সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ব্যাপারে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংসদ বিচার বিভাগের সাথে বিরোধের পথে হাঁটছে। ভারতের প্রখ্যাত ইংরেজি দৈনিক ‘দি হিন্দ’ুর গতকাল সোমবার প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ মন্তব্য করা হয়।
এতে বলা হয়, ২০১৪ সালে পাশ করা ষোড়শ সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা অযোগ্য বা অসদাচরণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে সংসদকে দু’তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তাদের অপসারণ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ সংশোধনী বিচারকদের ইমপিচ করার সংসদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে এবং তা ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান অনুযায়ী ছিল। এ বছরের জুলাইতে সুপ্রিম কোর্ট এ সংশোধনী বাতিল করে বলে এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরোধী। সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাসহ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। আওয়ামী লীগের প্রাধান্যমন্ডিত সংসদ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেই শুধু দৃঢ়সংকল্প নয়, তারা এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মন্তব্যের মধ্যেও ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে সংবিধান হচ্ছে জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছার ফসল, কোনো এক ব্যক্তির নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য অপমানজনক বলে ব্যাখ্যা করে। বাংলাদেশের বৃহত্তম বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় পার্লামেন্টে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। বিএনপি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে । তবে তাদের অবস্থান দেখে মনে হয় , এ রায়ের কারণে আওয়ামী লীগ বিব্রত হওয়ায় তারা খুশি এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিষয়ে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট নয়।
বাংলাদেশের মেরুকরণকৃত রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর জন্য কোনো বিষয়ে রাজনৈতিক গলাবাজি ছাড়া বিতর্ক করা কঠিন। এ অবস্থায় একা সে কথা বলতে পারে সেই যে বিচার বিভাগ ও সংসদের মধ্যে ক্ষমতা পৃথক করার সাথে সম্পর্কিত। সুপ্রিম কোর্ট বলছে যে বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থা যুক্তরাজ্য বা ভারতের মত নয়। ঐ সব দেশে আইন প্রণেতাদের বিচারকদের ইমপিচ করার ক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের ইমপিচমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের বিবেকমত ভোট দেয়ার স্বাধীনতা নেই। অনুচ্ছেদ ৭০ মোতাবেক তারা কোনো বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট না দিতে বাধ্য। এ বিষয়টি কোনো সম্ভাব্য ইমপিচমেন্টের ব্যাপারে পক্ষপাতহীন বিবেচনার ক্ষেত্রে বাধা এবং যারা নির্বাহী ক্ষমতায় আছেন তারা বিচারক নিয়োগে অন্যায় প্রভাব বিস্তার করেন। বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সংঘাতে যাবার পথ গ্রহণের পরিবর্তে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যগণ ও এটর্নি জেনারেলের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিভিউ আবেদন পেশ এবং নিরপেক্ষ ভাবে তাদের অবস্থান তুলে ধরা ভালো হবে। দেশের অতীতের স্বৈরাচারী শাসকদের সাথে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সম্পর্কের উত্তরাধিকার থেকে থাকতে পারে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি হচ্ছে যে যে সব আইন বাংলাদেশে সংসদীয় কর্মকান্ডকে বাধ্যবাধকতার আওতায় রেখেছে তারা সেগুলোর আলোকে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চাইছেন। সংসদে একটি নিছক প্রস্তাব গ্রহণ করে নয়, সরকারের এ বিষয়ে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট যুক্তি প্রদান করা প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন