শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

| প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সারাদেশে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতির মতো মারাত্মক অপরাধ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব অপরাধের বিবরণ ও ধরন এমন যে কোনো সুস্থ্য এবং বিবেকবান মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। গা শিউরে উঠা একেকটি ঘটনা মানুষের মনোজগতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। একশ্রেণীর মানুষের বর্বরতা ও নৃশংসতা মধ্যযুগকেও হার মানাচ্ছে। কোনোভাবেই যেন এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এসব ঘটনার গ্রাফ ক্রমেই উর্ধ্বমুখী। পুলিশের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনেও অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন মাসে সারাদেশে খুন হয়েছে ৯৫০ জন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১০৯টি। প্রতিদিন গড়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১০টি এবং ধর্ষণ হয়েছে ১২টি। তবে এ প্রতিবেদনের বাইরেও যে আরও অনেক খুন, ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে, তা নিশ্চিত। পুলিশের প্রতিবেদনেই যদি এ চিত্র উঠে আসে, তবে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতটা অবনতি হয়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রতিদিন গড়ে ১০টি খুন এবং ১২টি ধর্ষণের ঘটনাকে যদি স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলা হয়, তবে কতটি খুন ও ধর্ষণ হলে তা অস্বাভাবিক বলে গণ্য হবে?
সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়ায় মা-মেয়ের গণধর্ষণ এবং নির্যাতনের ঘটনাটি দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র এ নিষ্ঠুরতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা ঘটায় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এর রেশ কাটতে না কাটতেই সাভারে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া দেখা যায়, অধিকাংশ খুন ও ধর্ষণের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সামাজিক অপরাধের মাধ্যমেও খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। দেখা যাচ্ছে, একদিকে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতা-কর্মী যেমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে সমাজের কিছু মানুষও পশুবত হয়ে উঠছে। উভয় ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। ঘটনা ঘটার পর পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার কারণে কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ক্ষমতার দাপটের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারামারিসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব অপকর্মের সাথে জড়িতদের ক্ষমতার উৎস তাদের ব্যক্তিগত নয়, ক্ষমতাসীন দলের। তাদের মধ্যে এ মনোভাব সবসময় কাজ করে, অপরাধ করলেও দল তাদের সহায়তা করবে। ফলে তারা বেপরোয়া হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাÐে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের নিবৃত্ত করার সাহস পায় না। আবার ব্যাপক দলীয়করণের ফলে অপরাধীরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যদি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের দিকে তাকিয়ে অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করত, তবে ক্ষমতাসীন দলের কেউ অপরাধ করার সাহস পেত না। আইনের শাসনের এই ব্যত্যয় হওয়ার ফলেই ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতা-কর্মী বেপরোয়া হয়ে যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে। আবার এটাও লক্ষ্যণী, বিরোধী দলগুলোর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতটা তৎপর অন্য ক্ষেত্রে ততটা তৎপর নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ দ্বিমুখী আচরণও সমাজের ভারসাম্য বিনষ্ট করে ফেলছে। সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির কারণ, মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়, নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, পরিবারের সদস্যদের দিকে সঠিক দৃষ্টি না দেয়া, ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে অশ্লীল ও পর্নোগ্রাফি দেখার অবাধ সুযোগ ইত্যাদি। এসব কারণে ধর্ষণ ও খুনের মতো বিভৎস ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে। এক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের অভিভাবক শ্রেণীর নিষ্ক্রিয় ও উদাস হয়ে পড়াও ভূমিকা রাখছে। পরিবার ও সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ যেন পারস্পরিক সুসম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকের মধ্যেই গা বাঁচিয়ে চলা ও দায় এড়ানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে তাদের আশপাশের একশ্রেণীর মানুষ প্রশ্রয় পাচ্ছে এবং খুন-ধর্ষণের মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দায় মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপরই বর্তায়। আতঙ্কিত হবার কিছু নেই বা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এমন বক্তব্য দায় এড়ানোর বার্তাই দেয়। ঘটনা ঘটার পর তৎপর হওয়ার মধ্যে কৃতিত্ব নেই। ঘটনা যাতে না ঘটে, এমন পরিবেশ তৈরি করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব। যেহেতু পুলিশ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত খুনসহ অন্যান্য অপরাধ বৃদ্ধি পায়, তাই এ সময়টাতে তাদের সতর্ক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এর প্রতিকারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এলাকাভিত্তিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া দরকার। সমাজের বিশিষ্টজনদের সাথে নিয়মিত বৈঠক ও আলাপ-আলোচনা করে দিক নির্দেশনা দেয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় কারা কোন অপরাধের সাথে জড়িত তার তালিকা নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। এ তালিকা ধরে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। অপরাধী যেই হোক, তাকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ অটুট রাখতে এবং অবক্ষয় ঠেকাতে এলাকার অভিভাবকদের সক্রিয়া হওয়া বাঞ্চনীয়। পরিবারের প্রতিটি সদস্যর আচার-আচরণের দিকে অভিভাবকদের তীক্ষè দৃষ্টি রাখা উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Disha Disha ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৫:০৮ পিএম says : 0
2006
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন