চট্টগ্রামে গণধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় গ্রেফতার ৬
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ‘আমাকে মেরো না, মায়ের কাছে যেতে দাও’। সাতজন মিলে দলবেঁধে ধর্ষণে রক্তাক্ত শিশুটির এমন আকুতি তাদের মন গলাতে পারেনি। নরপশুরা শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে ফুলের মত ফুটফুটে শিশু ফাতেমা আক্তার মীমকে (৯)। এরপর লাশ ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে রেখে পালিয়ে যায় তারা। নির্মম এ হত্যাকান্ডের চারদিনের মাথায় গ্রেফতারকৃত ছয় আসামী মীমকে ধর্ষণ করে হত্যার দায় স্বীকার করে। তারা জানিয়েছে, ঘটনাটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। সাত আসামীর একজন মীমকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তার উপর চলে পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন। শিশুটি তাদের সবাইকে চিনে ফেলায় হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
রোববার রাতে নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনীর আই বøকে আয়েশা মমতাজ তাহমহল ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে মীমের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকার ফাতেমা তুজ জোহরা হেফজুল কোরআন মহিলা মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী শিশু মীম। লেকসিটি সী-ওয়ার্ল্ড এলাকার রাজা কাশেমের টিনশেডের ভাড়াঘরে বাবা জামাল হোসেন ও মা বিবি রাবেয়া বেগমের সাথে থাকতো সে। মাদরাসা থেকে এসে প্রতিদিনের মতো বিকেলে খেলতে বের হয় মীম। রাত হয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় তাকে খুঁজতে বের হন উদ্বিগ্ন বাবা-মা। পরে ওই ভবনে পাওয়া যায় তার নিথর দেহ।
লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ ওই ভবনের কেয়ারটেকার মোঃ মনিরুল ইসলাম মনুকে (৪৯) গ্রেফতার করে। পুলিশ তাকে সন্দেহ করলেও সে পুরো ঘটনা এড়িয়ে যায়। পরে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনা স্বীকার করে সে। পুলিশ বলছে, নিজের কন্যার বয়সী ওই নিষ্পাপ শিশুকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনার মাস্টারমাইন্ড এ মনু। তার দেয়া তথ্যমতে, মহানগরী ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে পাকড়াও করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অপর পাঁচজন হলো হাছিবুল ইসলাম লিটন (২৬), মোঃ বেলাল হোসেন বিজয় (১৮), মোঃ রবিউল ইসলাম রুবেল (১৬), মোঃ আকসান মিয়া ওরফে হাসান (১৮) ও মোঃ সুজন (২০)। অপর একজন পলাতক রয়েছেন।
এ বিষয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোঃ ফারুক-উল-হক বলেন, পূর্ব পরিচয়ের জের ধরে হাছিবুল ইসলাম লিটন ওইদিন কর্ণেল হাট থেকে মীমকে ফুসলিয়ে আয়েশা মমতাজ মহলে তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে ভবনের তত্ত¡াবধায়ক মনু, গ্রেফতার আরও চারজনসহ মোট সাতজন মিলে মীমকে ধর্ষণ করে ও পরে হত্যা করে লাশ দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির পাশে ফেলে রেখে যায়। ঘটনার পর আমরা প্রথমে একজনের দ্বারা ধর্ষণ হয়েছে বলে অনুমান করলেও পরে তদন্তে ‘গণ ধর্ষণের’ বিষয়টি প্রকাশ পায়।
তিনি আরও বলেন, মীমের মা জানিয়েছে গ্রেফতার বিজয়ের মাকে তিনি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সে টাকা বিজয়ের মা পরিশোধ করেনি। এছাড়াও কয়েকমাস আগেও বিজয় মীমকে ‘ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট’ করার চেষ্টা করেছিল বলে রাবেয়া অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত পাঁচজন বখাটে ও উঠতি সন্ত্রাসী। তাদের সাথে ওই ভবনের কেয়ারটেকারের যোগসাজশ ছিল। তারা সবাই মিলে পরিকল্পিতভাবে ওই শিশুটিকে তুলে এনে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে। অভিযোগের পর পুলিশ বিজয়কে আটক করে এবং জিজজ্ঞাসাবাদে সে মীমকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যার কথা জানায়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে আরও চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আয়েশা মমতাজ মহল নামে যে ভবনটি থেকে পুলিশ মিমের লাশ উদ্ধার করে সে ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে মীমকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে। ওই ভবন মালিক ঢাকায় থাকেন এবং তত্ত¡াবধায়ক মনু ভবনটি দেখাশোনা করত। পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক বলেন, ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা ওইদিন ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিল। আর বিকল্প চাবি ছিল মনুর কাছে। সে চাবি দিয়ে ওই বাসাটি খুলে মীমকে ধর্ষণ করে গ্রেফতারকৃতরা। ওসি জানান, ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মনু। ওই ফ্ল্যাটটি খালি থাকবে এমন তথ্য অন্যদের জানায় মনু। আর এ সুযোগে তারা মীমকে তুলে আনার পরিকল্পনা করে। বিকেলে মীমের পিছু নেয় লিটন। এরপর তাকে ওই বাসায় নিয়ে আসা হয়। তাদের সাথে আরও একজন ছিল। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি জানান, ঘটনার সাথে জড়িতদের মধ্যে মধ্যে সুজন রঙ মিস্ত্রি ও অন্যরা এলাকার উঠতি সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রীদের উত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। আসামীদের কাছে মীমকে পাশবিক নির্যাতনের পর নির্মমভাবে হত্যার বর্ণনা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মীমের বাবা-মা। তারা এ নরপশুদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন