মংলা সমুদ্র বন্দরে মোবাইল হারবার ক্রেনের সাহায্যে আজ বুধবার সর্বপ্রথম শুরু হলো আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। এর মধ্যদিয়ে ক্রেন-বিহীন জাহাজগুলোর কন্টেইনার ওঠানামার সক্ষমতা অর্জন করলো মংলা বন্দর। এর ফলে দক্ষতা, সক্ষমতায় দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সমুদ্র বন্দর আরও এগিয়ে যাবে এমনটি আশাবাদ বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীদের। বিশ্বের সমুদ্র বন্দরসমূহে বর্তমানে ডেরিক বা ক্রেন-বিহীন কন্টেইনার জাহাজই বেশিরভাগ গমনাগমন করছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, মংলা বন্দরের জেটিতে গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মোবাইল হারবার ক্রেন (জার্মান ম্যানুফাকচারার) সংগ্রহ করা হয়। গত ২৬ জুন মোবাইল হারবার ক্রেনটি বন্দরে এসে পৌঁছায়।
আজ এর অপারেশনাল কার্যক্রম চালুর সময় উক্ত কার্যক্রমের সময় উপস্থিত মংলা বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সদস্য (অর্থ) ইয়াসমিন আফসানা এবং শীর্ষ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই মোবাইল হারবার ক্রেন সর্বোচ্চ ১৪ সারি কন্টেইনার বোঝাই গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডলিং এবং সর্বোচ্চ ৮৪ মেট্রিক টন উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন। এর সাহায্যে অল্প সময়ে অনেক বেশি কন্টেইনার খালাস করা সম্ভব হবে। ফলে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের টার্ন রাউন্ড টাইম (জাহাজের গড় অবস্থানকালে) কমে যাবে । এর মাধ্যমে বিদ্যমান জেটিতে বার্ষিক অতিরিক্ত ৩৬টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ ও বার্জ হ্যান্ডলিং করা যাবে। এর মাধ্যমে ১২ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত আয় হবে বন্দরের।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মোবাইল হারবার ক্রেনটি বন্দরের যান্ত্রিক সরঞ্জাম বহরে যুক্ত হয়ে আজ থেকে এর অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর ফলে সামগ্রিকভাবে বন্দর অধিকতর গতিশীল হবে। বেড়ে যাবে বন্দরের সক্ষমতা।
জানা গেছে, মোবাইল হারবার ক্রেনটি মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেক লিঃ কর্তৃক সরবরাহ করা হয়েছে। ৬৪ টি চাকাযুক্ত এই ক্রেন বিদ্যমান জেটির লোড সহনশীলতার সীমার মধ্যে ৫ থেকে ৯ নম্বর জেটি বরাবর চলাচল করতে পারবে। ক্রেনটি দ্বারা তিনটি মুডে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। যেমন- স্প্রেডার অপারেশন, গ্রাব অপারেশন ও হুক অপারেশন। মূলত কন্টেইনার অপারেশন কাজে মোবাইল হারবার ক্রেনটি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর বুমটি ৪৮ মিটার দীর্ঘ হওয়ায় খুব সহজে ১৪ সারি কন্টেইনার বোঝাই গিয়ারলেস জাহাজ থেকে কন্টেইনার খালাস, বোঝাই করতে পারবে। ৪০ মিটার কার্যকারী রেডিয়াসে অটোমেটিক স্প্রেডারের নিচে সর্বোচ্চ ৩২ টন লোড হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম ক্রেনটির সর্বোচ্চ উত্তোলন সক্ষমতা ৮৪ মেট্রিক টন।
তাছাড়া পানগাঁও বন্দরের কন্টেইনার বার্জ কার্গোর জাহাজের মাধ্যমে মংলা বন্দরে এনে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। সমুদ্রগামী গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য এটি ব্যবহার করা যাবে। ডেরিক ক্রেন সম্বলিত জাহাজের ক্রেন অচল হয়ে গেলে সেই জাহাজের কন্টেইনার মোবাইল ক্রেনের সাহায্যে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। সাড়ে ৩ মিটার ওয়াকিং রেডিয়াসে সর্বোচ্চ ৮৪ মেট্রিক টন ও গ্রাফের মাধ্যমে লুজ মালামাল হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
আজ মোবাইল ক্রেনের কার্যক্রম চালুর সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রঃ ও উঃ) প্রকৌশলী মোঃ আলতাফ হোসেন খান, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম আব্দুল আলীম, সচিব ওহিউদ্দিন চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী, পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন