বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

‘ইয়াক্কীন’ শব্দের অর্থ ও মর্ম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

মহান রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে ‘ইয়াক্কীন’ শব্দটি তিনটি রূপে সর্বমোট ৮ বার ব্যবহার করেছেন। যথা (১) আল ইয়াকীনু, (২) আল ইয়াকীনি, রূপে ৭বার এসেছে। যথা (ক) সূরা আলহিজর-এর ৯৯ নং আয়াতে। (খ) সূরা আন্নামল-এর ২২ নং আয়াতে। (গ) সূরা আল ওয়াক্কীয়াহ-এর ৯৫ নং আয়াতে। (ঘ) সূরা আলহাক্কাহ-এর ৫১ নং আয়াতে। (ঙ) সূরা আল মুদ্দাচ্ছির-এর ৪৭ নং আয়াতে। (চ) সূরা আত্ তাকাসুর-এর ৫ নং আয়াতে। (ছ) সূরা আত্ তাকাসুর-এর ৭ নং আয়াতে।

(৩) আর ‘ইয়াক্কীনান্’ রূপে (জ) সূরা আন নিসা এর ১৫৭ নং আয়াতে। উল্লেখিত ৮টি আয়াতে ‘ইয়াক্কীন’ শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথা : (ক) নিশ্চিত বিশ্বাস অর্থে এবং (খ) মৃত্যু অর্থে। এ পর্যায়ে আমরা নিরূপন করতে যত্ববান হব যে, নিশ্চিত বিশ্বাস অর্থে ‘ইয়াক্বীন’ শব্দটি আল কুরআনের কোন কোন আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে এবং মৃত্যু অর্থে কোন কোন আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রথমত : ‘ইয়াক্কীন’ অর্থ নিশ্চিত বিশ্বাস। যে বিশ্বাসের মধ্যে কোনোরকম ফাটল বা খুত নেই। সে বিশ্বাস নিখুত, নিরেট ও অবিচল। এই অর্থে ‘ইয়াকীন’ শব্দটি নি¤œলিখিত আয়াতসমূহে এসেছে। যথা : (১) ইরশাদ হয়েছে : আর এটা নিশ্চিত যে, তারা (ইহুদি ও নাসারার দল) তাকে (হযরত ঈসা আ.) কে হত্যা করেনি। (সূরা আন্ নিসা : ১৫৭)। (২) ইরশাদ হয়েছে : কখনো নয়। যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানে জ্ঞানী হতে। (সূরা আত্ তাকাসুর : ৫)। (৩) ইরশাদ হয়েছে : তারপর অবশ্যই তোমরা তা’ দেখবে চক্ষু প্রত্যয়ে। (সূরা আত্ তাকাসূর : ৭)। এটা বিশ্বাসের সর্বোচ্চ স্তর।

(৪) ইরশাদ হয়েছে : আর নিশ্চয় এটা সুনিশ্চিত সত্য। (সূরা আল হাক্কাহ : ৫১)। (৫) ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় এটা সুনিশ্চিত সত্য। (সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ : ৯৫)। (৬) ইরশাদ হয়েছে : কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ এসে পড়ল এবং বলল, আপনি (সুলায়মান (আ.) যা জ্ঞানে পরিবেষ্টন করতে পারেননি আমি তা পরিবেষ্টন করেছি এবং ‘সাবা’ হতে সুনিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি। (সূরা আন্ নামল : ২২)।

দ্বিতীয়ত : ইয়াক্কীন শব্দটি মৃত্যু অর্থে আল কুরআনের নি¤œলিখিত আয়াতে এসেছে। যথা : (৭) ইরশাদ হয়েছে : আর আপনার মৃত্যু আসা পর্যন্ত আপনি আপনার প্রতিপালকের ইবাদত করুন। (সূরা আল হিজর : ৯৯)। এখানে ইয়াকীন শব্দটি মৃত্যু অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। (৮) ইরশাদ হয়েছে : তারা বলবে, আমরা মুসল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, আমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করতাম না, এবং আমরা বিভ্রান্ত আলোচনাকারীদের সাথে বিভ্রান্তিমূলক আলোচনায় নিমগ্ন থাকতাম, আমরা কর্মফল দিন অস্বীকার করতাম, শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে মৃত্যু এসে যায়। (সূরা আল মুদ্দাসসির : ৪৩-৪৭)।

এখানে ৪৭নং আয়াতেও ইয়াক্কীন’ শব্দটি মৃত্যু অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং ‘ইয়াকীন শব্দটি আল্ কুরআন ও হাদীস শরীফে নিশ্চিত জ্ঞান ও বিশ্বাস অর্থে যেমন ব্যবহৃত হয়েছে, তেমনি মৃত্যু অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। হযরত সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ‘ইয়াকীন’ শব্দটির তাফসীর করেছেন : ‘মৃত্যু’। (সহীহ বুখারী : ৪৭০৫)। অনুরূপভাবে হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবী উসমান ইবনে মাযউন (রা.)-এর মৃত্যুর পর তার সম্পর্কে বলেছেন : কিন্তু সে? তার তো ‘ইয়াক্কীন’ তথা মৃত্যু এসেছে। আর আমি তার জন্য যাবতীয় কল্যাণের আশা রাখি। (সহীহ বুখারী : ১২৪৩)।

এতে বুঝা গেল যে, সূরা আল হিজর-এর ৯৯ নং আয়াতে এবং সূরা মুদ্দাসসির এর ৪৭ নং আয়াতে ইয়াক্কীন শব্দটি মৃত্যু অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। আর এ অর্থই সমস্ত মুফাসসেরীনদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। সে হিসেবে প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করে যেতে হবে। যদি কাউকে ইবাদত থেকে রেহাই দেয়া হত, তাহলে নবী রাসূলগণ তা থেকে রেহাই পেতেন। কিন্তু তারাও তা থেকে রেহাই পাননি। যেহেতু পাননি সেহেতু এটা সুনিশ্চিত যে, একদিন মৃত্যু এসে তাদেরকে পাকড়াও করবেই এবং মৃত্যুর হীম শীতল পরশ হতে কিছুতেই তাদের রেহাই মিলবে না।

আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : (ক) জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; কেবল কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)। (খ) জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। (সূরা আল আম্বিয়া : ৩৫)। (গ) জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী, তারপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আল আনকাবুত : ৫৭)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন