দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলাকে আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করার জন্য বন্দর চ্যানেলের ইনারবার (অভ্যন্তরীণ) ড্রেজিং (খনন) এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।পশুর চ্যানেলের জয়মনির ঘোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার ইনার বার খননের ফলে বন্দরের নাব্যতা সংকট নিরসন হবে।মোংলা বন্দর কার্যত চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প বন্দর হিসেবে পরিনত হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মযজ্ঞের বেশিরভাগ প্রক্রিয়া শেষ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।শনিবার (১৩ মার্চ) বন্দরের পশুর চ্যানেলের ১৯ কিলোমিটার ইনারবার (অভ্যন্তরীণ) ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে মোংলা বন্দরের গতিধারা আরও কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা।আউটবার(বহিনোঙ্গর) ড্রেজিং শেষে ইনারবার (অভ্যন্তরীণ) ড্রেজিংয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মোংলাবন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা।
রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ফেয়ারওয়ে বয়া পর্যন্ত চ্যানেলের মোট দৈর্ঘ্য ১‘শ৪৫ কিলোমিটার। মোংলা বন্দর জেটি হতে হারবারিয়া (জয়মনির ঘোল) পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার ইনারবার হিসেবে চিহ্নিত। ইনারবার চ্যানেলের বর্তমান গভীরতা ৫দশমিক ৫ মিটারের কম।বর্তমান এই গভীরতায় জোয়ারের সুবিধা নিয়ে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৭দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে আসতে পারে। ২০১৮ সালে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইনারবার ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করলে চুড়ান্তভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক) ও ইনারবার ড্রেজিং এর প্রকল্প পরিচালক শেখ শওকত আলী বলেন, “মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৭‘শ ৯৩ কোটি ৭২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে বন্দর জেটি হতে জয়মনির ঘোল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার খনন করা হবে।এর ফলে ৯.৫০ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দর জেটিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে।বর্তমানে বন্দর জেটিতে মাত্র ৭ মিটার গভীরতার জাহাজ আসতে পারে।১৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়া এই প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালে শেষ হবে। এই সময়ে ২১৬.০৯ লাখ ঘনমিটার বালু ড্রেজিং করা হবে। চীনা কোম্পানি জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি’ ঠিকাদার হিসেবে এই ড্রেজিং কাজ করবে।
ইনারবার ড্রেজিংয়ের ফলে উত্তোলিত পলিমাটি ও বালু ফেলার জন্য ১৫শ’একর জমির দরকার হবে। পশুর নদীর তীরবর্তী অল্প গভীরতা সম্পন্ন প্রায় ৫শ একর জমিতে জিওটেক্সটাইল টিউব দ্বারা ডাইক নির্মাণ করে সেখানেই এসব মাটি ফেলা হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে মাটি ফেলার জন্য আরও জমি প্রস্তুত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক শেখ শওকত আলী।
বন্দর ব্যবহারকারী শিপিং এজেন্ট এইচ এম দুলাল বলেন, মোংলা বন্দরের প্রধান সমস্যা হচ্ছে নাব্যতা সংকট।নাব্যতা সংকট নিরসনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ইনারবার ড্রেজিংয়ের জন্য যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরের ব্যবহার বহুগুণে বাড়বে। সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে যেসব কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসে সেগুলো পূর্ণ লোড অবস্থায় প্রায় ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের হয়ে থাকে। কিন্তু মোংলার বর্তমান গভীরতা ৭ মিটার। তাই নাব্য সংকটের কারণে এসব জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না। তাই আসতেও চায় না। ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে এ সংকট কেটে যাবে বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, এর আগে আমরা আউটার বার ড্রেজিং করেছি। যার সুফল বন্দর ব্যবহারকারীরা ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে।পূর্বের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ জাহাজ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ইনারবার ড্রেজিংয়ের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটি সম্পূর্ণ হলে বন্দরের কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, নানামুখী উন্নয়নের ফলে আগের তুলনায় মোংলা বন্দরের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে।ভবিষ্যতেও মোংলা বন্দরের এই উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন