বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা টানা পঞ্চম দিনের মতো বায়ুদূষণে শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। গতকালও এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ২৭৬ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। বায়ু দূষণ স্কোরে ঢাকার এই অবস্থানকে বলা হয় বিপজ্জনক বা দুর্যোগপূর্ণ। গত সোমবার এবং রবিবারও শীর্ষ অবস্থানে ছিল ঢাকা। এক সপ্তাহের মধ্যে বায়ু দূষণে তিনবার ঢাকার অবস্থান শীর্ষে ওঠে এসেছে। এভাবে গত কয়েক সপ্তাহে বায়ু দূষণে ঢাকা সবার ওপরে দিকে ওঠে আসছে। পরিস্থিতি বলছে, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
ঢাকার চারপাশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হলেও এখনও অনেক ইটভাটা রয়েছে যারা কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে। আবার রাজধানীতে অবাধে চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। এসব গাড়ির কালো ধোঁয়াও পরিবেশকে দূষিত করছে। এ ছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুড়ি তো আছেই। কিন্তু ঢাকার বায়ু দূষণ প্রতিরোধে কেবলমাত্র রাস্তায় পানি ছিটানো ছাড়া আর কোনও কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা সকালে ছিল ২৭৬, আর বেলা ১২টায় ছিল ২২৮। সোমবার ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ ছিল ৩৩৩। রবিবার (২২ জানুয়ারি) মাত্রা ছিল ২৭১।
বায়ু বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে মাত্রা থাকলে তা সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে চিহ্নিত করা হয়। শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ‘ভালো’। ৫১ থেকে ১০০ ‘মোটামুটি’, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত ‘সতর্কতামূলক’, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই মাত্রাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আর ৩০১-এর বেশি স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ বা দুর্যোগপূর্ণ বলা হয়।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, সিটি করপোরেশন যে পানি ছিটাচ্ছে তাতে বড় রাস্তার ধুলাবালি কিছুটা কমে। এখন যে অবস্থা তাতে ঢাকা বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থা আর নেই। মানে যে পরিমাণ দূষণ এখন হচ্ছে তা রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। একমাত্র বৃষ্টি হলেই এই মাত্রা কমে আসতে পারে। উপায় একটা আছে, ঢাকার রাস্তার ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করতে হবে, নির্মাণ বিধি না মেনে যেখানে-সেখানে যেসব রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। এই মুহ‚র্তে ঢাকার কয়েক শ কিলোমিটার এলাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি অবস্থায় আছে। খোঁড়া রাস্তায় আবার গাড়ি চলছে, তাতে আবার যানজট হচ্ছে, যানজটের ফলেও বায়ু দূষণ বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, শুধু পানি ছিটিয়ে এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বায়ু দূষণ এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। দূষণের মাত্রা কী পরিমাণ বেড়ে গেছে আমাদের ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ কেনার হিরিক দেখেই বোঝা যায়। বাড়ছে কিডনি, ফুসফুসের অসুখ। শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, অর্থনৈতিক জায়গাও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ বিনিয়োগকারীরা এমন দূষিত শহরে বিনিয়োগ করতে নাও চাইতে পারেন। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমাদের উন্নয়ন কাজও। তিনি বলেন, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারকে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। যেখানে স্বল্পমেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা থাকবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়াও জরুরি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন