শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বিআইডব্লিউটিসির নৌযান ইজারা দেয়ার চেষ্টা

উপকূলীয় নৌপথে নৌ নিরাপত্তা বিধি উপেক্ষা করে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকারি নৌ নিরাপত্তা বিধি উপেক্ষা করে এবারো বিআইডব্লিউটিসি তার অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী নৌযান উপক‚লীয় নৌপথে ইজারা দেয়ার পথে হাটছে। বিনা টেন্ডারে একাজটি করার জন্য সংস্থার ভেতরে ও বাইরে নানামুখি তৎপড়তা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অথচ ২০১৫-এর ১৭ সেপ্টেম্বর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ‘ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যন্স-এর আওতায় নিবন্ধিত কোনো নৌযান উপক‚লীয় নৌপথে চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে না’ বলে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বর্তমান নৌ পরিবহন মন্ত্রী ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন। নিরাপত্তা বিধিসহ মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা অমান্য করে চলতি বছরের শুরুতে বিআইডব্লিউটিসি তার অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি বাঙালী’ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ইজারা প্রদান করে।
নৌ পরিবহন অধিদফতরের নির্দেশিকায় ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শান্ত মওসুম হিসবে গন্য করা হলেও নৌযানটি ৩০ মার্চ পর্যন্ত ঐ রুটে চলাচলের জন্য ইজারা দেয়া হয়। ১ এপ্রিল নৌযানটি টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে ফেরত আসে এবং ৪ এপ্রিল ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়। কিন্তু এ দুটি যাত্রাপথেই সাগর উপক‚লে উত্তাল ঢেউ-এর কবলে পড়ে নৌযানটি। অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী ঐ নৌযানটি সাগর উপক‚ল পাড়ি দেয়ার সময় প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়ায় এর প্রায় সব ক্রু অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুধু প্রধান কাপ্তেন ও ইঞ্জিন কর্মকর্তা কোনোভাবে দায়িত্ব পালন করে নৌযানটিকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ঐ নৌযানটি উপক‚লীয় রুটে চলাচল করায় এর তলায় বিপুল পরিমাণ শামুক ও প্রবাল বাসা বাঁধে। ফলে নৌযানটি ঢাকায় ফিরে সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু করার পরে গতি যথেষ্ঠ হ্রাস পায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে এর তলা থেকে শামুক ও প্রবাল অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও এক হাজার টন ওজনের ঐ নৌযানটি উত্তোলনের মত কোনো ডকইয়ার্ড না পাওয়া গেলেও সম্পূর্ণ ঝুঁকি নিয়ে একটি বেসরকারী ডকইয়ার্ডের ¯øীপওয়েতে তোলা হয়। কিন্তু নৌযানটির প্রায় ৬০ভাগ এলাকা ডাঙায় তুলে তালা পরিস্কার ও রং করার মধ্যেই রোপ ওয়্যার ছিড়ে পুরো নৌযানটি আকষ্মিকভাবেই পেছনের দিকে নদীতে নেমে যায়। যদিও এতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু ‘তা অস্বভাবিক ছিল না’ বলে মনে করছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞ মহল।
প্রায় ৫৭কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় বিআইডব্লিউটিসি গত ৩ বছরে দুটি অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী নৌযান নির্মাণ করে। এর মধ্যে ২০১৪-এর মার্চে ‘এমভি বাঙালী’ ও বছরখানেক বাদে এমভি মধুমতি’ যাত্রী পরিবহনে যূক্ত হয়। কিন্তু এসব স্বেতহস্তি যাত্রী পরিবহনের পরিবর্তে বসিয়ে রাখলেই সংস্থার লোকশান কমে। বাণিজ্যিকভাবে কোনোভাবেই এসব নৌযান পরিচালন সম্ভব নয় মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানী ও পরিচালন ব্যায়ের কারনে। ৫৭কোটি টাকা ব্যয় সংগৃহীত এসব নৌযানে গত ৩ বছরে পরিচালন লোকসানের পরিমান দাড়িয়েছে প্রায় ১০কোটি টাকা। কিন্ত এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংস্থাটির দায়িত্বশীল কোনো কোনো কর্মকর্তার সহায়তায় একটি সিন্ডিকেট এসব নৌযান ইজারা নিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পরিচালনের মাধ্যমে মোটা অংকের মুনাফার প্রয়াস চালাচ্ছে। অথচ ‘ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স-আইএসও’ অনুযায়ী কোন অভ্যন্তরীণ নৌযান উপক‚লীয় নৌপথে পরিচালনে পরিপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ দু’টি নৌযানই আইএসও’র আওতায় নিবন্ধিত।
চলতি বছরও আসন্ন শান্ত মওশুমে ‘বে অব বেঙ্গল ট্যুর’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত বছরের চেয়ে ১০ভাগ বাড়তি দরে এমভি বঙালী জাহাজটি টেকনাফ সেন্টমার্টিন রুটে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য ইজারা নিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রীর কাছে আবেদন করে। মন্ত্রী ‘বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের’ জন্য বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যানকে বলেছেন। অপরদিকে নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক গত ৬ জুলাই এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে ‘নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২০১৫-এর ১৭সেপ্টেম্বর সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ‘ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স-আইএসও’র আওতায় নিবন্ধিত কোন অভ্যন্তরীণ নৌযানের উপক‚লীয় এলাকায় চলাচলের সুযোগ নেই’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদফতরের পক্ষ থেকে অনুমোদন প্রদানে অপারগতার কথাও জানান হয়েছে।
কিন্তু এরপরেও বিআইডব্লিউটিসির বানিজ্য পরিদফ্তরের একটি মহল সম্পূর্ণ বিনা দরপত্রে সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী নৌযান উপক‚লীয় রুটে ইজারা দেয়ার আগ্রহের বিষয়টি সুস্পষ্ট। ‘বে অব বেঙ্গল ট্যুর’ গত বছর মাসে ১২লাখ টাকার বিনিময়ে এমভি বাঙালী নৌযানটি ইজারা গ্রহন করে। চলতি বছর ১০%বাড়তি দরে তারা নৌযানটি ইজারা গ্রহনের প্রস্তাব দিলেও এজন্য বিআইডব্লিউটিসি কোন দরপত্র আহবান করেনি। উপরন্তু নৌ পরিবহন মন্ত্রীর কাছে আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পরিচালনের জন্য একই নৌযান ইজারা গ্রহনের আবেদন করলে মন্ত্রী সবগুলো আবেদনপত্রেই ‘বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ’র কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। ওইসব আবেদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আরো বেশী দরে নৌযানটি ইজারা নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানা গেছে। কিন্তু সংস্থার একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সম্পূর্ণ বিনা দরপত্রে সরকারী নৌ নিরাপত্তা বিধি উপক্ষো করেই অভ্যন্তরীণ রুটের নৌযান উপকূলীয় পথে প্রমোদ ভ্রমণে ভাড়া দিতে আগ্রহী বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি বিআইডবিøউটিসি। সরকারী কোনো নৌযান দরপত্র আহবান ছাড়াই এ ধরনের ইজারা প্রদানকে বেআইনিও বলেছেন দায়িত্বশীল মহল।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়নি। এ জন্য কোনো দরপত্রও আহবান করা হয়নি। মন্ত্রনালয়ের চুড়ান্ত অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন কিছু করা হবে না বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন