শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার মাধ্যমেই কোনো জাতি শক্তিমান জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে। কিন্তু জাতির মেরুদন্ডের পরিচর্যা যদি মেরুদন্ডহীন লোকদের হাতে ন্যস্ত হয় তখন সেই জাতির ভবিষ্যৎ কত ভয়াবহ হতে পারে তা খুব সহজেই অনুমেয়। স¤প্রতি যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা একটি জাতির জন্য রীতিমতো রোমহর্ষক। যারা এই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তরিকতার সাথে ভাবেন তাদের অবশ্যই এই অবক্ষয় রোধে সর্বশক্তি নিয়োজিত করতে হবে।
জাতির কর্ণধারদের এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে জবাবদিহি করতে হবে।কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা তাঁর আদর্শ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন : ওরা হচ্ছে ওই সকল মানুষ, যাদেরকে আমি ভ‚পৃষ্ঠে প্রতিষ্ঠা দান করলে সালাত আদায় করে, জাকাত প্রদান করে, সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম একমাত্র আল্লাহর। (সূরা হজ্জ : ৪১)।
পৃথিবীতে কোনো মানুষই দায়িত্বমুক্ত নয়। সকল মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। প্রত্যেকেরই স্ব-স্ব ক্ষমতা ও সক্ষমতা অনুসারে দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। আর এ সম্পর্কে তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। যারা সমাজের দায়িত্বশীল ও পরিচালক তাদের সক্ষমতা যেমন বেশি দায়িত্বও বেশি। কর্তাকে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতার মুখোমুখী হতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর ইরশাদ : জেনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল আর তোমাদের প্রত্যেককে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সহীহ বুখারী : ৭১৩৮)।
পরিবারের কর্তা থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরের কর্তাব্যক্তিরই মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা আছে। সাধ্যমতো সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ যেমন পরিবারের কর্তার দায়িত্ব, তেমনি তাদের দ্বীন-ঈমান, আদব-আখলাক, নীতি-নৈতিকতা সুরক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করাও তার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। সাধ্যমত দেশ-জাতির স্বাভাবিক প্রয়োজনসমূহ পূরণ করা যেমন সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্ব, তেমনিভাবে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের সুশিক্ষা, তাদের দ্বীন-ঈমান, নীতি-নৈতিকতা রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
আল্লাহ তা’আলার দরবারে এ বিষয়েও তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখী হতে হবে। কাজেই মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য, এই বিরাট দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া। স¤প্রতি যেসব কান্ড সামনে এসেছে একে কী বলা যায়? লজ্জাহীনতা। হাদীস শরীফের কথা কতই না সত্য : তোমার যখন লজ্জা নেই তো যা খুশি তাই কর। (সহীহ বুখারী : ৩৪৮৪)।
লজ্জাহীন মানুষের কোনো কিছুতেই বাধে না। নানা প্রকারের অসাধুতা ও অপকর্মের পরও কোনো কোনো শিক্ষাবিদ উপাধিধারী ব্যক্তি যেভাবে মিডিয়ার সামনে কথা বললেন তাতে এ ছাড়া আর কী বা বলা যায়। সত্য বটে, যখন মানুষের মনে আল্লাহর ভয় থাকে না, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ লোপ পায় তখন মানুষের মধ্য থেকে স্বাভাবিক লজ্জাও বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ইসলাম মানুষকে ভালো-মন্দের পরিষ্কার সীমারেখা দান করেছে। ঈমানী শিক্ষা মানুষকে, আল্লাহকে ভয় করতে ও ভালোবাসতে শেখায় এবং আল্লাহপ্রদত্ত সীমারেখা মেনে চলতে প্রস্তুত করে। এই সীমারেখা মেনে চলার চর্চা যারা করেন তাদের মধ্যে সৌজন্য, সংযম, শালীনতা ও লজ্জাশীলতা তৈরি হয়। একজন সৎ-সজ্জন মানুষের জন্য এইসকল বৈশিষ্ট্যের কোনো বিকল্প নেই।
অন্যদিকে যে সমাজ থেকে আল্লাহপ্রদত্ত ভালো-মন্দের সীমারেখা বিলুপ্ত হতে থাকে, তা লঙ্ঘন করতে তারা উৎসাহিত হতে থাকে, সেই সমাজ থেকে শুধু একান্ত ধর্মীয় বিষয়গুলোই বিলুপ্ত হয় না, স্বাভাবিক মানবীয় বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির ক্ষেত্রেও ভয়াবহ অবক্ষয়ের বিস্তার ঘটতে থাকে। মিথ্যা-প্রতারণা, পরস্বহরণ, হিংস্রতা, পরশ্রীকাতরতা থেকে শুরু করে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, লুটপাট, রক্তপাত, ইজ্জত-আব্রæ লুণ্ঠন পর্যন্ত সব রকমের অনাচারই সংঘটিত হতে থাকে।
এই সত্য আজ আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে ঈমানের আলো বিস্তারে, সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঈমান, ইসলাম পরিপন্থী নানা বিষয়ের প্রচার-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেসকল অপপ্রয়াস চলে প্রত্যেকে স্ব-স্ব অঙ্গন থেকে সেসবের খন্ডন ও প্রতিরোধে পূর্ণ শক্তি ব্যয় করতে হবে। যাদের বলার ও লেখার শক্তি আছে তারা মুখের ও কলমের ভাষায় এসব অনাচারের স্বরূপ উন্মোচন করবেন।
এসব বন্ধে দায়িত্বশীলদের উৎসাহিত করবেন। আর যাদের ক্ষমতা ও সক্ষমতা আছে তারা তাদের ক্ষমতা ও সক্ষমতাকে এই অন্যায় বন্ধে ব্যবহার করবেন। মুসলিম উম্মাহর প্রতি হাদীস শরীফের ইরশাদ অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন : তোমাদের যে কেউ কোনো অন্যায় দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা বন্ধ করে, তা না পারলে মুখ দ্বারা, তা না পারলে অন্তত অন্তর দ্বারা (যেন ঘৃণা করে)। আর তা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতম স্তর। (সহীহ মুসলিম : ৪৯)। আসুন, সমাজের প্রত্যেকে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করি। আল্লাহ তা’আলা আমাদের তাওফীক দান করুন -আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন