দ্বীনি বিষয়ে যদি আল্লাহ কাউকে অপরের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকেন, যেমন কাউকে আল্লাহ তায়ালা অন্যের তুলনায় বেশি ইলম, আমল বা আখলাকের তাওফীক দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানকৃত ব্যক্তিকে হিংসা করা যাবে না, কিন্তু ঈর্ষা করা যাবে। এবং এ গুণগুলো অর্জনের সম্ভাব্য চেষ্টা করা যাবে। কোরআন-সুন্নাহর নেককার লোকদের দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার এবং নেক কাজে প্রতিযোগিতার মনোভাব পোষণ করতে বলা হয়েছে। এই আয়াতেও সেদিকে ইশারা আছে। বলা হয়েছে : ‘পুরুষ যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে এবং নারী যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে’।
অর্থাৎ নেক কাজ করে আখেরাতের পুঁজি সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে মানুষকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। নারী-পুরুষে কোনোরূপ পার্থক্য না করে প্রত্যেককে নেক কর্মের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি যত বেশি নেক কাজ করবে সে তত বেশি সুফল ভোগ করবে।
শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানকৃত বিষয়গুলোর মাঝে যেগুলো অর্জন করা সম্ভব নয়, যা সম্পূর্ণই মানুষের এখতিয়ার বহির্ভূত সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামানো অনর্থক, তাই সে বিষয়ে জড়াতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু নেক আমল করে নিজেকে এগিয়ে নেওয়া প্রত্যেকের এখতিয়ারাধীন। তাই এ বিষয়ে মনোযোগী হতে বলা হয়েছে।
আর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানকৃত বিষয়গুলোর মাঝে যেগুলো আল্লাহর তাওফীক হলে চেষ্টার মাধ্যমে (আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ) অর্জন করা সম্ভব, তা যদি দুনিয়াবী কোনো বিষয় হয়, যেমন আল্লাহ তায়ালা কাউকে স্বাভাবিক ধন-সম্পদ দান করলেন, আরেকজনকে তার তুলনায় বেশি সম্পদ দান করলেন।
এ ক্ষেত্রে বিধান হলো, অধিকতর সম্পদশালীকে দেখে অপেক্ষাকৃত কম সম্পদের অধিকারী অস্থিরতা বা হীনম্ন্যতায় ভোগা কিংবা হিংসার শিকার হওয়া ঠিক নয়। তবে শরীয়তসম্মত পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা এবং সম্পদ বৃদ্ধির চেষ্টা করা জায়েয।
লক্ষণীয়, নিজস্ব প্রয়োজনে বা নিজের তাগিদে শরীয়তসম্মত পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রয়াস এক বিষয় আর অন্যের সম্পদ দেখে অস্থিরতা, হীনম্মন্যতা বা হিংসার শিকার হওয়া আরেক বিষয়। এটি ভালোভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। স্বীকৃত পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা এবং সম্পদ বৃদ্ধির চেষ্টা করার অনুমোদন রয়েছে শরীয়তে। কিন্তু অন্যের সম্পদ দেখে অস্থিরতায় ভোগা বা কামনাদগ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই।
এই হলো এই আয়াতের মৌলিক শিক্ষা। আয়াতে এর পর আরেকটি বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে গভীর একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত’।
আল্লাহ তায়ালা যেহেতু সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত তাই তিনি জানেন-কার জন্য কী উপযোগী। তিনি প্রত্যেককে তার জন্য যা উপযোগী, সে অনুসারে অনুগ্রহ করে থাকেন। তাঁর অনুগ্রহও বৈচিত্র্যপূর্ণ। আল্লাহ কাউকে সন্তান না দিয়ে সম্পদ প্রদান করে অনুগ্রহ করেন। হয়তো তার কারণ এই যে, সন্তান না থাকার কষ্ট সে বরদাশত করতে পারলেও আর্থিক অভাব সে বরদাশত করতে পারবে না। কাউকে সম্পদ না দিয়ে সন্তান দান করে অনুগ্রহ করেন। কেননা সম্পদের তুলনায় সন্তান তার কাছে বেশি প্রিয়। কাউকে তিনি উভয় নিয়ামতই দান করেন।
কারণ উভয় নিয়ামতের কদর হয়তো সে করতে পারবে। এভাবে নানা হিকমতে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন কিছু প্রদান করা হয়। এই হিকমত পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা আমাদের পক্ষে সম্ভবও নয়। কাজেই অন্য কেউ কোনো বিষয়ে আমার চেয়ে এগিয়ে থাকলে সে বিষয়ে মনোপীড়ায় ভুগে সেটি অর্জনের জন্য উঠে পড়ে লাগার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তায়ালা আপন হিকমত অনুসারেই তাকে তা প্রদান করেছেন। আমার জন্য যা উপযোগী তাও তিনি আমাকে প্রদান করবেন। আল্লাহর অনুগ্রহের প্রকাশ নানাভাবে হয়ে থাকে। তাই অনির্দিষ্টভাবে আল্লাহর কাছে ‘অনুগ্রহ’ প্রার্থনা করাই উত্তম। আমি যে অনুগ্রহের উপযুক্ত হবো, তা আল্লাহ আমাকে প্রদান করবেন।
তবে হ্যাঁ, সংশ্লিষ্ট উসুল ও আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু প্রার্থনা করার অবকাশও আছে শরীয়তে। কোরআন-সুন্নাহর অন্যান্য বক্তব্য থেকে যা প্রমাণিত হয়। সেক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা আপন হিকমত অনুসারে উপযুক্ত স্থানে তা প্রদান করে থাকেন। উপযুক্ত স্থান না হলে তা প্রদান নাও করে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন