রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বার্নাব্যু’র নায়ক মেসি

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : তাকে থামাতে কি করেনি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা! একের পর এক ফাউল করে দেখেছেন হলুদ কার্ড, এমনকি লাল কার্ডও। কনুইয়ের গুতোয় তার ঠোঁটকে করা হয়েছে রক্তাক্ত। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে কোনো কিছুতেই থামানো গেলো না। যাবেই বা কি করে, নামটি যে লিওনেল মেসি!
ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় ম্যাচ বলা হয় যাকে সেই ‘এল ক্ল্যাসিকো’য় ফুটবলপ্রেমীরাও দেখলেন পরিচিত সেই জাদুকরকে। দেখলেন পুরো ফুটবল মাঠকে ক্যানভাসে পরিণত করে বল পায়ে একের পর এক সুনিপুণ তুলির আঁচর দিতে। সেই ক্যানভাসটা আবার চিরশত্রুর ডেরা সান্তিয়াগো বার্নাব্যু হওয়ায় শীল্পটাও যেন পেয়েছে নতুন মাত্রা। ম্যাচের শেষ শটকে তুলির শেষ আঁচরে পরিণত করে নিজেকে আবারো জানান দিলেন মেসি, পাঁচ গোলের থ্রিলারে জিতল তার বার্সেলোনা।
আর্জেন্টাইন তারকার নেয়া ম্যাচের শেষ শটটি বার্নাব্যু ভক্তদের কাছে যেন শট ছিল না, ছিল তীরের বিষাক্ত ফলা। যে ফলাটি কেইলর নাভাসের ডান পাশ দিয়ে চোখের পলকে বেরিয়ে গিয়ে আঘাত হানে রিয়ালের জালে। আরো স্পষ্ট করে বললে রিয়ালর হৃদয়ে। যে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত লক্ষ-কোটি বার্নাব্যু ভক্তরা। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর অহমের লড়াইয়ে এবারো যে হেরে গেল রিয়াল মাদ্রিদ।
কি ছিল না এই ম্যাচে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, গোল-পাল্টা গোল, নাটকীয়তা আর শরীরী ফুটবলে মাঠ উত্তপ্ত করে রাখা, খেলোয়াড়দের মেজাজ হারানো, গোলরক্ষকদের একের পর এক কঠিন সব পরীক্ষা রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্ন্যাবুতে এদিন সব ছিল সব। ৩-২ গোলের স্কোর লাইনটাও বলে দেয় অনেক কিছুই। ইতোমধ্যে আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে, এটাই ইতিহাসের সেরা ‘এল ক্ল্যাসিকো’ কিনা। অনেকে এর পক্ষেই মত দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে দুই গোল করে ও একটি করিয়ে এল ক্ল্যাসিকোর ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে থাকলেন লিওনেল মেসি। মহানায়কই তো। এই জোড়া গোল দিয়েই যে সাবেক রিয়াল তারকা আলফ্রেড ডি স্টিফানোকে (১৪টি) ছাড়িয়ে লা লিগার এল ক্ল্যাসিকোয় সবচেয়ে বেশি গোল এখন ফুটবল জাদুকরের। সব মিলে ক্ল্যাসিকোয় নিজের গোলের রেকর্ডটাও নিয়ে গেছেন ২৩-এ। এমনই দিনে বার্সার জার্সিতে ৫০০ গোলের মাইলফলকও স্পর্শ করেন মেসি।
কাসিমিরোর ২৮তম মিনিটের গোলে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শুরুটা করেছিল রিয়াল। ৫ মিনিট বাদেই ডি বক্সে দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ে তা শোধ দেন মেসি। সহজ একটি সুযোগ হাতছাড়া না করলে বিরতির আগেই এগিয়ে যেতে পারত বার্সা। তবে ৭৩ মিনিটে মেসির সহায়তায় ইভান রাকিটিচের করা গোল ও ৪ মিনিট পর মেসিকে অহেতুক দুই পায়ে ফাউল করে জার্সিও রামোসের লাল কার্ডে ম্যাচের ইতি দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। কিন্তু ক্ল্যাসিকোর আসল রূপটাই যেন লুকিয়ে ছিল এর ভেতর। দশজনের দল নিয়ে ৮৫ মিনিটে গোল করে স্বাগতিক সমর্থকদের মুখে হাসি ফেরান হামেস রদ্রিগুয়েজ। কিন্তু তা স্থায়ী হল মাত্র ৭ মিনিট। এরপর? লিওনেল মেসির সেই ‘বিষাক্ত ফলা’। রোনালদো কারিশমা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন যে ভক্তরা, তাদের সামনেই জয়সূচক গোলের পর নিজের জার্সি খুলে নিশানার মতো তুলে ধরলেন মেসি। যেন বার্নাব্যু ভক্তদের জানান দিলেন সবখানের মত বার্নাব্যুতেও মহারাজা একজন লিওনেল মেসি।
কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে দুই গোলরক্ষকেও। মেসি-সুয়ারেজ-পিকেদের ছয়টি বল ফিরিয়েছেন কেইলর নাভাস। দুর্দান্ত সব সেভে বেনজেমা-রোনালদোদের গোলবঞ্চিত করেন মার্ক টার-স্টেগেন। স্টেগেন একাই ঠেকিয়েছেন ১২টি শট। গত দেড় দশকের লা লিগার ইতিহাসে এক ম্যাচে যা সর্বোচ্চ।
নিষেধাজ্ঞার কারণে এদিন ছিলেন না নেইমার। সেই দুঃখ ভুলে গেছেন দল জেতায়। ডেসিংরুমে মেসির ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে সেরে নিয়েছেন দলীয় বিজয় উদযাপনও। কিন্তু কোচ এনরিকের বিজয়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন না। তিনি ভালো করেই জানেন তার দল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠলেও এক ম্যাচ হাতে আছে রিয়ালের। ম্যাচ শেষে এনরিকে সেটাই সবার আগে মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমরা এখন প্রথম কিন্তু মাদ্রিদের হাতে একটা বাড়তি ম্যাচ আছে। শেষ পর্যন্ত এটা শক্তই হবে। আমরা যে লক্ষ্যে এখানে এসেছিলাম সেই ফল পেয়েছি।’ প্রিয় শিষ্যকেও প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেছেন তার দেখা ‘ইতিহাসের সেরা ফুটবলার’।
সব মিলে স্প্যানিশ লিগ যেন ফিরে পেয়েছে নতুন মাত্রা। সেটা স্বীকার করলেন রিয়াল গুরু জিনেদিন জিদানও, ‘এখনো কিছুই শেষ হয়ে যায়নি। আজকের (পরশু) পর হয়তো লিগটা আরো উন্মুক্ত হয়ে গেছে। তবে আমরা এখনো নিজেদের উপরই নির্ভর করছি।’


ইতিহাস সেরা ‘ক্ল্যাসিকো’
রিয়াল মাদ্রিদ ২ ৩ বার্সেলোনা
কাসিমিরো (২৮) মেসি (৩৩, ৯২)
রদ্রিগুয়েজ (৮৫) রাকিটিচ (৭৩)
টিভিতে দেখুন
পাকিস্তান-উইন্ডিজ, ১ম টেস্ট (৫ম দিন)
সরাসরি : টেন ৩/১ এইচডি, রাত ৯টা
আইপিএল, বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ
সরাসরি : সনি সিক্স/ইএসপিএন, রাত সাড়ে ৮টা
লা লিগা : অ্যাট.মাদ্রিদ-ভিয়ারিয়াল
সরাসরি : সনি সিক্স/টেন ১, রাত দেড়টা
পোকাল (জার্মান কাপ) : সেমিফাইনাল ১
সরাসরি : টেন ২, রাত পৌনে ১টা
ফ্রেঞ্চ কাপ (সেমিফাইনাল), অঁজার-গুইগাম্প
সরাসরি : নিও স্পোর্টস, রাত ১টা
টেনিস : বার্সেলোনা ওপেন
সরাসরি : টেন ২, বেলা ৩টা
এনবিএ : পোর্টল্যান্ড-গোল্ডেন স্টেট
সরাসরি : সনি সিক্স, সকাল সাড়ে ৮টা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন