শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

মংলা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৭ জনের স্থলে আছেন মাত্র ৫ জন চিকিৎসক নেই অপারেটর, হয় না অপারেশন আর এক্স-রে

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মনিরুল ইসলাম দুলু : সামুদ্রিক বন্দর, উপজেলা ও পৌরসভা এই নিয়ে মংলা। এখানে দুই লক্ষাধিক লোকের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র মাত্র একটি। ২৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৫ জন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট ১০ জনের স্থলে একজনও নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও এক্স-রেরও ব্যবস্থা নেই। এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোনো অ্যানেসথেটিস্ট নেই। ফলে কোনো ধরনের অপারেশন হয় না। আবার ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এখানে এক্স-রে অপারেটরের পদটি খালি রয়েছে। ফলে রোগীরা এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো এক্স-রে সুবিধা পান না। প্যাথলজির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি থাকেন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে। ফলে এ এলাকার জনসাধারণ চিকিৎসা সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র উদ্বোধনের মাসখানেক পরই অকেজো হয়ে পড়ে এক্স-রে মেশিনটি। অনেক চেষ্টা করেও মেশিনটি ঠিক করা সম্ভব হয়নি। এরপর ২০০৯ সালের অক্টোবরে আনা হয় অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। সেটিও চালু করা যায়নি। আবার এক্স-রে মেশিন পরিচালনার জন্য ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজারও নেই। ফলে এ হাসপাতাল থেকে রোগীরা কোনো এক্স-রে সুবিধা পাচ্ছেন না।
গত ১৯ এপ্রিল স্থানীয় এমপি তালুকদার আ: খালেকের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মংলা উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় হাসপাতালের আরএমও ডা: শাহিন হাসপাতালের নানা সমস্যা তুলে ধরে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে একজন অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিস্ট), একজন মেডিসিন ও একজন সার্জারি চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ছাড়া বর্তমান ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে আগের ৩১ শয্যার। সমস্যা রয়েছে বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে আরো জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এ্যানেসথেসিয়া) পদটি শূন্য। ফলে এ উপজেলার কোনো জনগণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো অপারেশনের সুবিধা পায় না। আবার ব্যবহার না করার কারণে অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে হাসপাতালটি ঘিরে রয়েছে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অতিষ্ঠে সাধারণ রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা অধিকাংশ সময় ডাক্তারদের ঘিরে রাখেন।
মংলার সোনাখালী গ্রামের কায়কোবাদ গোলদার জানান, আমার স্ত্রীর সন্তান প্রসবের জন্য এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তির জন্য গেলে ডাক্তার বলেন, এখানে সিজার করার সুযোগ নেই। রোগীকে কোনো ক্লিনিক অথবা খুলনা মেডিক্যালে নিয়ে যান। পৌরসভার কম্পিউটার ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, কোনো দুর্ঘটনার রোগী এলে ডাক্তাররা বলেন, এখানে চিকিৎসা হবে না। খুলনা নিয়ে যান। মংলা থেকে খুলনার দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের বেশি। আবার নদী পার হয়ে যেতে হয়। ফলে রোগীর জন্য এ এক চরম ভোগান্তি। আবার কোনো কোনো গুরুতর রোগী খুলনা নেয়ার পথে মারাও যান।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক মো: শাহিন জানান, আমরা চাই দুর্ঘটনাকবলিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে। কিন্তু অ্যানেসথিসিস্টের অভাবে আমরা কোনো অপারেশন করতে পারি না। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের সুবিধাসংবলিত হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ আবদুর রকিব চিকিৎসক সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সমাধান হয়নি। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, হাসপাতালের বিরাজমান সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্রæত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকার সময়ে যাতে নির্বিঘেœ সেবা দেয়া যায় সে জন্য হাসপাতালের জন্য একটি সোলার প্যানেল দেয়া হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন