সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলামে বিধবা নারীর মর্যাদা ও অধিকার

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

\ চার \
বিধবা নারীর পুনরায় বিবাহের প্রস্তাব আসলে তার মতামত ব্যতীত বিবাহ শুদ্ধ হবে না। ইসলামী আইনে বিবাহের প্রস্তাবে নারী যদি চুপ থাকে, তাহলে তার সম্মতি রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বিধবা নারীর পুনরায় বিবাহের প্রস্তাব আসলে তার মৌখিক সম্মতি প্রয়োজন। কেননা অনেক ক্ষেত্রে তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ও তার সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দেওয়া হয়ে থাকে। তাই বিধবা নারীর অধিকার রয়েছে মৌখিকভাবে তার মতামত প্রকাশ করার। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা রয়েছে, ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী স. বলেছেন : পূর্ব বিবাহিতা তার (নিজের বিবাহের ব্যাপারে সিধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে) নিজের ব্যাপারে অভিভাবকের তুলনায় অধিক হক্বদার। কুমারীকে তার থেকে তার সম্মতি নিতে হবে, তার নিরবতাই তা সম্মতি। বিধবা নারীকে জোর জবরদস্তি করে বিবাহ দিলে, সে বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার তার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, খানসা বিনতে খিযাম রা. থেকে বর্নিত। তার পিতা তাকে বিবাহ দিলেন তিনি ছিলেন সায়্যিব (বিবাহিত নারী), তিনি তা অপছন্দ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ স. এ নিকট গেলেন তিনি এ বিবাহ ভেঙ্গে দিলেন।
ইসলামী আইনে বিধবা নারীর কর্তব্য ঃ ইসলামী আইনে প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পিত হয়, আবার স্বামীর মৃত্যু ঘঠলেও তার বিধবা স্ত্রীর উপর বিভিন্ন দায়িত্বও কর্তব্য চলে আসে। আর এ কর্তব্য পালনের মাদ্যমে সে তার মৃত স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশ করার পাশাপাশি তার নিজের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
ইদ্দত পালন ঃ ইসলাম বিধবাদের দিয়েছে নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা। জন্মের মাধ্যমে প্রত্যেকের মৃত্যু অবধাতি হয়ে যায়। আর কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরন করলে সে স্বাভাবিকভাবেই অসহায়ত্ব বোধ করে। ইসলাম তার এই অসহায়ত্ব ও নিরাপত্তাহীনতা দূর করার জন্য কিছু বিধান দিয়েছে। যার মাধ্যমে সে নিজেকে পবিত্র করতে পারে ও নিজের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর তা হলো বিধবার ইদ্দত পালন করা। অবস্থার প্রেক্ষিতে ইদ্দতের সময়কাল ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে তালাক দেওয়া হলে, তাহলে তার কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না। স্ত্রীর সাথে মিলনের পর তালাক প্রদান করলে, তাদের তিনটি ঋতুস্রাবপূর্ণ করা মাধ্যমে ইদ্দত পূর্ণ করতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্কা কিংবা বয়োবৃদ্ধা নারীর তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে। গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। বিধবা নারীর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত পালনের মাধ্যমে বিধবা নিজেকে পবিত্র করার পাশাপাশি পরবর্তী বংশধরের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত করে থাকে। কেননা কোন নারী বিধবা তালাক প্রাপ্ত হলে তার গর্ভে কোন সন্তান আছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। ইসলামের বিধানে সন্তানের প্রকৃত পিতাই পিতৃত্বের দাবিদার। সন্তানের পিতৃত্ব নিশ্চিত হওয়ার জন্য ও তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইদ্দাতের মাধ্যমে বিধবাকে নিদিষ্ট কিছু বিধি-বিধান পালনে আদেশ দেওয়া হয়েছে। ইদ্দত পালনের মাধ্যমে বিধবা নিজেকে পবিত্র ও সমাজকে করতে পারে।
শোক প্রকাশ করা ঃ ইসলাম একটি স্বভাবজাত জীবন বিধান। এখানে খুশির সময় আনন্দ, আবার দুঃখের সময় শোক প্রকাশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবার এ আনন্দ যেন বল্গাহীন না হয় এবং দুঃখও যেন চিরসাথী না হয় তার ও বিধি বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। তাই স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুর জন্য তিন দিনের বেশী শোক প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী পরবর্তী চার মাস দশ দিন নিজেকে পবিত্র করার জন্য কিছু বিধি নিষেধ পালনের মাধ্যমে এ শোক পালন করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরন করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করিয়ে রাখা, তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতিসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- উম্মে হাবীবা রা রাসূলুল্লাহ স. থেকে বর্ননা করেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার জন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। তবে স্বামীর মৃত্যুতে চারমাস দশদিন শোক পালন করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন