সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনের কোলঘেঁষে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মংলা। দেশের তথা খুলনাঞ্চলের অর্থনীতি উন্নয়নের পূর্বশর্ত মংলাবন্দরে ক্রমেই গতিশীলতা আসছে। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে রেললাইনের কাজ। বিনিয়োগকারীরা আবারও ফিরে আসছে এ অঞ্চলে। এ জনপদ এখন পদ্মার এপারের এক সম্ভাবনাময় বাণিজ্যের নতুন চালিকা শক্তি।
এক দশক আগেও ব্যয়ভার বহনে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হতো মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষকে। ২০০৮ সাল থেকে এ বন্দরে গাড়ি, খাদ্যশস্য, সার ও ক্লিংকার আমদানি এবং হিমায়িত পণ্য রপ্তানি হওয়ার কারণে লোকসান কাটিয়ে বর্তমানে বন্দরটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বন্দরে জাহাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকদের কাজও বেড়েছে।
বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর মংলা বন্দরে ৭ দশমিক ১৭ ভাগ জাহাজ আগমন বেড়েছে। আর ৮ দশমিক ৪১ ভাগ জাহাজ নির্গমন বেড়েছে। চলতি মাসে পূর্বের তুলনায় অনুযায়ী ৯ দশমিক ০৮ ভাগ রাজস্ব আয় বেড়েছে। রাজস্ব ব্যয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৭ ভাগ। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের চেয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মুনাফা ৭ দশমিক ৪৩ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।
সূত্রমতে, আলোচ্য বিগত ৬ মাসে মংলাবন্দরে বিদেশি জাহাজ আগমন বেড়েছে ৩২টি। যা ৭ দশমিক ১৭ ভাগ বৃদ্ধি। আর বিদেশি জাহাজ নির্গমন বেড়েছে ২৮টি। যা ৬ দশমিক ৪১ ভাগ বৃদ্ধি। কার্গো/পণ্য ওঠানামা বেড়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। যা ৪ দশমিক ৯৮ ভাগ বৃদ্ধি। কন্টেইনার বেড়েছে ২৩৭১টি। যা ৭ দশমিক ৪৯ ভাগ বৃদ্ধি। রাজস্ব আয় বেড়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। যা ৯ দশমিক ০৮ ভাগ বৃদ্ধি। আর রাজস্ব ব্যয় বেড়েছে ১৫ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার টাকা। যা ১৭ দশমিক ২৭ ভাগ বৃদ্ধি।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জাহাজ এসেছে ৪১৬টি, আয় হয় ১৭০ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাহাজ আসে ৪৮২টি, আয় হয় ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাহাজ আসে ৬২৩টি, আয় হয় ২২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জাহাজ আসে ৭৮৪টি, আয় হয় ২৭৬ কোটি ১৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাহাজ আসে ৯১২টি, আয় হয় ৩২৯ কোটি ১২ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
মংলাবন্দরের চীফ প্ল্যানিং অফিসার জহিরুল হক বলেন, পুরনো অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে ডিসেম্বর মাসে এসে ব্যয় বেড়েছে। এর ফলে ২০১৮ এর ডিসেম্বরের তুলনায় ২০১৯ এর ডিসেম্বরে নীট মুনাফা সামান্য হ্রাস পেয়েছে। সব মিলিয়ে বন্দরের কার্যক্রম ও অগ্রগতি ইতিবাচক অবস্থানেই রয়েছে। অর্থবছর শেষে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শেখ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মংলাবন্দর এখন দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য কোনো দেশই একটি বন্দরের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। তাই দেশের স্বার্থেই মংলাবন্দরের গতিশীলতা বাড়ছে। নেপাল ভারতসহ অন্যন্য দেশের আমদানি রপ্তানিতে মংলাবন্দরের প্রাধান্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ ঢাকা থেকে মংলাবন্দরের দূরত্ব ১৬০-১৭০ কিলোমিটার। আর পায়রা বন্দর রয়েছে ২৭০ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম বন্দর রয়েছে ২৯০ কিলোমিটার দূরত্বে। তাই দূরত্বের দিক থেকে মংলাবন্দর প্রধান্য পাচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে মংলাবন্দরের ইনার বার ড্রেজিংয়ের জন্য ৭৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্পটি ২০২২ সালে সম্পন্ন হবে। এ ড্রেজিং সম্পন্ন হলে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ সরাসরি বন্দর জেটিতে অবস্থান নিতে পারবে। যা বন্দরের গতিশীলতাকে আরও বৃদ্ধি করবে। আর এ কাজটি নির্বিঘ্ন করতে ৪টি জেটির কাজ চলমান রয়েছে। যা ২০২১ সালে সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বন্দরকে ঘিরে সরকারের নানা পরিকল্পনার কারণে এ বন্দর ক্রমেই গতিশীল হচ্ছে। বন্দর উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে মংলাবন্দরের চিত্র পাল্টে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন