হিরু সিদ্ধান্ত নেয় লিপিকে বাসায় এনে এক সপ্তাহের মধ্যে লিপি-রহিমকে এক ঘরে রেখে সামাজিক চাপে ফেলে বিয়ে দেবে। সামাজিক চাপে লজ্জায় নির্দোষ হলেও লিপিকে বিয়ে করতে হয় রহিমকে, বিয়ের সময় রহিমের চোখের পানি লিপির মনে দাগ কাটে। সে ভাবে, যেভাবেই হোক আমি তাকে সুখি করবো, রহিমের জন্য লিপির মনে মায়া জন্মে। বিয়ের পনের দিনের মধ্যে রহিমকে নিয়ে লিপি আলাদা ঘর ভাড়া নেয়। গল্পটা এভাবেই শুরু করেছেন একজন নারী লেখিকা। সাইদা শারমিন রুমার ‘ঠিকানা হারিয়েছে’, পারভনি রেজার ‘প্রিয়জন’ খাদিজা রহমানের ‘আর্সেনিক দূষণ : প্রসঙ্গ বাংলাদেশ’ এসব গল্পের বইগুলো বঙ্কিমের ‘কপাল কু-লা’ বা রবী ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ বইগুলের পাশে জায়গা করে নিয়েছে এবারের বই মেলার স্টলগুলোতে। এছাড়াও কবি মোহসিনা বেগমের ‘কবিতাসমগ্র’ সাংবাদিক আতিক ও শিল্পিসহ পাঁচজন কবির রচিত ‘পঞ্চ প্রেমের কবিতা’সহ অনেক নারী লেখিকার বই এবারে মেলায় বেশ কদর পাচ্ছে। জাহানারা তোফায়েলের ‘বসন্ত আবার আসবে ফিরে’ ফয়জুন নাহারের ‘ফিরে কি পাব না’ ড. রুমানা আফরোজের ‘ঢাকা শহরের বিহারিদের ভাষাবিজ্ঞানগত সমীক্ষা’ বইগুলোর কাটতি পাচ্ছে। পিঠা-পুলি-পায়েস বা রান্নার বইগুলোও কম যাচ্ছে না। একুশে বাংলা প্রকাশনে, এবং জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনে ‘রুদ্মিলার চিঠি’ কিনতে দেখা গেল কয়েকজন তরুণীর। পীর হাবিবের ‘লজ্জাবতী’ কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধবীরা হানা দিচ্ছে।
মম প্রকাশের ঐতিহ্য বুক স্টলে সিদ্দিকা কবিরের রান্নার কোনো বই আছে কিনা জানতে চাইলেন মিসেস আলেয়া ফেরদৌসী। পল্টন থেকে মেয়ে নামিরা জামানকে সাথে নিয়ে মেলায় এসেন প্রয়োজনীয় বই কিনতে। নামিরা কিনতে চায় জাফর ইকবালের ‘অন্য রকম জীবন’। একুশে বাংলা প্রকাশনের চিত্রটা একটু ভিন্ন। এই স্টলে ৪ জন নারী লেখিকার উপস্থিতি দৃষ্টি কাড়ার মত। মওদুদ আহমেদ একজন বই বিক্রেতা। তিনি জানালেন এবারে বই মেলায় নারী লেখকদের বইয়ের চাহিদা বেড়েছে। আশানুরূপ বেচাকেনা হচ্ছে। পাঠসূত্র প্রকাশনীতে তাসরি তানরিম এসেছে গুলশানের বাড্ডা এলাকা থেকে। তিনি খুঁজছেন রান্নার ভালো বই। তিনি জানালেন প্রতি বছরই মেলায় আসেন, নতুন বই আর একটু কম দামে কিনতে। ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সামিয়া জামান অন্য রকম জীবন কিনতে সব স্টলে ঘুরছেন। অন্য প্রকাশে প্রতিবারের মতো তরুণ-তরুণীর ভীড় বরাবরের মতই।
তনুজা নিজেই একজন নির্বাহী প্রকাশক। তিনি বললেন, এবারে বেচাকেনা তুলনা মূলক কম। তবে মেলার শেষ সপ্তাহে এটা পুষিয়ে যাবে বলেও ভরসা করছেন। বই পড়া নিয়ে ভিন্ন আশঙ্কা তার। অনলাইনের কারণে বইয়ের পাঠক ক্রমেই কমে যাচ্ছে বলে তিনি জানালেন। তবে তনুজা হতাশা নন। তিনি মনে করেন আবারও পাঠক ফিরে আসবে বই পড়ার সুবিধার জায়গায়। তিনি বলেন, অবসরে একটি বই আমরা শুয়ে, বসে, কোলর উপর রেখে আয়েশ করে পড়তে পারি, যা অনলাইনে সম্ভব না। তিনি জানান বই পড়ার যে মজা বা সৌন্দর্য সেটা কাগজের বইয়েই সম্ভব। এটা কখনই ল্যাপটপ বা স্মার্ট ফোনে মানায় না। তার প্রকাশনে অনেক নতুন লেখকের পরিচিতি ঘটান। তনুজা আশা করেন বই পড়াররীতি আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। পাঠকের ঘরে টেবিলে আলমারিতে শোভা পাবে থরে থরে বই। সেই সাথে রান্না ঘর থেকে শোবার ঘর পর্যন্ত স্থান করে নেবে নারী পাঠকের হৃদয়ে।
য়মেহরিন কুইন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন