রাজধানীতে তৈরি হচ্ছে নতুন ৪৩টি পার্কিং পয়েন্ট। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ ও সিটি করপরোরেশন এ উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এসব পার্কিং পয়েন্ট তৈরি হলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় আগামী এক মাসের মধ্যেই ব্যবস্থা করা হবে। যাতে করে আগামী রমজান মাসে নগরবাসীকে অসহনীয় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে না হয়। সেজনই দ্রুত এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রশস্ত সড়কের পাশে খালি জায়গায় যেখানে ভাসমান দোকান-পাট রয়েছে এবং ফ্লাই ওভারের নীচে খালি জায়গাতে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের ভাষায় এগুলোকে পকেট পার্কিং।
ডিএমপি’র ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর সড়কে অপরিকল্পিত পার্কিংয়ের কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। যানজট নিরসন করতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ প্রতিদিনই হিমসিম খাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিদিনই মহানগরবাসীকে সীমাহীন জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ডিএমপির ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিভাগ জানায়, ঢাকা মহানগরীতে যে পরিমাণ সড়ক থাকার কথা- তা নেই। তাই যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তাই ফ্লাইওভারের নিচের পরিত্যক্ত জায়গা, প্রশস্ত সড়ক এবং বিভিন্ন এলাকার পরিত্যক্ত জায়গাকে পার্কিং হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এ জন্য সিটি করপোরেশনও সম্মত হয়েছে। এ নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগসহ অন্যান্য সেবাদান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পার্কিংয়ের কিছু জায়গা করা হয়েছে। তবে এটি আরও পরিকল্পিতভাবে করা হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনের জন্য গাড়ি পার্কিং এর জায়গার প্রয়োজন। যে হারে গাড়ি বেড়েছে সেই হারে পার্কিং বাড়েনি। শুধু ট্রাফিক পুলিশ দিয়েই যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কমপক্ষে আরো ৪৩ টি পয়েন্টে পার্কিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, অপরিকল্পিত পার্কিংয়ের কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। নগরীর অন্তত ৮০ শতাংশ ভবনে নেই কোনও গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। এসব ভবনের তালিকায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব বহুতল ভবনে পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ওইসব এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। সড়কের অর্ধেকই থাকে পার্কিং করা গাড়ির দখলে। আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
ট্রফিক পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানানয়, কেবল মতিঝিল, দিলখুশা, গুলিস্তান এলাকাই নয়, সচিবালয়ের পাশের এলাকা, ধানমন্ডি, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, বনানী, গুলশান, উত্তরাসহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার চিত্রও একই রকম। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিক্ষাঙ্গনের সামনের সড়কগুলো থাকছে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। মামলা ও জরিমানা করেও অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে পারছে না পুলিশ। তাই পুলিশ পার্কিংয়ের জায়গা খুঁজছে। অন্তত ৪৩ থেকে ৪৫টি ছোট পার্কিং স্পট করা হবে। যেখানে অল্প সময়ের জন্য হলেও গাড়ি দাঁড়াতে পারবে।
ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ জানায়, গুলিস্তান এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে বংশাল যেতে সড়কের দু’পাশেই রয়েছে বড় বড় বাণিজ্যিক ভবন। এখানে শতশত টাইলস ও হার্ডওয়্যারের দোকান আছে। তারা গাড়িগুলো সড়কের ওপরেই দাঁড় করিয়ে রাখে। এতে করে রাস্তার অর্ধেক অংশ অব্যবহৃত থাকে। তাছাড়া বাণিজ্যিক ভবনগুলোর স্বীকৃত পার্কিং স্পেসেও গড়ে তোলা হয়েছে দোকান, ব্যবসাসহ নানা স্থাপনা। আবাসিক ভবনগুলোতেও ফ্লোর স্পেস অনুযায়ী পার্কিংয়ের জায়গা রাখা হচ্ছে না। ফলে রাস্তার ওপরে অপরিকল্পিতভাবে গাড়ি পার্কিং করায় নগরীজুড়ে বাড়ছে যানজট। তিনি বলেন, যানজট দূর করতে নতুন করে পার্কিংয়ের জায়গা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে।
ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন অন্তত ৮/১০ লাখ গাড়ি চলাচল করে। এছাড়া রয়েছে রিকশা, হিউম্যান হলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মালবাহী ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়ি। রকমারি যানবাহন চলাচল করায় রাজধানীর যানজট তীব্র হয়। তাই পার্কিং নীতিমালা করলেও তা বাস্তবায়ন করা যায় না। তবে তারা আশাবাদী, যদি মেট্রোরেল প্রকল্প ও ফ্লাইওভার প্রকল্পগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় তা হলে এই সংকট কমে আসবে।
ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) যুগ্ম-কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা কিছু পার্কিংয়ের জায়গা ইতোমধ্যে করেছি। আরও কিছু করার পরিকল্পনা আছে। এগুলোকে আমরা পকেট পার্কিং বলে থাকি। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব পার্কিং জায়গা করা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নিচে পরিত্যক্ত জায়গা, প্রশস্ত সড়কের পাশের জায়গা, বিভিন্ন এলাকার পরিত্যক্ত জায়গায় এসব পার্কিং করা হবে।
গত সপ্তাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় রাজধানীর যানজট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এছাড়া রাজধানীতে যেসব বড় উন্নয়ন প্রজেক্ট চলছে, সেইসব এলাকার সড়ক ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন