মানুষের চারপাশে ছোট-বড় যা কিছু ঘটে তার অনেক কিছুই মানুষের জন্য আকস্মিক। তা নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরের কথা, এ ‘বিজ্ঞানের যুগে’ তার পূর্বাভাসও মানুষের ক্ষমতার বাইরে। একটি, দু’টি বিষয় নয়, মানুষের জীবনের অনেক কিছুই এমন। এ মানুষের দুর্বলতা ও জ্ঞানস্বল্পতার এক দৃষ্টান্ত। মানুষকে তো অতি অস্পষ্ট জ্ঞান দেওয়া হয়েছে আর তাকে সৃষ্টিও করা হয়েছে দুর্বল করে। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি এই জগতের স্রষ্টা, এই প্রকৃতি ও প্রকৃতির নিয়মের সৃষ্টিকর্তা, তাঁর কাছে কোনো কিছুই ‘আকস্মিক’ নয়। সবকিছুই তাঁর ইচ্ছাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রকৃতির যে সূ² ও শক্তিশালী নিয়ম তা তাঁর অসীম জ্ঞান ও কুদরতের প্রমাণ। তাঁর ইচ্ছায় এ নিয়মের গতি ও পরিণতি। সুতরাং জীবন ও জগতে যা কিছু ঘটে তা সেই মহাজ্ঞানী মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। সুতরাং ছোট-বড় সকল ঘটনার বার্তা আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করা।
কিন্তু যুগ যুগ ধরে মানুষ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। কোরআন মাজীদে খুব পরিষ্কারভাবে এ দুই শ্রেণির মানুষের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের কর্তব্য, কুরআনের আয়নায় নিজেদের দেখে নেওয়া। এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট এবং এতেই পরিতৃপ্ত থাকে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধে গাফিল, ওদেরই আবাস অগ্নি, ওদের কৃতকর্মের কারণে। যারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ, তাদের রব তাদের ঈমান হেতু তাদের পথ নির্দেশ করবেন; তাদের (বাসস্থানের ) পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। (সূরা ইউনুস : ৭-৯)।
তো যারা আখিরাতে বিশ্বাসী নয়, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা ও ভয় যাদের অন্তরে নেই, যারা পার্থিব জীবনেই তুষ্ট ও নিমগ্ন এদের স্বভাব, আল্লাহ তা’আলার কুদরতের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন থাকা। অর্থাৎ তা থেকে যে শিক্ষাগ্রহণ কাম্য ছিল তা না করা।
কোরআন মাজীদের আরো ইরশাদ : আর আমি তোমার পূর্বেকার জাতিসমূহের কাছে অনেক রাসূল পাঠিয়েছি, (কিন্তু নবীগণকে অমান্য করার কারণে) আমি তাদের প্রতি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি চাপিয়ে দিয়েছি, যেন তারা নম্রতা প্রকাশ করে আমার সামনে নতি স্বীকার করে। সুতরাং তাদের প্রতি যখন আমার শাস্তি পৌঁছল, তখন তারা কেন নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করল না? বরং তাদের অন্তর আরও কঠিন হয়ে পড়ল, আর শয়তান তাদের কাজকে তাদের চোখের সামনে শোভাময় করে দেখাল।
অতঃপর তাদের যা কিছু উপদেশ ও নসীহত করা হয়েছিল তা যখন তারা ভুলে গেল তখন আমি তাদের জন্যে প্রতিটি বস্তুর দরজা উম্মুক্ত করে দিলাম, শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাদেরকে দানকৃত বস্তু লাভ করে খুব আনন্দিত ও উল্লাসিত হলো, তখন হঠাৎ একদিন আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, আর তারা সেই অবস্থায় নিরাশ হয়ে পড়ল। অতঃপর অত্যাচারী স¤প্রদায়ের মূল শিকড় কেটে ফেলা হলো। (সূরা আনআম : ৪২-৪৫)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন