বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

কাজুও ইশিগুরোর লেখার বৈশিষ্ট্য

বি দে শী সা হি ত্য

আকিব শিকদার | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আধুনিক ব্রিটিশ কথাসাহিত্যের ইতিহাসে ভার্জিনিয়া উল্ফ, জেমস্ জয়েস, লেসলি পল হার্টলি, পল স্কট, জেমস্ ক্যারেল, জন অসবর্ন, মিউরিয়েল স্পার্ক, জন ব্যানভিল, ইয়ান ম্যাকইউয়ান, জুলিয়ান বার্নস, হানিফ কুরেইশি প্রমুখের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসেই ইশিগুরো’র নাম উচ্চারিত হয়ে আসছে। গত কয়েক বছরে না হলেও তিনি নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন- এমন কথাবার্তা প্রায়শ শোনা গেছে। কিন্তু নামের উপর্যুক্ত তালিকাটি বলে দেয়- এই লেখকদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে মূলত চিন্তার গভীরতার তারতম্য, জীবনদর্শনের অভিনবত্ব ও গদ্যশৈলীর বৈশিষ্ট্যে। সাধারণ পাঠকের রুচি ও সাহিত্য সমালোচকের বিবেচনা কদাচিৎ অভিন্ন হয়ে থাকে। তবু কাজুও ইশিগুরো এমন একজন কথাসাহিত্যিক, যিনি একদিকে সাধারণ পাঠকের কাছে আকর্ষণীয়, অন্যদিকে আধুনিক মানুষের জীবনের গভীরে আলোকসম্পাতের জন্য স্মরণীয়।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘আ পেইল ভিউ অব হিলস’। ২০১৭ পর্যন্ত প্রকাশিত তার উপন্যাসের সংখ্যা ৭। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার সপ্তম উপন্যাস ‘দ্য ব্যারিড জায়ান্ট’। ১৯৮৯-এ বুকার প্রাইজ লাভের মধ্য দিয়ে তিনি বড়মাপের ঔপন্যাসিকের বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন স্বীকৃতি লাভ করেছেন।
কথাসাহিত্যিক হিসেবে কাজুও ইশিগুরোর লেখার বৈশিষ্ট্য সর্বদাই আলোচিত হয়, তা হলো স্মৃতিচারণের ভঙ্গিতে ঘটনার বর্ণনা। লেখক নিজে স্মৃতিচারন করেন না। স্মৃতিচারন করেন উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীরা। সেখানেই শেষ নয়। হয়তো নায়ক তার মা বা বান্ধবীর কথা উল্লেখ করেছে এবং সেই সূত্রে মা বা বান্ধবীরও স¥ৃতিচারণের অবতারণা হয়েছে। সেখানে স্মৃৃতিচারণার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ঘটনার প্রেক্ষাপট, চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ও মানুষের জীবন দর্শন।
বয়ঃক্রমে মানুষ একদিন প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে। তখন সে ফিরে তাকায় তার নিজ জীবনের দিকে, যা সে যাপন করেছে এত কাল। দীর্ঘ নিঃশ্বাস বা অশ্রæপাতের সঙ্গে স্মৃৃতি রোমন্থনের মধ্য দিয়ে যাপিত জীবনের নানা স্থর পাঠকের সম্মুখে উন্মোচিত হয়। এই কৌশলটি বারবার ব্যবহার করেছেন কাজুও ইশিগুরো তার গল্প-উপন্যাসে।
কাজুও ইশিগুরোর ‘আ ভিলেজ আফটার ডার্ক’ গল্পের অংশবিশেষের অনুবাদ নি¤œরুপ...
“নারীটি আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল।
‘দেখ দেখি, আমি এ রকমই করতাম একসময়, তোমার চুলে আঙুল বুলিয়ে দিতাম। কী জঘন্য নোংরা। আমি নিশ্চিত যত সব জীবাণুরা তোমার শরীরে গিজগিজ করছে।’ কিন্তু সে আমার চুলে আঙুল চালাতেই থাকল। আমি এতে কোনো রকম কাম অনুভব করতে ব্যর্থ হলাম, যেটা হয়তো সে আশা করছিল। বরং স্পর্শটা আমার কাছে মাতৃস্নেহের মতো লাগল। সত্যি বলতে কী, আমার মনে হলো আমি শেষ পর্যন্ত একটা নিরাপদ আশ্রয়ের গুটিতে পৌঁছেছি, আর আমার আবার ঘুম পেতে লাগল। কিন্তু হঠাৎই সে থেমে গেল আর আমার কপালে জোরে একটা চাটি মারল।
‘আমাদের আর সবার সঙ্গে এসে বসো না কেন তুমি? তোমার ঘুম তো হয়েছে। অনেক কিছু তোমাকে ব্যাখ্যা করতে হবে।’ বলে সে উঠে গেল।”
তিনি গায়ক হতে চেয়েছিলেন। তার ঘরে রাখা গিটারের ঝক্ঝকে উপস্থিতি বলে দেয়, সঙ্গীতে তার আকর্ষণ আজও অনবসিত। অনেক গান রচনা করেছিলেন জীবনের শুরুতে। শেষ পর্যন্ত কথাসাহিত্যেই খুঁজে পেয়েছেন সৃষ্টিশীলতার দৃঢ় শক্তি ও ক্ষমতা। কথা সাহিত্যের জগতেই লাভ করেছেন স্বস্তিদায়ক বিচরণ। এখানেই তার তৃপ্তি ও সিদ্ধি।
সরাসরি রাজনীতিক না হয়েও একজন ঔপন্যাসিক তার লেখায় তুলে ধরেন রাজনীতির কুটিল ও জটিল খেলা । সমকালীন বিভিন্ন বিবেচনায় তিনি আলোড়িত হন, যেমন আলোড়িত হযেছেন সর্বশেষ সিরিয়ার উদ্বাস্তু ইস্যুতে। তীক্ষè ও তীব্র পর্যবেক্ষনে তিনি এই বিষয়ে কলম ধরেছেন। চোখকে অশ্রুসিক্ত করার মতো ছবি প্রত্যক্ষ করছে গোটাবিশ্ব বিভিন্ন গণমাধ্যমের বদৌলতে।
কাজুও ইশিগুরোর একটি বাণী আছে। “আমার কাছে তাৎক্ষণিক যেটি ধরা পড়েছে সেটি হলো– মানুষের সীমাবদ্ধতা এবং জীবনের অপূর্ণতার কারণে এক দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ জীবনযাত্রার সাথে সন্ধি করে বেঁচে থাকা। সম্ভবত এই দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে চলাটাই বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের নিয়তি।”
২০১৭ সালে সাহিত্যে নোবেল জিতেছেন ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো।
সুইডিশ কমিটির পক্ষ থেকে এই ব্রিটিশ লেখকের ব্যাপক প্রশংসা করে বলা হয় ‘এই লেখক নিজের আদর্শ ঠিক রেখে, আবেগপ্রবণ শক্তি দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সংযোগ ঘটিয়েছেন”।
ইশিগুরোর রচিত বিখ্যাত দুটি গান... প্রথমে ক্রিম নিচে ছড়িয়ে পড়ে, এবং তারপর উপরে যেমন সংরক্ষণাগার স্থাপন” অন্যটি ‘তাজা তুষারপাতের উপর রক্ত রাখার মত মনে করো।’
কাজুও ইশিগুরোর উপন্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘দ্য রিমেইন্স অব দ্য ডে’ এবং ‘নেভার লেট মি গো’। এ দুটো উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রও তৈরি করা হয়েছে। সাহিত্যে নোবেল জয়ের পর কাজুও ইশিগুরো তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান ‘আমি অবাক হয়েছি, হতবিহŸল হয়ে পড়েছি। এটা অবশ্যই দারুণ সম্মানের বিষয়, এমন পুরস্কার জয় করা মানে বড় বড় লেখকদের পাশে আমাকে দাঁড় করানো। যারা বিশ্বজুড়ে দামী লেখক, তাদের কাতারে আমাকে রাখা হচ্ছে- এটা অবশ্যই অনেক প্রশংসনীয়’।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন