সাইয়্যেদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, রাসূলু রাব্বিল আলামীন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওতী জিন্দেগীর চূড়ান্ত সফলতা এবং সম্মান ও মর্যাদার সুস্পষ্ট দলিল হচ্ছে ইসরা বা মি’রাজের ঘটনা। এই ঘটনাকে আল-কুরআনে অত্যন্ত খোলাসাভাবে বয়ান করা হয়েছে এবং মুতাওয়াতীর হাদিসসমূহ দ্বারা এর বিবরণ পেশ করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রথমাংশ মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকে ‘ইসরা’ বলা হয়। এতদ সম্পর্কে আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : পরম পবিত্র মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাহকে রাত্রিবেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন, যার চারদিকে আমি বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিশানা দেখিয়ে দেই; নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সূরা বনি ইস্রাঈল : আয়াত-১)।
বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) জাগ্রত অবস্থায় ইসরা সফর করেন, স্বপ্নে নয়। এই সফরে তাঁর বাহন ছিল বোরাক। বাইতুল মুকাদ্দাসের দ্বারে উপনীত হয়ে তিনি বোরাকটি নির্দিষ্ট পাথর খণ্ডে বেঁধে রাখেন এবং মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত নামায আদায় করেন। তারপর শুরু হয় মি’রাজ বা ঊর্ধ্বলোকে আরোহণের পালা। অতঃপর এক অলৌকিক সিঁড়ি আনা হয়। যাতে নীচ থেকে উপরে যাওয়ার জন্য ধাপ বানানো ছিল। সিঁড়ির সাহায্যে তিনি প্রথম আকাশ হতে শুরু করে সপ্তাকাশের ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’ পর্যন্ত পৌঁছেন।
সেখানেই তিনি একটি দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ রঙের ‘রফরফ’ দেখতে পান। সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট পাল্কিকে রফরফ বলা হয়। এই পাল্কিতে আরোহণ করে তিনি আল্লাহ পাকের দরবার দ্বারে উপনীত হন। সেখানে রফরফ থেমে থাকে এবং তিনি সশরীরে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে হাজির হন। সেখানে প্রেমিক এবং প্রেমাষ্পদের মধ্যে বহু কথোপকথন হয়।
আল-কুরআনে এতদ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : ‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা অস্তমিত হয়। তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়। আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো কেবল ওহী, যা তাঁর প্রতি ওহীরূপে প্রেরিত হয়। তাঁকে শিক্ষাদান করেছেন প্রচণ্ড শক্তিশালী। সৌন্দর্যপূর্ণসত্তা, অতঃপর তিনি স্থির হয়েছিলেন। আর তিনি ছিলেন ঊর্ধ্বদিগন্তে। তারপর তিনি কাছাকাছি হলেন, অতঃপর খুব কাছকাছি। ফলে তাদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম।
তখন আল্লাহ তাঁর বান্দাহর প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন। যা তিনি দেখেছেন, তার অন্তকরণ তা মিথ্যা বলেনি। তিনি যা দেখেছেন তোমরা কি সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করবে? আর অবশ্যই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন। সিদরাতুল মুন্তাহা তথা প্রান্তবর্তী কুলগাছের কাছে। যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত। যখন কুলগাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল। তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুত ও হয়নি। অবশ্যই তিনি তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিলেন।’ (সূরা আন্নাজম : আয়াত-১-১৮)।
পরিশেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) অবতরণকালে রফরফ, আলৌকিত সিঁড়ি ও বোরাকযোগে রাত্রিকালেই বাইতুল্লায় পৌঁছে যান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন