রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ

প্রার্থীদের কাছে নির্বাচন কমিশনারদের অঙ্গীকার

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে বলে অঙ্গীকার ও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যরা। গতকাল শনিবার কুমিল্লা টাউনহল মিলনায়তনে কুসিক নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্য এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভায় কমিশনের সদস্যরা বলেন, আমরা চাই এ নির্বাচনে জনগণের রায় প্রতিফলিত হোক। আর তাই ভোটাররা যাতে নিরাপদে নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এজন্য নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার পক্ষপাতকমূলক আচরণ-অবস্থান, গাফলতি ও শৈথল্যতা বরদাশত করা হবে না। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। কুসিক নির্বাচন নতুন ইসির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান ইসির অস্তিত্বের প্রশ্নে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু। আর তাই নির্বাচনের সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ জনগণ ও গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।  
কুমিল্লা জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের সাথে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আইন-শৃংখলা বিষয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় কুসিক নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা তাদের অভিমত প্রকাশ করেন। সভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য কমিশনের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ভোটাররা যাতে নিরাপদে-নির্বিঘেœ কেন্দ্রে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর ভোটের দিন কেন্দ্রের আশপাশে যাতে কোনো বহিরাগত অবস্থান নিয়ে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে এজন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপর ভূমিকা রাখার দাবি জানাচ্ছি।’ মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন সদর দক্ষিণ থানার পুলিশ ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের অযথা হয়রানি করছে। মামলায় জামিনে থাকার পরও তার এক কর্মীকে আটক করেছে। পুলিশের এমন ভূমিকায় নির্বাচনী পরিবেশ প্রভাবিত হচ্ছে।’ সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের নির্বিঘেœ প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেয়ার জন্য সাক্কু নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহŸান জানান। তিনি বহিরাগত সন্ত্রাসীরা যাতে কেন্দ্র দখলসহ ভোটকেন্দ্রে কোনোরকম অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সভায় মেয়র পদে অপর প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী জেএসডির শিরিন আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনুর রশীদ নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরপেক্ষ থেকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার আহŸান জানান। সভায় সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ ৫নং ওয়ার্ডের কোহিনুর আক্তার কাকলি, ১২নং ওয়ার্ডের ইমরান বাচ্চু, ১৮নং ওয়ার্ডের রাজু আহমেদ, ২৪নং ওয়ার্ডের আরিফ বকসি, ২৭নং ওয়ার্ডের শহীদুল ইসলাম এবং সংরক্ষিত আসনের ৩নং ওয়ার্ডের সুরাইয়া বেগম, ৭নং ওয়ার্ডের নাজনীন আক্তার কাজল, ৯নং ওয়ার্ডের মনোয়ারা বেগম তাদের বক্তব্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখাসহ সুষ্ঠু নির্বাচন করার দাবি জানান।
প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের বক্তব্যের আলোকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘সবাই চাচ্ছে অবাধ, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন। তাহলে অসুবিধাটা কোথায়? আমরা মনে করি কোনো অসুবিধা নেই। নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হবে। তাই এ নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম ভয়, শঙ্কা থাকতে পারে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে অনেক কষ্টের বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজকে এই স্বাধীন দেশে বর্তমান নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করেছে। আমরা তো কোনোভাবেই আমাদের কর্মকাÐ প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা হতে দিতে পারি না। সমগ্র জাতি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বাচন কমিশনের এ নির্বাচন অর্থবহ ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচন বর্তমান ইসির জন্য মহাপরীক্ষা। এ পরীক্ষায় নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিয়ে কোনো বিতর্ক ছাড়াই ইসি উত্তীর্ণ হতে চায়। প্রার্থী, ভোটার, সাধারণ মানুষ সবাইকে আমরা আশ্বস্ত করতে পারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে একটি মডেল।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, ‘ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে প্রার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে। ভোটকক্ষে প্রার্থীরা তাদের পক্ষে বিশ্বস্ত পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেবেন। সব প্রার্থী আচরণবিধি মানবেন। তাহলে নির্বাচনী পরিবেশ আরও সুন্দর হয়ে ওঠবে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কাজ থেকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন দূরে থাকবেন। নির্বাচনের আগে পুলিশের কেউই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো প্রার্থী বা তাদের কর্মী-সমর্থকদের অহেতুক হয়রানি করবেন না।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান ইসি একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। তাই নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রতিটি ব্যক্তিকে পক্ষপাতমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো পক্ষ নিয়ে ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।’
সভায় নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন মাত্র ৩২ দিন হলো দায়িত্ব নিয়েছে। এরই মধ্যে কমিশন কয়েকটি উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। কিন্তু ইসির জন্য সবচেয়ে বড় ও কঠিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ মার্চ। এদিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। এটা ইসির জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন নিয়ে কারো সাথে কোনো আপোষ নেই। কেননা আপোষের প্রশ্ন ওঠলেই তো নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে। কিন্তু ইসিকে ইঙ্গিত করে কোনো রকম প্রশ্ন তোলার সুযোগ কোনো মহলই পাবে না। কারণ নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। যে কোনো মূল্যে আমরা এ নির্বাচন সুষ্ঠু করব। আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি আর নিñিদ্র নিরাপত্তায় ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকা সেমি-ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পরিণত হবে। ইতিমধ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভিজিলেন্স টিম ও অবজারভেশন টিম রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল। অনুষ্ঠানে নির্বাচনে আইন-শৃংখলা ও নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল গাজী আহসানুজ্জামান, ডিজিএফআইয়ের কুমিল্লা শাখা অধিনায়ক কর্নেল আফম আতিকুর রহমান, র‌্যাব-১১ কুমিল্লার কম্পানী কমান্ডার মেজর মো. মোস্তফা কায়জার, কুমিল্লা কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম ও সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন