয়, মজলিসে উপস্থিত লোকজন যেন এটাকে আমানত মনে করে গোপন রাখে।) কিন্তু তিনটি মজলিসের বিধান-এর ব্যতিক্রম ।
এক. যে মজলিসের সম্পর্ক কারো অন্যায় হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে। দুই. যে মজলিসে কারো সম্ভ্রমহানির পরামর্শ করা হয়। তিন. যে মজলিসের সম্পর্ক অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ কেড়ে নেওয়ার সাথে। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৬৯)। বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া কারো ছবি তুলে ছড়িয়ে দেয়া বা বয়ান রেকর্ড করে প্রচার করে দেয়ার মতো কাজগুলোও খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত।’ (বিস্তারিত দ্র. ইসলাহী খুতুবাত, খÐ-৩; ইসলাম ও আমাদের জীবন ৭/৬৩, ৬৭)।
এছাড়াও আরো বহুভাবে আমানতের খেয়ানত হতে পারে। হযরত তাকী উসমানী দা. বা. বলেন, চাকরির নির্ধারিত সময়ে অন্য কাজ করা, পদ-পদবি ও দাফতরিক দায়িত্বে অবহেলা, অপব্যবহার করা, অফিসের আসবাবপত্র ও সরকারি জিনিসপত্র ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা, সবই খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। তেমনি যে সড়কে আমরা চলাচল করি তা আমাদের কাছে আমানত। যেই বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ করা হয় তাও আমানত। ঘর বা বাসাভাড়া নেওয়া হয়, সেটিও মালিকের পক্ষ থেকে আমানত। কাজেই এসবের ব্যবহার করতে হবে বৈধ উপায়ে। নয়তো খেয়ানতের গোনাহ হবে। (বিস্তারিত দ্র. ইসলাহী খুতুবাত, খ-৩; ইসলাম ও আমাদের জীবন, ৭/৬৩, ৬৭)।
খেয়ানতকারীর সঙ্গেও খেয়ানতসূলভ কাজ করা যাবে না। খেয়ানতের জবাব খেয়ানত দিয়ে দিব না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : যে তোমার কাছে আমানত রেখেছে তার আমানত আদায় করে দাও! যে তোমার সঙ্গে খেয়ানত করেছে তার সঙ্গেও খেয়ানত করো না! (জামে তিরমিজি : ১২৬৪)। আসুন, সব ধরনের খেয়ানত থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি! আল্লাহই তওফীক দেয়ার মালিক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন