শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রূপগঞ্জে আরো ৫টি এসএমজি রাইফেল উদ্ধার নিষ্ক্রীয় করা হলো গ্রেনেড, আটক ৪

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে আরো ৫টি এসএমজি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের পাইশকা (বাসন্দা) বালুরঘাট এলাকা থেকে ওই অস্ত্র গুলো উদ্ধার করা হয়।
অভিযান শেষে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পুলিশ জানতে পারে, পাইশকা (বাসন্দা) বালুরঘাট এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে আরো ৫টি এসএমজি চাইনিজ অস্ত্র ফেলে রাখা হয়। পরে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ওই ৫টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার অভিযানে অংশ গ্রহন করেন, নারায়ণগঞ্জ ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স ডুবুরি ইউনিট। অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স ডুবুরি ইউনিটের উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ, রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনসহ আরো অনেকে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স ডুবুরি ইউনিটের উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর ৮ থেকে ৯ ফুট পানির নিচ থেকে একটি করে এসএমজি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, উপজেলার পুর্বাচল উপশহরের ৫নং সেক্টরের ভুইয়া বাড়ি ব্রীজ সংলগ্ন গুতিয়াবো এলাকার ক্যানেলে  (লেকে) উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড (বোমা) নিষ্ক্রীয়করণ সমাপ্ত করেন। শনিবার সকাল থেকেই গ্রেনেড নিষ্ক্রীয়করণ কাজ চালাচ্ছেন বোমা নিষ্ক্রীয়করণ দল।
দুপুর দেড়টায় রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্রেনেড  (বোমা) নিষ্ক্রীয় করেছেন বোমা নিষ্ক্রীয়করণ দলের সদস্যরা। বোমা নিষ্ক্রীয়করণ কাজ চলার কারনে পুরো এলাকাজুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়। বোমা নিষ্ক্রীয়করণ কাজে উপস্থিত ছিলেন, বোমা নিষ্ক্রীয়করণ দলের এডিসি জাহাঙ্গীর আলম, জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল্লা আল মাসুদ, ইন্সপেক্টর শহিদুল আলমসহ আরো অনেকে।
শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, রূপগঞ্জে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ইতোমধ্যে শরীফ খান, রাসেল, শান্ত ও শাহীন নামের চারজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের তারা স্বীকার করেছে আরো ৫টি অস্ত্র অন্যত্র রেখেছে। তবে তারা এসব অস্ত্রের চালানের সঙ্গে জড়িত না। এর পেছনে অনেক গোষ্ঠী বা চক্র জড়িত। সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে আটক ৪জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হবে। এসব অস্ত্র বাংলাদেশেরও না। বিদেশের কোন দেশ থেকে এসব অস্ত্রগুলো আনা হয়েছে, কারা এনেছেন সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে পাওয়া ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে এসব অস্ত্রের কিছুটা মিল আছে। তবে সেটাও তদন্তও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই চলছে।
অপর দিকে, বাগলা এলাকার গ্রেফতারকৃত শরীফ খানের স্ত্রী ফায়িমা বেগম বলেন, কর্মজীবনের তাগিতে গত ১২ বছর আগে সৌদি আরব ৮ বছর  ও দুবাই ২ বছর কাটিয়ে গত ২ বছর আগে দেশে ফিরে। এরপর আমার স্বামী দেশে ফিরে ২ বছর র‌্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেছিলেন। পরে শরীফ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। আমার জানা মতে আমার স্বামী কোন অস্ত্রের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে, মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত লোকদের সঙ্গে কথা বলতো। ওই লোকদের ফোনে শরীফ বলতো, তোদের সঙ্গে আমি যাবো না। আমাকে আর ফোন দিবি না। হয়তো ওই লোকজনই আমার স্বামী শরীফকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
বাগলা এলাকার জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, শরীফ খান মাদক ব্যবসা করে বিধায়, তাকে আমরা এলাকা থেকে বের করে দিয়েছিলাম।  
জানা গেছে, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বাগলা এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শরীফ খান বাড়িতে বড় ধরনের অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে পুলিশের কাছে সংবাদ আসে। গত মঙ্গলবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ শরীফ মিয়ার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে একটি এলএমজি রাইফেল উদ্ধার করে। অভিযান পরিচালনাকালে অস্ত্রবহনকারী শরীফ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর পরের দিন বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া এলাকা থেকে শরীফ খানকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত শরীফ খানের স্বীকারোক্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র ওসি মাহমুদুল ইসলাম ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার পুর্বাচল উপশহরের ৫নং নম্বর গুতিয়াবো আগারপাড়া এলাকার বালুচর থেকে প্রথমে দুটি এসএমজি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করা হয়।
পরে দ্বিতীয় দফায় ভুইয়া বাড়ি ব্রীজ সংলগ্ন ক্যানেলের (লেক) পানি থেকে পর্যায়ক্রমে ৬২টি চায়না এসএমজি, ৫টি ৭.৬২ পিস্তল, ২টি রকেট লাঞ্চার, ৪৯টি মটারসেল, ২টি ওয়ারলেসসহ বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলের চার দিক অতিরিক্ত র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এদিকে, বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন পুর্বাচল উপশহরের আশ-পাশে বসবাসরত এলাকাবাসী। এ ধরনের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পুর্বাচল উপ-শহর এলাকাটি এক সময় জনবহুল এলাকা ছিলো। রাজধানীর অতি কাছের এ এলাকাটিতে হাজার হাজার মানুষের বসবাস ছিলো। পুর্বাচল উপশহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক পুরো এলাকাটিকে অধিগ্রহন করে নেয়। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। বর্তমানে পুরো পুর্বাচল উপশহরটি ফাঁকা ও নির্জন অবস্থায় রয়েছে। অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে পুর্বাচল উপ-শহরকে বেছে নিয়েছে। এখানে প্রায় সময়ই লাশ উদ্ধারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমুলক কর্মকান্ড ঘটে থাকে। বিশেষ করে ৫নং সেক্টরের ক্যানেলটি  (লেক) একে বারেই নির্জন ও দুর্গম জায়গা। হয়তো নিরাপদ ভেবে অপরাধীরা এখানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ রেখেছে। এই এলাকা লোকজন না থাকায়  নিরব পড়ে থাকে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন দামী গাড়ী করে অচেনা লোকজন যাতায়াত করে থাকে। ফলে এই এলাকায় নানা অপরাধ ঘটে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন