সাক্কুর প্রচারে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের ঢল
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : শান্তি সমৃদ্ধি আর আধুনিকতার মিশেলে পরিকল্পিত পরিচ্ছন্ন আলোকিত কুমিল্লা নগরী গড়ার লক্ষ্য ঠিক করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। ইশতেহারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ২৯টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। এছাড়াও কুসিক নির্বাচনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে ইশতেহারে সীমা বলেন কুমিল্লার রাজনীতির গতিপথও নির্ধারিত হবে এ নির্বাচনে।
গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরীর রামঘাট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে সীমা এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে সীমা বলেন, নির্বাচিত হলে পরবর্তী একশ’ বছরের কুমিল্লার অবয়ব, কাঠামো, সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্দেশিত থাকবে তার আগামী পাঁচ বছরের কর্মকান্ডে। বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কাজে নিজের অভিজ্ঞতার বিষয় তুলে ধরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমা বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে তার অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে এবং বর্তমান সরকারের সাথে সুসম্পর্কের বদৌলতে কুমিল্লা নগরীর কাক্সিক্ষত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। ইশতেহারে সীমা বলেন, নগরবাসীর কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিনোদন, কর্মসংস্থান, নিরাপদ জীবনযাত্রা, জলাবদ্ধমুক্ত, যানজটমুক্ত এবং মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত আলোকিত কুমিল্লা নগরী গড়ে তুলবেন। ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ ওমর ফারুকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হক রিফাত।
নির্বাচিত হলে পাঁচ বছরের মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন আধুনিক ও শান্তির নগরীতে রূপান্তরিত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচনী ইশতেহারে ২৯টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে সীমা আরো বলেন, নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়ে নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত এবং উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি নগরীর যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের বাড়তি সুবিধার জন্য প্রয়োজনে ফ্লাইওভার, ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেবেন এবং মূল নগরীর ওপর যানবাহনের চাপ কমাতে নগরীর চার পাশে বৃত্তাকার সার্কুলার রোড নির্মাণসহ নগর উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যানের সব পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবেন। নগরবাসীর ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের তত্ত¡াবধানে দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কর্মজীবী তরুণ-তরণীদের পড়ালেখার সুবিধার্থে একটি নৈশ মহাবিদ্যালয় চালু ও নগরীর পূর্বাঞ্চলে মেয়েদের জন্য একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবেন এবং সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করেন। এছাড়াও কুমিল্লার বাইরে থেকে নগরীতে আসা কর্মজীবী নারীদের আবাসন ব্যবস্থার জন্য কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপন করবেন। নগরীর দক্ষিণ প্রান্তে সদর দক্ষিণ এলাকায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে নগর শিক্ষাব্যবস্থাকে এক অনন্য উচ্চতায় নেয়ার প্রতিশ্রুতিও রাখেন ইশতেহারে।
নির্বাচিত হলে সিটির অধিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল এবং অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করাসহ আগামী পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত করের বোঝা নগরবাসীর ওপর চাপানো হবে না বলে ইশতেহারে সীমা প্রতিশ্রুতি দেন। নগরীতে আইটি পার্ক স্থাপনের কথা উল্লেখ করে ইশতেহারে সীমা বলেন, এটির সাহায্যে নতুন প্রজন্ম আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয়ের উৎস খুঁজে নিতে পারবে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে চলমান স্যাটেলাইট ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের তত্ত¡াবধানে উন্নত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ৫০০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন করবেন বলে ইশতেহারে জানান। সংস্কৃতি চর্চা, বিনোদন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে নিরাপদ নাগরিক জীবন নিশ্চিতে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখবেন বলেও সীমা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নাগরিক সেবা ও সন্তুটির বাস্তব প্রতিফলনের বিষয় নিয়ে নিজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তিন মাস অন্তর নগরবাসীর মুখোমুখি হওয়ার ঘোষণা দেন সীমা। তিনি নিজের বা পরিবারের কারো কোনো কর্মকান্ডে কেউ মনোক্ষুণœ হয়ে থাকলে এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে জয়ী করার অনুরোধ জানান।
সাক্কুর প্রচারণায় কেন্দ্রীয়
ও স্থানীয় নেতাদের ঢল
কুসিক নির্বাচনকে ঘিরে কুমিল্লা এখন পোস্টারের নগরীতে পরিণত হয়েছে। গত দুই দিনের বৃষ্টি, ঝড়ো হওয়ায় টানানো পোস্টার সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সোমবার রাত থেকে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা ফের পোস্টার টানানোর কাজে নেমে পড়ে। গতকাল ঘুম ভেঙে রাস্তায় পা রাখতেই দেখে পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী। পোস্টার আর মাইকের প্রচারণার পাশাপাশি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন গোটা নগরী। বিশেষ করে দুই মেয়র প্রার্থী বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমার সঙ্গে প্রচারণা, গণসংযোগে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের অংশগ্রহণে আরো উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে কুসিক নির্বাচন।
গণসংযোগ আর উঠোন বৈঠক ঘিরে বিরামহীন প্রচারণায় জমজমাট কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা রাত অবধি নগরীর সদর দক্ষিণের ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ অনেকেই প্রচারণায় অংশ নেন। কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও স্থানীয় নেতাদের বিশাল বহর ছিল সাক্কুর সঙ্গে। তারা সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে ভোটারদের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চান।
এদিকে গতকাল দিনভর কুমিল্লা উত্তর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হায়াত খান, মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন অঞ্জন, সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবুল হক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন ভূইয়া, উপজেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহŸায়ক অ্যাডভোকেট নাসির আহমেদ, উপজেলা ছাত্রদলের আহŸায়ক জয়নাল মোল্লা, উপজেলা যুবদল নেতা মাহমুদুল হাসান ও মাসুদসহ শতাধিক নেতাকর্মী রেইসকোর্স, পুলিশ লাইন, অশোকতলা, রেলস্টেশন এলাকায় মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে নগর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহŸান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন