শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বরকত সম্পর্কে কিছু কথা-৩

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০২ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

মহান রাব্বুল আলামীন ‘তাবারাকা’ ক্রিয়া পদটি আল কুরআনে নয় বার ব্যবহার করেছেন। ‘তাবারাকা’ ক্রিয়া পদটি ‘বরকাতুন’ থেকে উদ্ভ‚ত। এর অর্থ ও মর্ম অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। এর শব্দ মূলে রয়েছে বা, রা, কাফ বর্ণত্রয়। এ থেকে ‘বরকত’ ও ‘বারওয়াক’ দু’টি শব্দ উদগত হয়। তন্মধ্যে বরকত শব্দের মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি, কল্যাণ, বিপুলতা ও প্রাচুর্যের ধারণা। আর ‘বারওয়াক’ শব্দের মধ্যে দৃঢ়তা, স্থায়িত্ব, অটলতা ও অনিবার্যতার ধারণা রয়েছে।

তারপর এ ধাতু থেকে যখন ‘তাবারাকা’-এর ক্রিয়াপদ তৈরি করা হয় তখন তাফাউলের বৈশিষ্ট্য হিসেবে-এর মধ্যে পূর্ণতা, অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি প্রকাশের অর্থ সম্পৃক্ত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় এর অর্থ দাঁড়ায় বর্ধমান প্রাচুর্য, চরম প্রাচুর্য ও চ‚ড়ান্ত পর্যায়ের স্থায়িত্ব। মহান আল্লাহপাক নিজের জন্য ‘তাবারাকা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তিনি ‘তাবারাকা’ শব্দটি এক অর্থে নয় বরং বহু অর্থে ব্যবহার করেছেন। যেমন :
(এক) আল্লাহ মহাঅনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ এবং কল্যাণকারী। এতদপ্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : প্রত্যেক কল্যাণ ও বরকত আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকেই হয়। তিনি স্বীয় বান্দাহকে ফুরকানের মহান নেয়ামত দান করে গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। (দুই) তিনি বড়ই মর্যাদাশালী ও সম্মানীয়। কারণ পৃথিবী ও আকাশে তাঁরই রাজত্ব চলছে। আধিপত্য শুধু তাঁরই।

(তিন) তিনি বড়ই পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। কারণ, তাঁর সত্তা সকল প্রকার শিরক হতে চিরমুক্ত। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। ফলে তাঁর সত্তার সার্বভৌমত্বে আদৌ কোনো নাজির ও সমকক্ষ নেই। তাঁর কোনো ধ্বংস, পতন, ও পরিবর্তন নেই। কাজেই তাঁর স্থলাভিষিক্তের জন্য কোনো পুত্রের বা কন্যার প্রয়োজন নেই। (চার) তিনি বড়ই উন্নত ও শ্রেষ্ঠ। কারণ, সমস্ত রাজত্ব তাঁরই কতৃত্বাধীন। তাঁর ক্ষমতায় অংশীদার হবার মতো যোগ্যতা, শক্তি ও মর্যাদা কারো নেই।

(পাঁচ) শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ, তিনি নিখিল বিশ্বের প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টিকারী, উদ্ভাবনকারী, আকৃতিদানকারী ও তার ক্ষমতা নির্ধারণকারী। এ সকল ব্যাপারে তাঁর তুল্য কেউ নেই। তিনি একক, অদ্বিতীয় ও অবিনশ্বর। (এর জন্য দেখুন তাফসীরে তাবারী; তাফসীরে কুরতুবী; ফাতহুলকাদীর)।

আর এই তাত্তি¡ক দিক নির্দেশনাই প্রদান করা হয়েছে ‘বরকত’ শব্দ থেকে উদ্ভূত ‘মুবারাকুন’ মুবারাকান ও মুবারাকাতুন্’ শব্দত্রয়ের মাধ্যমে। আল কুরআনে মুবারাকুন শব্দটি চার বার এসেছে যথা :
(ক) ইরশাদ হয়েছে : আর এটি বরকতময় কিতাব, যা আমি নাযিল করেছি, যা তার আগের সব কিতাবের সত্যায়নকারী এবং যা দ্বারা আপনি মক্কা ও তার চারপাশের মানুষদের সতর্ক করেন। (সূরা আল আনয়াম : ৯২)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : আর এ কিতাব, যা আমি নাযিল করেছি বরকতময়। কাজেই তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও। (সূরা আল আনয়াম : ১৫৫)।
(গ) ইরশাদ হয়েছে : আর এ হচ্ছে বরকতময় উপদেশ এটা আমি নাযিল করেছি। তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার কর? (সূরা আম্বিয়া : ৫০)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে : এক মুবারক কিতাব, এটা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষ-এর আয়াত-সমূহে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ : ২৯)।

আর ‘মুবারাকান’ শব্দটি আল কুরআনে চার বার এসেছে। যথা : (ক) ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় মানব জাতির জন্য সর্ব প্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাতো বাক্কায় (মক্কায়), বরকতময় ও সৃষ্টি জগতের দিশারী হিসেবে। (সূরা আলে ইমরান : ৯৬)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : (হযরত ঈসা আ. বললেন) তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, যেখানেই আমি থাকি না কেন। (সূরা মারয়াম : ৩১)।
(গ) ইরশাদ হয়েছে : (হে নূহ আ.) আরো বলুন, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে কল্যাণকরভাবে নামিয়ে দিন, আর আপনিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী। (সূরা মুমিনুন : ২৯)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে : আর আসমান থেকে আমি বরকতময় বৃষ্টি বর্ষণ করি, অতঃপর তা দ্বারা আমি উৎপন্ন করি উদ্যান, এবং কর্তনযোগ্য শস্য দানা। (সূরা ক্বাফ : ৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন