স্টাফ রিপোর্টার : পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে টেলিটককে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। টেলিটকের উন্নয়নে নেয়া প্রকল্পের অর্থ ছাড় না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে না পারলে টেলিটকের গ্রাহক ধরে রাখা কঠিন হবে।’ গতকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে ভিডিও করফারেন্সের মাধ্যমে টেলিটকের কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গত বছরের আগস্টে টেলিটকের উন্নয়নে একনেকে ৬৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি ঝুলে আছে। এটি নিয়ে অনেক তদবির করছি, কারণ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী টেলিটকসহ সকল দেশি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। সে জন্যই একনেকে এ বিশাল প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘একনেকের অনুমোদিত প্রকল্পটিতে এখনও অর্থ ছাড় না হওয়ার বিষয়টিতে আমরা কিছুটা হলেও হোঁচট খাচ্ছি। টেলিটকের বিনিয়োগ যদি আমরা বৃদ্ধি করতে না পারি, অন্তত নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে টেলিটকের গ্রাহক ধরে রাখা কঠিন হবে। এটা কঠিন সত্য, এটা আমাদের মানতে হবে।’ নেটওয়ার্ক কোনো ম্যাজিক নয় যে তুড়ি দিলাম, নেটওয়ার্ক হয়ে যাবে, টাওয়ার বসে যাবে। তা তো নয়। অর্থের প্রয়োজন, এটা হলো রূঢ় বাস্তবতা। আমি কষ্টের কথাটি বললাম’। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নানা কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি আটকে গেল, এখন সেটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। অর্থ ছাড় এখনও পাচ্ছি না। এ অর্থ ছাড় না পেলে এমএনপি (মোবাইল নম্বর পোর্টবিলিটি-নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল সেবা) চালু হলে আসলে টেলিটকের অবস্থাটা কি দাঁড়াবে, তা আমার জন্য, দেশের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক হবে। আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না এ বাধাটি আমরা কেন পাচ্ছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি হতাশ হতে চাই না, আমি মনে করি প্রকল্পটির অর্থ ছাড় দ্রæত হবে। টেলিটক সম্পূর্ণভাবে এ দিকেই তাকিয়ে আছে। নিজস্ব অর্থায়নে যা যা করার টেলিটক সবই করেছে। টেলিটকের আর সক্ষমতা নেই যে, নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির জন্য আর কোনো প্রকল্প হাতে নেবে। এটি সম্ভব নয়।’ তারানা হালিম বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আমরা যদি এই অর্থটা ছাড় পাই, অবশ্যই টেলিটক নিজের পায়ে দাঁড়াবে। এটুকু প্রতিশ্রæতি দিতে পারি, এই অর্থের একটি অংশও অপব্যয় হবে না, একটি অংশও দুর্নীতির কারণে কারো পকেটে যাবে না। জিনিসটি আমি নিজে মনিটর করব।’ এরপরও যদি টেলিটক দাঁড়াতে না পারে, সেই ব্যর্থতা টেলিটকের হবে। তার আগে কিছুতেই এর দায়ভার টেলিটকের ওপর চাপাতে পারছি না। সুযোগ না দিলে ব্যর্থতা কিভাবে নেবো আমি বুঝতে পারছি না। তারানা বলেন, গত মাসে টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ছিল ৯৩টি। এ মাসে আরও তিনটি যুক্ত হলো। এখন কাস্টমার কেয়ারের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৬টি। গত মাসে রিটেইলারের সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ২০০, এ মাসে সেটি ৫৬ হাজার। টেলিটক মাসভিত্তিক টার্গেট পূরণ করছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, টেলিটকের টু-জি বিটিএস (বেজ ট্রানসিভার স্টেশন) ৩ হাজার ৭০০টি, থ্রি-জির জন্য বিটিএস (টাওয়ার) এক হাজার ৫০০। আরও ১০০টি বিটিএস যুক্ত হবে। টেলিটকের যেটুকু সাফল্য সেটুকু এসেছে তার নিজস্ব অর্থায়নে। তিনি বলেন, বাজারে সবেচেয়ে বড় অপারেটরের টাওয়ার সংখ্যা ১২ হাজার, সেখানে সমভাবে কিভাবে টেলিটক সংগ্রাম চালিয়ে যাবে তা আমার বোধগম্য নয়। ২০০৫ সালে ৬৭৩ কোটি টাকা নিয়ে টেলিটক যাত্রা শুরু করেছিল জানিয়ে তারানা বলেন, ‘এই স্বল্প বিনিয়োগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য টিকে থাকা কঠিন।’ এরপর প্রতিমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জয়পুরহাটে টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন করেন। এ সময় টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো: গোলাম কুদ্দুসসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন