শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাঁশের সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ নেই পৃষ্ঠপোষকতা

মীরসরাইয়ে সহস্রাধিক পরিবার ধরে রেখেছে পৈত্রিক পেশা

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : মীরসরাই উপজেলার মিঠাছরা, আবুতোরাব, আবুরহাট, শান্তিরহাট, কমরআলী, জোরারগঞ্জ বাজারের মতো প্রাচীন হাটগুলোতে এখনো প্রত্যক্ষ করা যায় কিছু মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপকরণ আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বাঁশ। বাঁধ দিয়ে তৈরি হাজি, ঢালা, কুলা, চালনি, পানডালা, মাছ ধরার ঝুঁড়ি, চাটাই, খেলনা, কলমদানি, ফুলদানি, বাঁশি কিংবা গৃহসজ্জার বাহারি পণ্য বিক্রি করে সংসার চলে তাদের। এভাবেই এ অঞ্চলে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সহস্রাধিক পরিবার। কিন্তু একে একে বিলীন হচ্ছে প্রয়োজনীয় এই বাঁশ ও বাঁশঝাড়। এর জন্য কৃষি বিভাগ উদ্যোগের প্রয়োজন মনে করলে ও বাস্তবে নিচ্ছেন না কোন উদ্যোগই। নেই সরকারি-বেসরকারি কোন প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা। মীরসরাই উপজেলার মিঠাছরা বাজারে জনৈক বাঁশের খাঁচি বিক্রেতা আবুল কালাম (৪৫) বললেন, আমরা কারো কাছে প্রশিক্ষণ নেইনি। তবে আমাদের বাপ-দাদারা এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের কাছে শিখেছি বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কৌশল। এখন আমরা শেখাচ্ছি পরিবারের অন্যদের। অপর চাটাই বিক্রেতা রওশন মিয়া আরো বললেন, কৃষকের বাড়ি থেকে কিনলে প্রতি বাঁশে খরচ পড়ে ১০০-১৫০ টাকা। কাঁচা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে হয়। বাড়ির অন্য সদস্যরা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। একটি বাঁশ দিয়ে প্রায় ৬০০ টাকার পণ্য তৈরি করা যায়। মাসে গড়ে ২০-৩০টি বাঁশ কাজে লাগিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় সম্ভব। তবে বাহির থেকে বাঁশ কিনলে বাঁশ কেনায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লেগে যায়। দিনে দিনে বাঁশের বাগান কমে যাওয়ায় দিনে দিনে দাম ও বাড়ছে তাই এর বাঁশ পন্যের ও দাম অনেক বেড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার মিঠাছরা, আবুরহাট ও আবুতোরাব হাটে বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি হয় বেশি। সেদিন আবুতোরাব বাজারে নিতাই চন্দ্র দাস (৩৪) আসেন নানান পণ্য বিক্রি করতে। প্রতি সপ্তাহে পণ্য বিক্রি হয় দেড় হাজার টাকার। লাভ থাকে ১ হাজার টাকার মতো। তোফাজ্জল মিয়া (৩০) জানায় তার বাড়িতে সুরশী রানী (৩৫), কানাই লাল (৪৫), সুরবালা (৪২) ও কৃষ্ণ কান্ত (৩৩) বাঁশ নিয়ে কাজ করেন। প্রতি বছর বিভিন্ন মৌসুমকে কেন্দ্র করে তাদের থাকে বাড়তি ব্যস্ততা। অর্ডার পেয়ে পাইকারদের চাহিদা অনুসারে পণ্য সরবরাহ করতে হয় বলে জানান তারা। আমবাড়িয়া গ্রামের জুলেখা আক্তার (৪০) বাঁশ দিয়েই মোড়া তৈরি করে সংসার চালান। মোড়া বিক্রি থেকে প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় ৪ হাজার টাকা। স্বামী সিরাজ মিয়াও এ কাজে সহযোগিতা করেন। বাঁশ কিনে আনেন তিনি। জানালেন মোড়া তৈরির কৌশল। বাঁশ চিরে ১০-১২ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর শলা তৈরি করা হয়। শলার সুতলি প্লাস্টিক ও রিকশার অব্যবহৃত টায়ার দিয়ে তৈরি হয় ছোট, মাঝারি ও বড় এ তিন ধরনের মোড়া। ছোট মোড়া ৮০, মাঝারি ১২০ ও বড়টি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিটি মোড়া বিক্রি করলে লাভ থাকে ৫০-৭০ টাকা। এলাকার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বাইরা, নলি ও মুলি এ তিন ধরনের বাঁশ পাওয়া যায়। বাইরা দিয়েই বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে সুবিধা বেশি। ডালা কুলা, পালি, পানডালা ও মাছ ধরার ঝুড়ি বাইরাতেই সুবিধা। প্রতিটি ডালা ৪০, খাঁচা ৬০, ঝুড়ি ১০০ ও পানডালা ৪০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা। কুলা ও পালির চাহিদা থাকে বারো মাস। প্রতিটি কুলা ৯০ ও পালি ৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তালবাড়িয়ার ক্ষুদে বাঁশ কারিগর খাদিজা বলেন এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র শিল্প। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের শোরুম নির্মাণের পাশাপাশি প্রতি বছর এসব নিয়ে মেলার আয়োজনও করা যেতে পারে। এতে গ্রামাঞ্চলে বেকারের সংখ্যা কমবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। আবার বাঁশের আবাদ দিনে দিনে কমে যাওয়ায় এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান আমরা আগামী বাঁশ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পের কথা ভাবছি। বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থ্যাগুলোকেই এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন