বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের অনুপম চর্চায় আলোকিত হয়ে উঠুক আমাদের সমাজ-১

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৬ এএম

অষ্টম হিজরি সনের কথা। নবী কারীম (সা.) মক্কা বিজয় করেছেন। মদিনায় ফিরতে ফিরতে আরো দু’টি য্ুদ্ধ সংঘটিত হয়ে যায়। হুনাইন ও তায়েফ যুদ্ধ। হুনাইন যুদ্ধে বিপুল গনিমত মুসলমানদের হস্তগত হয়। মক্কার মুশরিকদের মাঝে কেবল যারা মুসলমান হয়েছেন, মূলত ইসলামের শৌর্যবীর্যে প্রভাবিত হয়েই তারা নবীজীর সঙ্গ দেন। ঈমানী তরবিয়ত তখনও ওভাবে হয়ে ওঠার সুযোগ হয়নি তাদের।

ইসলামের প্রতি তাদের অন্তর এখনও ওভাবে জমে বসেনি। তাই অন্যান্য যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টনে নবীজী যেই রীতি রক্ষা করতেন এবার তা থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম করলেন। এসকল নতুন মুসলমান, যারা কিছুক্ষণ পূর্বেও অভিজাত মুশরিক ছিল, তাদের মাঝে নবীজী সেগুলো অধিকহারে বণ্টন করতে থাকলেন। যাতে এ সৌজন্যে মুগ্ধ হয়ে তারা ইসলামের প্রতি আরো আকর্ষণ বোধ করেন।

যেহেতু স্বাভাবিক রীতি বহিভর্‚ত ছিল এ বণ্টন, তাই মুনাফিক শ্রেণির কেউ কেউ একে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেয়। তারা ছড়িয়ে দেয়, এটা তো ইনসাফপূর্ণ বণ্টন হলো না। সাধারণ সরল মনের কিছু মানুষও এহেন অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। নবীজী যখন এ সংবাদ শুনতে পান নিদারুণ মর্মাহত হন। বলেন, আল্লাহর রাসূল যদি ইনসাফ না করেন তবে ইনসাফ আর কে করবে?!

নবীজী সাহাবীদের একত্র করে অত্যন্ত তেজদীপ্ত এবং আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। সীরাত ও সুন্নাহর কিতাবে তা সংরক্ষিত রয়েছে। সেই বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ-বাক্যে রয়েছে উত্তম উপদেশের অপূর্ব দৃষ্টান্ত। সেখানে একটা কথা এমনও ছিল, ‘তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা দুনিয়ার সামান্য উট, ছাগল ইত্যাদি নিয়ে বাড়ি যাবে। আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে ঘরে ফিরবে!’

এমন সব কথায় সাহাবীরা সম্বিত ফিরে পান। নিজেদের ভুলের জন্য তারা অনুশোচিত হন। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসান আর মুহুর্মুহু বলতে থাকেন, আমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সীমাহীন অনুগ্রহ। আমরা আল্লাহর রাসূলকে পেয়েই সন্তুষ্ট। আমাদের আর কিছুর প্রয়োজন নেই।

নবীজীর সে বক্তব্যের একটি অংশ ছিল : হে আনসার সম্প্রদায়! তোমরা কি পথহারা ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে সুপথে পরিচালিত করেছেন? তোমরা কি শতধা বিভক্ত ছিলে না, এরপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে সৌহার্দ্য-স¤প্রীতি দান করেছেন? তোমরা কি নিঃস্ব ছিলে না, তারপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের সচ্ছল করেছেন? নবীজীর এসব প্রশ্নের উত্তরে তারা একটি বাক্যই বলে যাচ্ছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহশীল। (সহীহ বুখারী : ৪৩৩০)।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নবীজী সাহাবীদেরকে তিনটি বিশেষ অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এক. তৎকালীন সমাজ বিপথে পরিচালিত ছিল। ছিল কুফর শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং জাহেলী রুসুমাতে জর্জরিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে পৃথিবীবাসীকে হেদায়েত ও সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। নবীজীর দাওয়াত কবুল করার মাধ্যমে আজ তারা সিরাতে মুসতাকীম-সঠিক পথের দিশা পেয়েছেন।

দুই. তৎকালীন সমাজব্যবস্থা ছিল সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বিবর্জিত রীতিনীতিতে পিষ্ট। সেখানে ন্যায় ও ইনসাফ, সাম্য ও অধিকার, নীতি ও নৈতিকতা ভুলুণ্ঠিত ছিল। ছিল জুলুম-শোষণ, অত্যাচার-অবিচার ও অনৈতিকতার অবাধ চর্চা। ফলে গোত্রে গোত্রে দ্ব›দ্ব-সংঘাত ইত্যাদি নানাবিধ জাহেলী সহিংসতায় সমাজ চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ ছিল। নবী কারীম (সা.) দ্বীন ও ঈমান, তাওহীদ ও তাকওয়া এবং ন্যায় ও ইনসাফের সূত্রে জাহিলিয়াতের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে গোটা আরবকে একত্র করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ঐক্য, সাম্য, ন্যায় ও ভ্রাতৃত্ববোধ।

তিন. সমাজে তখন ছিল অভাব অনটন ও দুর্ভিক্ষ-দুর্দশা। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওহীভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা এবং ইনসাফপূর্ণ সমাজব্যবস্থা কার্যকরী হওয়ার কারণে সমাজ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। উপরন্তু জিহাদের মাধ্যমে গনিমত লাভের দ্বারা তাদের জীবনে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এ সবই ছিল উম্মতের প্রতি প্রিয় নবীর অপার অনুগ্রহ। আজও মুসলিম উম্মাহ যদি সমাজে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় তবে নববী আদর্শই হতে পারে তার একমাত্র মাধ্যম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন