শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

কেন এই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি

| প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
সয়াবিন, চিনি, মসুর ও মটর ডাল ইত্যাদির আমদানি চাহিদার চেয়ে বেশি হয়েছে। এপ্রিলে আমদানিকৃত পণ্য দিয়েই রমজানের চাহিদা পূরণ হতে পারে। আমদানিতে কোন সমস্যা নেই। বিশ্ব বাজারে নিত্য পণ্যের অধিকাংশের দাম কমতির দিকে। সয়াবিনের দাম গত চার মাস ধরে কমেই যাচ্ছে। গত তিন মাস ধরে গড়ে প্্রতি মাসে পৌনে দুই লাখ টন চিনি আমদানি করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমেছে। আগে এক কেজি চিনির দাম ছিল ৪৫ সেন্ট। এখন কমে তা হয়েছে ৪০ সেন্ট। রোজার মাসে চিনির চাহিদা ২ লাখ টন। চিনির দাম বাড়ার কোনই কারণ নেই। অথচ চিনির দাম বেড়েছে। সয়াবিন ও পাম তেলের কথাই ধরা যাক। চাহিদা ১ লাখ ৮০ থেকে ২ লাখ টন। গত এপ্্িরলে আমদানি হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টন। এরপরে কিছু মজুদ তেল তো ছিলই। প্্রশ্ন হল, তাহলে সয়াবিনের দাম বাড়ল কেন? অধিকাংশ নিত্য পণ্য চাহিদা অনুযায়ী বা চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি হলেও দাম কমেনি, বরং বেড়েছে।
প্রধানত দুটি কারণে পণ্যের দাম বাড়ে। এক, বিশ্বাবাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি; দুই, চাহিদার চেয়ে আমদানি কম হলে। এই মুহুর্তে এর কোনটাই নেই। তবুও দফায় দফায় দাম বাড়ছে। বাজারজাত কোম্পানি দাম যা বাড়ায় তারচেয়ে চেয়ে বেশি বাড়ায় পাইকারী ব্যাবসায়ীরা। খুচরা বাজার সব সময়ই নিয়ন্ত্রণহীন। মূল্য টাঙিয়ে পণ্য বিক্রি করার কথা। কোথাও মূল্য তালিকা চোখে পড়ে না। পণ্য বাজারজাতকারী কোম্পানি একটা পণ্যে কত টাকা মুনফা করবে, তার কোন নীতিমালা এবং নজরদারি আছে কিনা জানি না। ফলে এক অর্থে কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমত ব্যবসা করছে। খুচরা দোকানদাররা পণ্যের গায়ে লেখা মূল্যে পণ্য বিক্রি করে না, এমন অভিযোগ পুরানো। বাজারজাতকারী কোম্পানি, পাইকারী ব্যবসায়ী, খুচরা দোকানদার সব পর্যায়েই কোন না কোন ভাবে ভোক্তারা ঠকছে। যারা দিন আনে দিন খায়, নিন্ম মধ্যবিত্ত যারা তাদের কথা কি একটিবার কেউ ভাববে না? আয় তো দফায় দফায় তাদের বাড়ে না। পণ্যের দাম বাড়লে তারা হিমসিম খায়। ত্রাহী অবস্থায় পড়ে যায়। এক তরফা সরকারকে দোষারূপ করে লাভ নেই। কারণ অসাধু ব্যাবসায়ীদের হাত অনেক লম্বা। তারা অনেক সময় সরকারি সিদ্ধান্তও মানতে চায় না।  বাণিজ্যমন্ত্রীকে তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করতে হয়।
বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে কমে না। বলা হয়, বেশি দামে কেনা। কতটুকু পণ্য কোম্পানি বেশি দামে কিনেছিল। অতঃপর সেটা শেষ হয়ে গেল। তারপর কম দামে কেনা পণ্য কম দামে ভোক্তা পাচ্ছে কিনা? এই পুরো ব্যাপারটা দেখার যেন কেউ নেই। কখনো শুনিনি ওমুক পণ্যের দাম কমেছে। অথচ প্রায়ই অনেক পণ্যের দাম বিশ্ব বাজারে কমে যায়। দফায় দফায় কমে। দুঃখজনক এর প্রভাব কমই বাংলাদেশে পড়ে। ধর্মীয় দিক বিবেচনায় রমজানে পণ্যের দাম কমার কথা। বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশে কমে। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি, ক্ষমা পাবার জন্য ব্যবসায়ীরা কম লাভে পণ্য বিক্রি করে। যেটা একদমই বাংলাদেশে দেখা যায় না। যদিও মসজিদে মুসল্লিতে ভরে যায়। পণ্য গুদামজাতকারীরাও নামাজ পড়ে, রোযা রাখে। অথচ, যারা পণ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তারা ইসলামে অভিশপ্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নবী রাসূল সা. বলেন, ‘আমদানিকারকরা লাভবান হবে; পক্ষান্তরে গুদামজাতকারী অভিশপ্ত হবে’। (ইবনে মাজাহ-২২৩৬) । নবী করীম সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের উপর অভাব অনটন সৃষ্টি করে খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে (আশক্সক্ষা আছে) আল্লাহতায়ালা তাকে কুষ্ঠরোগ এবং দারিদ্র্যে পতিত করবেন’ (ইবনে মাজাহ-২২৩৮)।
প্রশ্ন হলো, তাহলে দাম বৃদ্ধি করে এই অনৈতিক অসাধু ব্যবসা বন্ধ করা যাবে কীভাবে? পণ্য আমদানি থেকে পণ্য ভোক্তার হাতে পৌঁছা, এই পুরো প্রক্রিয়াটি সরকারের কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। একটু এদিক সেদিক করলেই কঠিন সাজা দিতে হবে। হতে পারে সেটা বড় অংকের আর্থিক জরিমানা। আর যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের সততা থাকতে হবে। সব মানুষের কথা তাদের ভাবতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন