শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

উত্তরায় গার্ডারচাপায় মৃত্যু নূর ইসলামের চার স্ত্রীর কে কত পাবেন ঠিক করলেন আদালত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:৪৯ পিএম

রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডারচাপায় প্রাইভেটকারে থাকা একই পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহতের ঘটনায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (সিজিজিসি)। এই ক্ষতিপূরনের টাকা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন নিহত নুর ইসলামের চার স্ত্রী ও তিন সন্তান। ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম নিহতের পরিবারের ওয়ারিশদের এই টাকা বণ্টন করে দেন।

নিহত নুর ইসলামের চার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ও এক ছেলে ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। তারা হলেন- নুর ইসলামের স্ত্রী খন্দকার বিউটি বেগম, মাহমুদা পারভীন, রেহেনা, শাহিদা খানম ও দুই মেয়ে নিপা আক্তার, সানজিদা খানম রতনা এবং ছেলে রেজাউল মন্ডল। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক প্রত্যেক স্ত্রীকে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা, প্রত্যেক মেয়েকে ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ছেলেকে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পৃথকভাবে ৩০০ টাকায় ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে জিম্মানামা দাখিল পূর্বক জিম্মা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

নিহত নূর ইসলামের সাত ওয়ারিশ পৃথকভাবে স্ট্যাম্পে জিম্মানামা দিয়ে নিজের হাতে টাকা গ্রহণ করেন।জিম্মানামায় তারা উল্লেখ করেন, ‘টাকা নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে আদালত চাহিবামাত্র আমি আদালতে টাকা জমা প্রদান করিব।

উত্তরা পশ্চিম থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত ২৪ জানুয়ারি ওয়ারিশদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার জন্য আদালত নির্দেশ দেন। এরপর তারা ৩০০ টাকার ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা দিয়ে নেজারতশাখা থেকে ওই টাকা গ্রহণ করেন।

২০২২ সালের ১৫ আগস্ট বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। ওই গাড়িতে থাকা নবদম্পতি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। নিহতরা হলেন- আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল ওরফে নূর ইসলাম (৫৫), ফাহিমা আক্তার (৩৮), ঝর্না আক্তার (২৭), ঝর্না আক্তারের দুই শিশুসন্তান জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)। ওই ঘটনার রাতেই নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্না আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন।


মামলার পর হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ইফসকন বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. ইফতেখার হোসেন, হেড অব অপারেশন মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু, ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেডের মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলফিকার আলী শাহ ও মো. মঞ্জুরুল ইসলাম, ক্রেনচালক মো. আল-আমিন হোসেন ওরফে হৃদয়, রাকিব হোসেন, মো. আফরোজ ও ট্রাফিকম্যান মো. রুবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে ১০ আসামিই জামিনে। মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছে নিহতের পরিবার।


২০২২ সালের ১২ অক্টোবর দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দের জন্য আবেদন করে পুলিশ। আদালত ৩১ অক্টোবর চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের (সিজিজিসি) কর্মকর্তা রাসেল মিয়া ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনার জব্দ করা বক্স গার্ডার ও ২২ চাকা বিশিষ্ট একটি নম্বরবিহীন নীল রঙের ট্রেইলর জিম্মা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম ২০ লাখ টাকা নিহতের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বাবদ নগদ জমাদানের শর্তে ৫০ লাখ টাকা বন্ডে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ কোম্পানিকে জিম্মায় নেওয়ার আদেশ দেন।


পরে কোম্পানিটি ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ লাখ টাকা আদালতের সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এছাড়া ৫০ লাখ টাকা বন্ডে বক্স গার্ডার ও ট্রেইলর ফেরত পান। তবে আদালত যখনই চাইবে চায়না কোম্পানিকে বন্ডে বক্স গার্ডার ও ট্রেইলর ফেরত দিতে হবে বলে আদেশে উল্লেখ করেন

‘২০২২ সালের ১৬ আগস্ট বিমানবন্দর টু গাজীপুর প্রজেক্টের কাজ চলাকালে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকায় অপ্রত্যাশিত একটি দুর্ঘটনা ঘটে। রেজাউল মণ্ডলের বাবা নূর ইসলাম ওরফে রুবেল হোসেন, রেহানার স্বামী নূর ইসলাম ওরফে রুবেল হোসেন, ফাহাদের মা ফাহিমা বেগম, রিয়া মনির মা ফাহিমা বেগম, জাহিদের স্ত্রী ঝর্না আক্তার, রাশিদুলের মেয়ে ঝর্না আক্তার ও আকলিমা বেগমের মেয়ে ঝর্না আক্তার, নাতনি জান্নাতুল ও নাতি জাকারিয়া মারা যান। ফলে উত্তরা পশ্চিম থানায় দণ্ডবিধি ৩০৪ (ক)/৩৩৮ ধারায় একটি মামলা করা হয়। ওই ঘটনার জন্য আমরা সবাই দুঃখিত এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আদালতের বাইরে আমাদের সঙ্গে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ লিমিটেড (সিজিজিসি) উভয়ের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় একটি সমঝোতা হয়েছে। মামলার প্রজেক্টের কাজে ব্যবহৃত চায়না গ্যাঝুয়া গ্রুপ কোম্পানির (সিজিজিসি) একটি বক্স গার্ডার ও একটি ব্লু রঙের ট্রেইলর জব্দ করা হয়। জব্দ করা বক্স ও ব্লু রঙের ট্রেইলরটি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডকে (সিজিজিসি) হস্তান্তর করলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন